অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস ভারতীয় বার্তা সংস্থা প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়াকে (পিটিআই) একটি দীর্ঘ সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। তার এ সাক্ষাৎকারের কারণে জাতিসংঘের অধিবেশনের মধ্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ড. ইউনূসের বৈঠক হওয়া নিয়ে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের মধ্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ড. ইউনূসের বৈঠক আয়োজনের বিষয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তবে এ প্রস্তাবের বিষয়ে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক জবাব দেয়নি তারা। কারণ অধিবেশনে মোদির দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত করা হয়নি।
সম্প্রতি পিটিআইকে একটি দীর্ঘ সাক্ষাৎকার দেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস। এতে তিনি তিস্তার পানি বণ্টন, শেখা হাসিনাকে ফেরত চাওয়া এবং সীমান্ত হত্যাসহ নানা বিষয়ে কথা বলেছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি সূত্র জানিয়েছে, এই সপ্তাহের শুরুতে একটি ভারতীয় মিডিয়া আউটলেটের একটি সাক্ষাৎকারে ইউনূসের মন্তব্যের পরে বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা নেই। কেননা নয়াদিল্লি এ সাক্ষাৎকারকে ভালোভাবে নেয়নি।
পিটিআইকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে গত সরকারের আমলে ঘটে যাওয়া নৃশংসতার ন্যায়বিচারে শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরানো প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
বৃহস্পতিবার (০৫ সেপ্টেম্বর) ভারতের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়ার (পিটিআই) প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ মন্তব্য করেন। ক্ষমতাগ্রহণের পর প্রথমবারের মতো তিনি কোনো বিদেশি এবং ভারতীয় গণমাধ্যমকে সাক্ষাৎকার দেন।
ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানের পর পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে ভারতে অবস্থান করছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানা। তার পদত্যাগের পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন নোবেলবিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
সংবাদমাধ্যম পিটিআইকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভারত রেখে দিতে চাইলে তাকে চুপ থাকতে হবে যতক্ষণ না বাংলাদেশ তাকে ফেরত চায়। গত ১৩ আগস্ট শেখ হাসিনার দেওয়া রাজনৈতিক বিবৃতির পরিপ্রেক্ষিতে এ মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান। তিনি শেখ হাসিনার ওই মন্তব্যকে অবন্ধুসুলভ বলেও উল্লেখ করেন।
ড. ইউনূস বলেন, ভারতে তার অবস্থানের কারণে কেউ স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছে না। কেননা আমরা তাকে ফেরাতে চাই। তিনি সেখানে থেকে যেসব কথা বলছেন তা সমস্যার সৃষ্টি করছে। তিনি যদি চুপ থাকতেন তাহলে আমরা ভুলে যেতাম। তিনি নিজের জগতে থাকলে জনগণও বিষয়টি ভুলে যেত। কিন্তু তিনি ভারতে অবস্থান করে বিভিন্ন নির্দেশনা দিচ্ছেন। বিষয়টি কেউ ভালোভাবে নিচ্ছে না।
তিনি বলেন, আমরা বেশ দৃঢ়ভাবে বলেছি, তার চুপ থাকা উচিত। এটি আমাদের প্রতি অবন্ধুসুলভ আচরণ। তিনি সেখানে আশ্রয় নিয়েছেন এবং সেখান থেকে প্রচারণা চালাচ্ছেন। এমন নয়- তিনি স্বাভাবিক পথেই সেখানে গেছেন। জনগণের অভ্যুত্থান এবং জনরোষের কারণে তিনি সেখানে গেছেন।
গত ১৩ আগস্ট শেখ হাসিনা ‘ন্যায়বিচার’ দাবি করে বলেন, সাম্প্রতিক ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড’, হত্যা ও ভাঙচুরের সঙ্গে জড়িতদের অবশ্যই তদন্ত, চিহ্নিত এবং শাস্তি দিতে হবে।
এসব বিষয় সামনে রেখে ড. ইউনূস বলেন, এটি আমাদের বা ভারতের কারও জন্য ভালো নয়। এ নিয়ে অস্বস্তি রয়েছে।
তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার শেখ হাসিনার আমলে হওয়া নৃশংসতার ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং এ জন্য তাকে (শেখ হাসিনা) দেশে ফেরানো প্রয়োজন।