ভারত সফরে পুতিন : অস্ত্র-তেল বিক্রিসহ পারস্পরিক সহযোগিতা জোরদার

: বিশ্বপরিস্থিতি ডেস্ক
প্রকাশ: ১ দিন আগে

২০৩০ সালের মধ্যে রাশিয়া ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য ১০০ বিলিয়ন ডলারে বাড়াতে চায়, ভারতও রাশিয়ার তেল ক্রয় দ্রুত বৃদ্ধি করাসহস্বাধীন কৌশলগত ভারসাম্যের নীতিতে জোর দিয়ে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে চায়। এমন ইস্যুতেই রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন দুই দিনের সফরে বৃহস্পতিবার ভারতে পৌঁছেছেন।

বিমানবন্দরে পুতিনকে স্বাগত জানাতে মোদির উপস্থিতি একটি বিরল পদক্ষেপ। কারণ সফররত বিদেশি নেতাদের সাধারণত সিনিয়র ভারতীয় মন্ত্রীরা অভ্যর্থনা জানান।

এরপর পুতিন বিমান থেকে নেমে আসার সঙ্গে সঙ্গে লালগালিচায় দাঁড়িয়ে দুই নেতা একে অপরকে আলিঙ্গন করেন। শুধু তাই নয়, নিজের গাড়িতেই পুতিনকে সঙ্গে নিয়ে রওনা দেন প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনের দিকে। এই প্রটোকল ভাঙা কূটনীতিকে তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে বিশ্লেষকরা।

দুই নেতা ভারত-রাশিয়া শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেবেন। রাশিয়ার তেল কেনা বন্ধ করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ভারতের ওপর চাপ বাড়ানোর কয়েক মাস পর পুতিনের এই সফরে দুদেশের মধ্যে বেশ কয়েকটি চুক্তি সই হবে বলে জানিয়েছে বিবিসি। পুতিনের এই ৩০ ঘণ্টার সফরটি দুই নেতার বিশেষ বন্ধুত্ব ছাপিয়ে বাণিজ্য, প্রতিরক্ষা ও ভূরাজনৈতিক বিষয়গুলো বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। কৌশলগত অংশীদারিত্ব বাড়ানোয় গুরুত্ব দিচ্ছে দুপক্ষ।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পুতিন নয়াদিল্লিতে অবতরণ করেন এবং প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে একান্ত নৈশভোজে অংশ নেন।

শুক্রবার তিনি রাষ্ট্রপতি ভবনে গার্ড অব অনার গ্রহণ করেন। পরে ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। মহাত্মা গান্ধীর স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধা জানাতে রাজঘাটে যান। পরে হায়দরাবাদ হাউসে দুই নেতা বার্ষিক ভারত-রাশিয়া শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেবেন।

এর আগে ক্রেমলিন এক বিবৃতিতে জানায়, পুতিনের ভারত সফর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যা রাশিয়া-ভারতের কৌশলগত অংশীদারিত্ব আরও শক্তিশালী করার সুযোগ করে দিয়েছে।

বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদার :

ভারত-রাশিয়া দুই শক্তিশালী মিত্র হলেও দুদেশের মধ্যে সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক সম্পর্কের গতি মিশ্রপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। ২০২৫ সালের মার্চ মাসের শেষে দুদেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ৬৮ দশমিক ৭২ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, যা ২০২০ সালে মাত্র ৮ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার ছিল। এর মূল কারণ ছিল, ভারত রাশিয়ার তেল ক্রয় দ্রুত বৃদ্ধি করা। ফলে বাণিজ্য ভারসাম্য রক্ষা করতে চাইবেন মোদি। ওয়াশিংটনের নিষেধাজ্ঞা এড়াতে ভারতীয় সংস্থাগুলো ইতোমধ্যেই রাশিয়া থেকে তেল ক্রয় কমিয়ে দিচ্ছে। তাই পুতিন বাণিজ্য বৃদ্ধির বিষয়টিতে বেশি গুরুত্ব দেবেন।

ভারত বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অপরিশোধিত তেল ভোক্তা এবং তা রাশিয়া থেকেই কেনে। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পরে এই ক্রয় বাড়ে। এর আগে ভারত মাত্র ২ দশমিক ৫ শতাংশ তেল রাশিয়া থেকে আমদানি করত। পরে তা ৩৫ শতাংশে উন্নীত হয়। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের চাপে তা আবারও নিম্নমুখী। কারণ ওয়াশিংটন ভারতের প্রতি খুশি না। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের যুক্তি, রাশিয়ার তেল কিনে ভারত যুদ্ধের তহবিল জোগাতে সহায়তা করছে।

স্বাধীন কৌশলগত নীতি মোদির :

বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে মোদি স্বাধীন কৌশলগত ভারসাম্যের নীতিতে জোর দিয়ে আসছেন। ইউক্রেনের যুদ্ধে রাশিয়ার ব্যাপারে নীরবতা অবলম্বনের জন্য পশ্চিমা চাপে ছিলেন মোদি। তখন তিনি বলেছিলেন, সংঘাত সমাধানের একমাত্র উপায় সংলাপ। এটিই ছিল ভারতের সেই স্বাধীন অবস্থান। মোদি একদিকে পশ্চিমাদের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখেছেন, পাশাপাশি মাস্কোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি করেছেন। এখানে মোদির ভূরাজনৈতিক কৌশলও দৃশ্যমান।

সামরিক সরঞ্জাম বিক্রির কৌশলগত তৎপরতা :

পুতিনের এই সফর এমন এক সময়ে এল- যখন মস্কো ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করতে চাইছে। ভারত রাশিয়ার অস্ত্রের প্রধান ক্রেতা। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২০২৪ সালের সর্বোচ্চ ৬৮ বিলিয়ন ডলার থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে তাঁরা ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য ১০০ বিলিয়ন ডলারে বাড়াতে চান।
স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের মতে, ২০২০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে রাশিয়া থেকে ভারতের প্রতিরক্ষা আমদানি ৩৬ শতাংশে নেমে এসেছে, যা ২০১০-২০১৫ সালে সর্বোচ্চ ৭২ শতাংশ এবং ২০১৫ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে ৫৫ শতাংশ ছিল। ভারতের বিমানবাহিনীর ২৯টি স্কোয়াড্রনের মধ্যে এখনও বহু রাশিয়ান সুখোই-৩০ জেট ব্যবহার করা হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পুতিন ভারতকে আরও রাশিয়ান ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা এবং যুদ্ধবিমান কেনার জন্য চাপ দেবেন, যাতে প্রতিরক্ষা সম্পর্ক জোরদার করা যায়। তাছাড়া ওষুধ, যন্ত্রপাতি এবং কৃষিপণ্যসহ বাণিজ্য সম্প্রসারণের আরও ক্ষেত্র চাইবে মস্কো।

পুতিন ভারতকে আরও রুশ অস্ত্র কেনার জন্য চাপ দেবেন বলেও আশা করা হচ্ছে। এক্ষেত্রেও নয়াদিল্লিকে ওয়াশিংটনের চাপের মুখে পড়তে হয়েছে। মস্কো ভারতকে আরও এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং এসইউ-৫৭ স্টেল্থ যুদ্ধবিমান বিক্রি করার আশা করছে।

  • ভারত
  • রাশিয়া
  • #