মানবাধিকার নিয়ে কথা বলতে এখন দ্বিধাবোধ করেন বলে মন্তব্য করে মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল বলেন, মানবাধিকারের কথা যদি কারো কাছে বলি, সেটা কতটা সম্মানের সঙ্গে গৃহীত হবে, সেই শঙ্কা থেকে যায়। বাংলাদেশের সংবিধানের মূল কথা সাম্য, মানবিক মূল্যবোধ ও ন্যায়বিচারের বিপরীতে গেলেই মানবাধিকারের লঙ্ঘন হয়।
বুধবার আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের আয়োজনে রাজধানীর মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের সেমিনার হলে অনুষ্ঠিত বিশেষ আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা হিসেবে তিনি এসব মন্তব্য করেন।
সুলতানা কামাল বলেন, মানবাধিকার বললে বড় বড় অপরাধের কথা মনে হয়। রবীন্দ্রনাথের একটা ছোট কথা আছে- পৃথিবীতে অন্য কোনো প্রাণিকে জন্ম নিয়ে শুনতে হয় না যে, এই প্রাণী হয়ে ওঠো। একমাত্র মানুষকেই জন্ম থেকে শুনতে হয় মানুষ হও। এই মানুষ হওয়ার প্রক্রিয়াই মানবাধিকার। মানুষ হয়ে জন্মালে মানুষের কিছু অধিকার জন্মায় যা সহজাত, অলঙ্ঘনীয় ও অহস্তান্তরযোগ্য। রাষ্ট্র অধিকার দেওয়ার মালিক নয়, রাষ্ট্র কেবল এর সুরক্ষা করবে।
তিনি বলেন, ১২১৫ সালে ম্যাগনা কার্টা যা বলেছে, ২০২৫ সালে এসেও আমরা বলছি সে কথা- কোনো মানুষকে সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়া গ্রেপ্তার করা যাবে না। মানুষের সঙ্গে হিংসাত্মক আচরণ করা যাবে না। চলা-ফেরার স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা যাবে না। স্বাধীনতা, ন্যায়বিচার ও শান্তি না থাকলে মানবাধিকার সুনিশ্চিত হবে না। মানুষ যেন ভয়ের সংস্কৃতিতে বাস না করে।
জবাবদিহিতার সংস্কৃতি তৈরির তাগিদ দিয়ে সুলতানা কামাল বলেন, মানবাধিকার কেবল আইনের বিষয় নয়। এটি মৌলিক সংস্কৃতির বিষয় যা আমাদের আচরণে প্রতিফলিত হবে। আমাদের মধ্যে জবাবদিহির সংস্কৃতি তৈরি করতে হবে। সমাজের কাছে, পরিবারের কাছে, সব ক্ষেত্রেই আমাদের জবাবদিহি আছে। এটা থেকে সরে গেছি বলেই মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে সূচনা বক্তব্য দেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের অন্যতম ট্রাস্টি ডা. সারওয়ার আলী। তিনি বলেন, আমরা সবসময় ভয়ের সংস্কৃতির মধ্যে বাস করছি। মানবাধিকার বাস্তবায়নে ভয়ের সংস্কৃতিই প্রধান বাধা। এই সংস্কৃতি থেকে আমাদেরকে বেরিয়ে আসতে হবে।