সংশোধিত শ্রম আইনকে তিনটি ইস্যুতে ‘অযৌক্তিক’ এবং ‘শিল্পের বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্যহীন’ উল্লেখ করে একযোগে প্রত্যাখ্যান করেছে তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতের মালিকদের তিন প্রধান সংগঠন বিজিএমইএ, বিকেএমইএ ও বিটিএমএ।
তাদের অভিযোগ, টিসিসি ও ওয়ার্কিং কমিটির দীর্ঘ আলোচনায় যে সমঝোতা গড়ে উঠেছিল, সরকার সদ্য জারি করা বাংলাদেশ শ্রম আইন (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫-এ সেটা মানেনি। বরং একতরফাভাবে এমন কিছু বিধান যুক্ত করেছে, যা শিল্পে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে পারে। মালিকপক্ষের মতে, এসব পরিবর্তন শ্রমিক-মালিক উভয়ের স্বার্থকেই শেষ পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
মঙ্গলবার লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগ শ্রম আইন (সংশোধন) অধ্যাদেশ জারি করার পরপরই টেক্সটাইল ও অ্যাপারেল খাতের তিন সংগঠনের মালিক-প্রতিনিধিরা রাজধানীর গুলশানে বিটিএমএ ভবনে জরুরি বৈঠকে বসেন। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু, বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম এবং বিটিএমএ সভাপতি শওকত আজিজ রাসেলসহ অনেকে। সভায় বস্ত্র খাতের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আলোচনা হয়।
বৈঠকের মূল অ্যাজেন্ডা ছিল স্পিনিং সেক্টরের চলমান সংকট; তবে আলোচনার বেশির ভাগ সময়জুড়ে প্রাধান্য পায় সদ্য জারি করা শ্রম আইন (সংশোধন) অধ্যাদেশ। পর্যালোচনা ও আলোচনার পর তিন সংগঠনই সর্বসম্মতভাবে অধ্যাদেশটি প্রত্যাখ্যানের সিদ্ধান্ত নেয়। পরে বিটিএমএ সেক্রেটারি জেনারেল ব্রিগে. জেনা. মো. জাকির হোসেন, এনডিসি, পিএসসি (অব.) স্বাক্ষরিত এক যৌথ আনুষ্ঠানিক বিবৃতির মাধ্যমে সিদ্ধান্তটি জানায়।
বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ১২৭টি ধারার মধ্যে ১২৪টিতে ত্রিপক্ষীয় কমিটির বৈঠকে ঐকমত্য হয়েছিল। ‘আমাদের আপত্তি ছিল কেবল তিনটিতে। সরকার আশ্বাস দিয়েছিল এগুলো ঠিক করা হবে; কিন্তু শেষ পর্যন্ত নিজেদের মতো করে আইন পাস করেছে। তিনি আশা করেন, সরকার বিষয়গুলো নিয়ে আবার আলোচনায় বসবে।
বিকেএমইএ সভাপতি অভিযোগ করেন, বিদেশি পরামর্শে এমন কিছু প্রস্তাব যুক্ত হয়েছে, যা গার্মেন্টস খাতে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে। তাঁর ভাষায়, ‘ত্রিপক্ষীয় কমিটির সিদ্ধান্তও মানা হয়নি। এতে শ্রমিকের স্বার্থও রক্ষা পাবে না।’ তিনি সংশোধনপ্রক্রিয়াকে খাতবিরোধী ‘চক্রান্ত’ উল্লেখ করে অধ্যাদেশটি প্রত্যাখ্যানের কথা জানান।
এর আগে গত ২৩ অক্টোবর সংশোধন নীতিগতভাবে অনুমোদনের পর মালিকপক্ষ সংবাদ সম্মেলন করে এই তিন বিষয়ে আপত্তি জানায় এবং প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ না পাওয়ার অভিযোগ তোলে।
প্রথম আপত্তি ট্রেড ইউনিয়ন গঠনে শ্রমিকসংখ্যা পুনর্নির্ধারণ। ত্রিপক্ষীয় আলোচনায় ৫০-৫০০ শ্রমিকের কারখানায় ৫০ জনের সমর্থনে ইউনিয়ন গঠনের প্রস্তাব থাকলেও উপদেষ্টা পরিষদ সেটি পরিবর্তন করে ২০-৩০০ শ্রমিক নির্ধারণ করেছে। মালিকদের দাবি, মাত্র ২০ জন দিয়ে ইউনিয়ন হলে বহিরাগতদের প্রভাব বাড়বে, শিল্পে অন্তর্দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হবে এবং বিনিয়োগকারীরা নিরুৎসাহিত হবেন।
দ্বিতীয় আপত্তি ভবিষ্যৎ তহবিল ও সর্বজনীন পেনশন প্রগতি—উভয় স্কিমে শ্রমিকের একযোগে অংশ নেওয়ার সুযোগ। মালিকপক্ষের মতে, এতে দুটি পৃথক আর্থিক ব্যবস্থা সমান্তরালে পরিচালনা করতে হবে, যা প্রশাসনিক জটিলতা ও ব্যয় বাড়াবে।
তৃতীয় আপত্তি শ্রমিকের সংজ্ঞায় ‘কর্মচারী বা কর্মকর্তা’ যুক্ত করা। তাঁদের দাবি, এতে শ্রমিক ও প্রশাসনিক স্তরে বিভাজন অস্পষ্ট হবে, সিদ্ধান্ত গ্রহণে জটিলতা বাড়বে এবং প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় সমস্যা দেখা দিতে পারে।
সূত্র : আজকের পত্রিকা