ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইস্যুতে দিল্লি-ঢাকা সম্পর্কে টানাপোড়েন মধ্যে আবার নতুন করে ভারবাল নোটে চিঠি চালাচালি চলছে। শেখ হাসিনা ইস্যুতে ভারত চুপ থাকলেও এবার প্রত্যর্পনের চিঠি পেয়েছে বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছে ভারত।
জুলাই অভ্যুত্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ড পাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফেরত চেয়ে বাংলাদেশ যে চিঠি পাঠিয়েছে, তা পাওয়ার কথা স্বীকার করেছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর। বুধবার দিল্লিতে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, আমরা অনুরোধটি পেয়েছি এবং তা পর্যালোচনা করা হচ্ছে।’
ভারত এর জবাব দেবে কি না, তা স্পষ্ট না করে তিনি বলেন, ‘চলমান বিচারিক ও অভ্যন্তরীণ আইনি প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে বাংলাদেশসহ দেশটির মানুষের শান্তি, গণতন্ত্র, অন্তর্ভুক্তি ও স্থিতিশীলতার সর্বোত্তম স্বার্থে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এ বিষয়ে সব স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে আমরা গঠনমূলক যোগাযোগ চালিয়ে যাব।’
এদিকে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন দিল্লিতে পাঠানো চিঠির উত্তর পেতে অপেক্ষায় থাকার কথা বলেছেন।
বুধবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘নোট ভারবাল (কূটনৈতিকপত্র) আমাদের মিশনের মাধ্যমে ওদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দেওয়া হয়েছে। কোনো উত্তর আসে নাই। এখন কোনো চিঠির উত্তর আশাও করি না।”
উত্তর কেন আশা করেন না–এমন প্রশ্নে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘এত তাড়াতাড়ি উত্তরৃ আমি তো আগের চিঠিরই উত্তর পাই নাই এখনও। কাজেই এটা এক সপ্তাহের মধ্যে উত্তর দিয়ে দিবে, এটা আমি প্রত্যাশা করি না। তবে আমরা আশা করি যে, এটার উত্তর আমরা পাব।’
জুলাই অভ্যুত্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধের ‘নির্দেশ ও ইন্ধনদাতা’ হিসাবে অভিযুক্ত করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে ১৭ নভেম্বর মৃত্যুদণ্ড দেয় ঢাকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। আর রাজসাক্ষী হয়ে ‘দোষ স্বীকার’ এবং বিচারকাজে ‘সহযোগিতা’ করায় পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে দেওয়া হয় পাঁচ বছরের কারাদণ্ড।
আসামি প্রত্যর্পণ চুক্তির আওতায় শেখ হাসিনাকে ফেরত দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে রায়ের চারদিন পর শুক্রবার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠায় বাংলাদেশ।
ঢাকার পাঠানো চিঠির বিষয়ে গত মাসে এক প্রশ্নে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি বলেছিলেন, আইনি বিষয়গুলো দিল্লি পর্যালোচনা করে দেখছে।
নতুন চিঠিতে কী লেখা হয়েছে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ বুধবার বলেন, ‘আমরা বলেছি যে, যেহেতু তাকে বিচারে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে, কাজেই তাকে যেন ফেরত দেওয়া হয়।’
উত্তর পাওয়ার আশা না থাকলেও নিয়মরক্ষার জন্য এই চিঠি দেওয়া হয়েছে কি-না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘পাব না উত্তর এটা আমি জানি না। কিন্তু আমি এক সপ্তাহের মধ্যে উত্তর এসে যাবে, এটা আমি প্রত্যাশা করছি না।’
ফেব্রুয়ারিতে ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনে প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে কোনো পর্যবেক্ষক আসতে চাইলে তাদেরকে সুযোগ দেওয়া হবে কি-না, তা পররাষ্ট্র উপদেষ্টার কাছে জানতে চান এক সাংবাদিক।
উত্তরে তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘এটা পুরোপুরি নির্বাচন কমিশনের বিষয়। এখানে আমাদের কোনো ভূমিকা নাই। এমনকি আমরা যারা আসবে তাদেরকে কোনো সহায়তা করতেও যাব না যদি না নির্বাচন কমিশন আমাদের কাছে চায়।’