মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য, সংরক্ষণের অভাব ও বাজারে নজরদারির কারণে পেঁয়াজে দামে ফের অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে। দুই দিনের ব্যবধানে খুচরা পর্যায় কেজিতে দাম বেড়েছে ৩৫ টাকা। এতে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ ক্রেতারা। সাধারণ মানুষের অভিযোগ, প্রশাসনের নজরদারির অভাবে বাজারে অস্থিরতা তৈরি করছে একটি চক্র। এদিকে, ব্যবসায়ীরা জানান, হঠাৎ করে উৎপাদন এলাকাগুলো থেকে পেঁয়াজ আসা কমে গেছে। আমদানি বন্ধের খবরে মজুতদার ও কৃষকরা ধীরগতিতে পেঁয়াজ ছাড়ছেন। এছাড়া নতুন পেঁয়াজ না আসার কারণে পাইকারি ও খুচরা বাজারে এর প্রভাব পড়েছে।
অন্যদিকে, পেঁয়াজের দাম বাড়ার কারণগুলো নিরুপণ করেছে ট্যারিফ কমিশন। উৎপাদন থেকে ভোক্তা পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য এবং পেঁয়াজ সংরক্ষণের অভাবের কারণে দাম বাড়ে। এক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের অভিযোগ উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। তাছাড়া পেঁয়াজের চাহিদা ও ঘাটতির দিকটিও নিরুপণ করা জরুরি বলে মনে করেন বিষেশজ্ঞরা।
রাজধানীর বাজারে এক কেজি পেঁয়াজের দাম ১৬০ টাকা ছাড়িয়ে গেছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে দাম বেড়েছে ২০ থেকে ৩০ টাকা। শনিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, মোহাম্মদপুর টাউন হল, কৃষি মার্কেট, উত্তরার হজ ক্যাম্প বিভিন্ন বাজার ঘুরে পেঁয়াজের বাড়তি দামের খবর পাওয়া গেছে।
কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা গেছে, পাবনার ভালো মানের পুরোনো পেঁয়াজ এক পাল্লা বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ টাকায়। খুচরা কিনলে প্রতি কেজির দাম পড়ছে ১৬০ টাকা। কারওয়ান বাজারে দু-একটি দোকানে আগাম পেঁয়াজ এসেছে। প্রতি কেজির দাম ১২০ থেকে ১৩০ টাকা।
কারওয়ান বাজারের পেঁয়াজ এক বিক্রেতা জানান, ডিসেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের পর নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসতে শুরু করবে। তখন পেঁয়াজের দাম পড়ে যাবে। এছাড়া এবার ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি হয়নি। তাই বাজারে পেঁয়াজের দাম বেশি।
মোহাম্মদপুর টাউন হল, কৃষি মার্কেট ও উত্তরার হজ ক্যাম্প বাজারে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৫০-১৬০ টাকায়। তবে বিক্রেতারা জানান, তাদের এক কেজি পেঁয়াজ পাইকারি কেনা পড়ছে ১৪০-১৪৮ টাকা।
দেশে পেঁয়াজের অন্যতম বড় পাইকারি বিক্রির স্থান পাবনা জেলার সাঁথিয়া উপজেলার বোয়ালমারী বাজার। এই বাজারের পেঁয়াজের আড়তদাররা জানান, সরবরাহের সংকটের কারণে গত বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার পেঁয়াজের দাম হঠাৎ বেড়ে যায়।
শুক্রবার বোয়ালমারী বাজারে পাইকারিতে প্রতি মণ পেঁয়াজ ৪ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ৪ হাজার ৬০০ টাকায় (প্রতি কেজি ১১২-১১৫ টাকা) বিক্রি হয়েছে। অথচ বুধবার ওই বাজারে পেঁয়াজের মণ ছিল ৩ হাজার ৪০০ টাকা থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকা।
এদিকে ১০-১৫ দিন পর থেকে বাজারে মুড়িকাটা পেঁয়াজ আসতে শুরু করবে। কিন্তু গত বৃহস্পতি ও শুক্রবার দাম বেশি দেখে অনেক কৃষক জমিতে থাকা অপুষ্ট মুড়িকাটা পেঁয়াজ তুলে বাজারে এনেছেন। এসব পেঁয়াজ ১২০-১৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
প্রতিবছর কেন নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে পেঁয়াজের দাম বাড়ে, তা নিয়ে পর্যালোচনা তৈরি করেছে ট্যারিফ কমিশন। সংস্থাটির মতে, চার কারণে প্রতিবছর পেঁয়াজের দাম বাড়ে। প্রথমত, উৎপাদন থেকে ভোক্তা পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য; দ্বিতীয়ত, পেঁয়াজ সংরক্ষণের অভাব; তৃতীয়ত ও মৌসুমের শেষ পর্যায়।
পেঁয়াজ সংরক্ষণের মৌসুম হলো জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত। সরকারি সংরক্ষণাগার না থাকায় কৃষকেরা নিজেরাই পেঁয়াজ সংরক্ষণ করে থাকেন। পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধির কারণ হিসেবে সরকারিভাবে সংরক্ষণের অভাবকে চিহ্নিত করেছে ট্যারিফ কমিশন। নভেম্বর ও ডিসেম্বর হলো পেঁয়াজের মৌসুমের শেষ পর্যায়। এ সময়ে কৃষকের ঘরে মজুত কম থাকে। সে কারণেও পেঁয়াজের দাম বেড়ে যায়।
এছাড়া কৃষকের কাছ থেকে বাজারে আসা পর্যন্ত পেঁয়াজের একাধিকবার হাত বদল হয়। প্রতি ধাপে মুনাফা করেন মধ্যস্বত্বভোগীরা। প্রতিটি ধাপেই মধ্যস্বত্বভোগীরা তাঁদের নির্ধারিত মুনাফায় পেঁয়াজ বিক্রি করে থাকেন। মধ্যস্বত্বভোগীদের অতি মুনাফার কারণেও মৌসুমে পেঁয়াজের দাম বাড়ে।