রাজধানীতে আশরাফুল হককে (৪২) হত্যার পর লাশ ২৬ টুকরা করে হাইকোর্ট এলাকায় ফেলার কারণ হিসেবে দুই রকম তথ্য দিয়েছে র্যাব ও পুলিশ। র্যাবের দাবি, প্রেমের ফাঁদে ফেলে ১০ লাখ টাকা আদায়ের পরিকল্পনা থেকে তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। তবে ডিবি পুলিশ বলছে, এই হত্যার নেপথ্যে রয়েছে ত্রিভুজ প্রেম।
কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে গতকাল শনিবার র্যাব-৩-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফায়েজুল আরেফীন এবং পরে মিন্টো রোডে ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম পৃথক সংবাদ সম্মেলনে এই হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে পাওয়া তথ্য তুলে ধরেন। এই মামলার প্রধান আসামি ফরেজুল ইসলাম জরেজকে (৩৯) গত শুক্রবার রাতে ঢাকা মহানগর ডিবি পুলিশ কুমিল্লার দাউদকান্দি থেকে এবং জরেজের বান্ধবী শামীমা আক্তারকে (৩৩) লাকসাম থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
হাইকোর্ট এলাকায় জাতীয় ঈদগাহের ফটকের কাছে ফুটপাতে নীল ড্রাম থেকে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রংপুরের বদরগঞ্জের কাঁচামাল ব্যবসায়ী আশরাফুলের ২৬ টুকরা মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে সিআইডি তাঁর পরিচয় শনাক্ত করে। এ ঘটনায় শুক্রবার তাঁর ছোট বোন আনজিলা বাদী হয়ে আশরাফুলের বন্ধু জরেজকে প্রধান আসামি করে শাহবাগ থানায় মামলা করেন।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাব দাবি করে, শামীমা ও জরেজের মধ্যে এক বছরের বেশি সময় ধরে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। জরেজের পরিকল্পনা ছিল, শামীমাকে ব্যবহার করে আশরাফুলকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে ১০ লাখ টাকা আদায় করা। পরিকল্পনা অনুযায়ী জরেজ ১১ নভেম্বর আশরাফুলকে নিয়ে রংপুর থেকে ঢাকায় আসেন। ১২ নভেম্বর শনির আখড়া এলাকায় একটি বাসা ভাড়া নেন। শামীমাও তাঁদের সঙ্গে ছিলেন। সেখানে সেদিন দুপুরে শামীমা আশরাফুলকে শরবতের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে অচেতন করেন। পরে আশরাফুল ও শামীমার আপত্তিকর ভিডিও ধারণ করা হয়, যা দেখিয়ে তাঁর কাছ থেকে টাকা আদায়ের পরিকল্পনা ছিল। ভিডিওটি শামীমার মোবাইল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।
র্যাব আরও বলেছে, জরেজ পরে অচেতন আশরাফুলের হাত বেঁধে মুখে স্কচ টেপ লাগান এবং হাতুড়ি দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করেন। উপর্যুপরি আঘাত ও শ্বাসরোধ হয়ে আশরাফুল মারা যান। পরদিন সকালে মরদেহ গুম করতে বাজার থেকে দুটি প্লাস্টিকের ড্রাম আনা হয়। পরে মরদেহ টুকরা করে ড্রামে ভরে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে হাইকোর্ট এলাকায় ফেলে রেখে যান তাঁরা। হত্যায় ব্যবহৃত দড়ি, স্কচ টেপ ও আশরাফুলের রক্তমাখা পোশাক উদ্ধার করা হয়েছে।
এদিকে সংবাদ সম্মেলনে ডিবি পুলিশ বলছে, পুরো ঘটনাই ত্রিভুজ প্রেমের জটিলতার পরিণতি। ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার শফিকুল ইসলামের বক্তব্য অনুযায়ী, মালয়েশিয়াপ্রবাসী জরেজের সঙ্গে তিন বছরের বেশি আগে একটি অ্যাপের মাধ্যমে শামীমার পরিচয় হয়। পরে তাঁদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। দেড় মাস আগে জরেজ দেশে ফেরার পরও সেই যোগাযোগ অব্যাহত ছিল। বিষয়টি জানতে পেরে জরেজের স্ত্রী তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু আশরাফুলের সাহায্য চান এবং শামীমার নম্বর দেন। পরে আশরাফুল নিজেই শামীমার সঙ্গে প্রেমে জড়িয়ে পড়েন এবং তাঁরা ভিডিও কলে নিয়মিত যোগাযোগ করতেন।
ডিবি জানায়, শামীমা ১৪ লাখ টাকার বিনিময়ে জরেজকে জাপানে পাঠানোর প্রস্তাব দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে জরেজ ও আশরাফুল ১১ নভেম্বর রংপুর থেকে ঢাকায় আসেন এবং শনির আখড়ায় শামীমাকে সঙ্গে নিয়ে বাসা ভাড়া নেন। সেখানে জরেজ বুঝতে পারেন, শামীমা ও আশরাফুলের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়েছে। এ নিয়ে তর্কাতর্কির একপর্যায়ে শামীমা চিৎকার করলে জরেজ আশরাফুলের হাত বেঁধে হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করেন। এরপর মুখের ভেতর ওড়না ঢুকিয়ে স্কচ টেপ দিয়ে পেঁচিয়ে দেন। কিছুক্ষণ পরই আশরাফুল মারা যান। পরে মরদেহ টুকরা করে প্লাস্টিকের ড্রামে ভরে হাইকোর্ট এলাকায় ফেলে দেওয়া হয়।
গ্রেপ্তার দুজনের জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে হত্যার কারণ সম্পর্কে দুই সংস্থার পৃথক বক্তব্যে হত্যার প্রকৃত কারণ নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। অবশ্য পুলিশ ও র্যাব বলছে, গ্রেপ্তার দুজনকে আরও জিজ্ঞাসাবাদ, প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণ এবং ফরেনসিক পরীক্ষার পর হত্যার প্রকৃত উদ্দেশ্য পরিষ্কার হবে।
সূত্র : আজকের পত্রিকা