এক মাসেরও বেশ সময় পেরিয়ে গেলেও সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক অভিকে এখনো দেওয়া হয়নি দেশে ফেরার জন্য ট্রাভেল পারমিট। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলে তাকে এই পারমিট আদৌ দেওয়া হবে কিনা তা নিয়েও দিনে দিনে বাড়ছে সন্দেহ। এ নিয়ে ক্ষোভ বিরাজ করছে বরিশাল-২ (উজিরপুর-বানারীপাড়া) এলাকার অভির সমর্থকদের মনে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায় গত ১৪ নভেম্বর পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বরাবরে একটি দরখাস্ত সহ ট্রাভেল পারমিটের জন্য আবেদন কানাডার বাংলাদেশ দূতাবাসে পাঠান অভি। দূতাবাস পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের কাছে এ বিষয়ে মতামত জানতে চেয়ে অভির দরখাস্ত ও আবেদনটি পাঠিয়ে দিয়েছে ঢাকায়। কিন্তু উপদেষ্টা এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত না দেয়ায় দূতাবাস অভিকে পারমিট ইস্যু করতে পারছে না। যদিও দ্রুততম সময়ের মধ্যে নিজ দেশের নাগরিককে দেশে ফিরে যেতে এই পারমিট দেয়া দূতাবাসেরই দায়িত্ব।
১৯৯৬ সালে অনুষ্ঠিত ৭ম জাতীয় সংসদের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য অভি তার তৎকালীন নির্বাচনী এলাকার (উজিরপুর -বাবুগঞ্জ) যোগাযোগ নেটওয়ার্ক ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের মাধ্যমে দেশব্যাপী আলোচিত হয়েছিলেন।
কিন্তু ২০০১ সালের ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পরাজয়ের পরে অভির রাজনৈতিক জীবন প্রস্তুতিহীন সংকটে পড়ে যায়। তৎকালীন বিএনপি সরকারের আমলে তার নামে বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক মামলা দায়ের করা হয়। এ কারণে ২০০২ সালের ডিসেম্বরে তাকে দেশ ছেড়ে কানাডা চলে যেতে হয়। এ ছাড়াও মডেল তিন্নির মৃত্যুর ৬ বছর পরে অভির নামে চার্জশিট দেয়া হয়। যদিও কেরানীগঞ্জ থানায় প্রথমে একটি আত্মহত্যার মামলা রুজু হয়েছিল এবং রুজুকৃত সেই মামলার এজাহারে অভির নাম ছিল না। ২০২৫ সালের ১৪ জানুয়ারি এই মামলায় অভি তার অনুপস্থিতিতে বেকসুর খালাস পান। ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ শাহীনুর আক্তার মামলার পর্যবেক্ষণে জানান যে, মডেল তিন্নি প্রকৃতপক্ষে আত্মহত্যা করেছিলেন।
ছাত্ররাজনীতির চড়াই-উৎরাইয়ের মধ্য দিয়েই অভি দেশব্যাপী পরিচিত হয়েছেন। ১৯৯০ সালে অনুষ্ঠিত ডাকসু ও হল সংসদের প্যানেল মনোনয়ন নিয়ে বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের সাথে কারাগারে আটক অভির সাথে মতবিরোধের কারণে ছাত্রদলের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই নির্বাচনের পূর্ববর্তী বছর ১৯৮৯ সালের ২০ অক্টোবর জাতীয়তাবাদী ছাত্র দলের কেন্দ্রীয় কমিটির তৎকালীন আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক গোলাম ফারুক অভিকে ক্যাম্পাস থেকে গ্রেফতার করা হয়। সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র মামলা সহ আরো কয়েকটি রাজনৈতিক মামলা তার বিরুদ্ধে দায়ের করা হয়। ২৫ নভেম্বর ১৯৯০ সালে তৎকালীন এরশাদ সরকারের সাথে ‘গোপন’ যোগাযোগের অভিযোগে তাকে সহ ১২ জন ছাত্রনেতাকে ছাত্রদল থেকে বহিস্কার করা হয়। এই পরিস্থিতিতে ঐ বছরের ডিসেম্বরে অভি দেশ ছেড়ে ব্যাংকক চলে যান ও ইউএনএইচসিআর এর অফিসে শরণার্থী মর্যাদা চেয়ে আবেদন করেন। ১৯৯২ সালে তৎকালীন বিএনপি সরকারের দায়েরকৃত সব মামলায় অভি তার অনুপস্থিতে খালাস পান। দেশে ফেরার পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের গেস্ট রুম থেকে অভিসহ ছাত্রদলের বেশ কয়েকজন বহিস্কৃত ছাত্রনেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ১৯৯৫ সালের ৫ মার্চ উচ্চ আদালত থেকে তিনি জামিনে মুক্তি পান। পরবর্তীতে তৎকালীন সরকারের দায়েরকৃত রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায়ও খালাস পান অভি।