ডিসি নিয়োগ নিয়ে আবারও হট্টগোল, সচিবকে ঘেরাও

: যথাসময় ডেস্ক
প্রকাশ: ৩ মাস আগে
ছবি : সংগৃহীত

জেলা প্রশাসক (ডিসি) পদে নিয়োগ দিয়ে জারি করা দুটি প্রজ্ঞাপন পুরোপুরি বাতিলের দাবিতে আজ বুধবারও সচিবালয়ে বিক্ষোভ ও হট্টগোল করেছেন নিজেদের বঞ্চিত দাবি করা কর্মকর্তারা। তাঁরা জনপ্রশাসনসচিবের কাছে দাবি করেছেন, নতুন ডিসিরা যাতে সংশ্লিষ্ট জেলায় না যান। বিক্ষোভকারী কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, তাঁরা জনপ্রশাসন সচিবের কাছ থেকে আশ্বাস পেয়ে সন্ধ্যায় সচিবালয় ত্যাগ করেন।

অন্তর্বর্তী সরকার গত সোমবার দেশের ২৫ জেলায় ডিসি নিয়োগ দেয়। মঙ্গলবার আরও ৩৪ জেলায় ডিসি নিয়োগ দেওয়া হয়। দুটি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে মোট ৫৯ জেলায় ডিসি নিয়োগ দেওয়া হয়। তবে যাঁরা ডিসি হতে পারেননি, তাঁরা এই দুটি প্রজ্ঞাপন বাতিলের দাবিতে গতকাল মঙ্গলবারও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে গিয়ে হট্টগোল করেছিলেন। দিনভর বিক্ষোভের পর ওই দিন সন্ধ্যায় তাঁরা দেখা করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেনের সঙ্গে। সেদিনও প্রজ্ঞাপন দুটি বাতিলের আশ্বাস পেয়ে তাঁরা চলে যান।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সকালে প্রজ্ঞাপন দুটি পুরোপুরি বাতিল না করে আট জেলায় নতুন ডিসির নিয়োগ বাতিল করে। এ ছাড়া চার ডিসির জেলা পরিবর্তন করা হয়। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এ আদেশে সন্তুষ্ট হতে পারেননি নিজেদের বঞ্চিত দাবি করা এবং ডিসি হতে আগ্রহী কর্মকর্তারা। আজ দুপুরের পর থেকে তাঁরা আবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে গিয়ে বিক্ষোভ ও হট্টগোল শুরু করেন।

ঘটনাস্থল থেকে দেখা যায়, বিকেলের দিকে জনপ্রশাসনসচিব মোখলেসুর রহমান ওই মন্ত্রণালয়ের দোতলায় এক অনুষ্ঠান শেষে বের হলে তাঁকে ঘিরে ধরেন ৩০ থেকে ৪০ জন কর্মকর্তা। তখন জনপ্রশাসনসচিব তাঁদের বলেন, আমি কি সরকার? আমি কি এ প্রজ্ঞাপন বাতিল করতে পারি? এ কথা বলে তিনি ভবনের নিচতলায় নেমে যান।

পরে ডিসি হতে আগ্রহী কর্মকর্তারা নিচতলায় গিয়ে জনপ্রশাসন সচিবকে আবারও ঘিরে ধরেন। এ সময় তাঁরা সচিবকে বলেন, ডিসি পদে যাঁদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তাঁদের বেশির ভাগই ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে সুবিধাভোগী ও তাদের আশীর্বাদপুষ্ট। কেউ কেউ আওয়ামী লীগ পরিবারের সদস্য। অন্যদিকে তাঁরা (বিক্ষোভকারী) আগের সরকারের সময়ে বঞ্চিত। এবারও ডিসি পদে তাঁদের নিয়োগ দেওয়া হয়নি।

জনপ্রশাসনসচিবকে ঘিরে ধরে বিক্ষোভকারী কর্মকর্তারা অবশিষ্ট ৫১ জেলায় ডিসির নিয়োগ বাতিলের দাবি জানান। তখন জনপ্রশাসনসচিব তাঁদের বলেন, বিষয়টি তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টাকে জানাবেন। এ কথা বলে তিনি সচিবালয় ত্যাগ করেন।

বিক্ষোভে অংশ নেওয়া বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ২৫তম ব্যাচের কর্মকর্তা নূরুল করিম ভূঁইয়া বলেন, ডিসি নিয়োগ দিয়ে জারি করা দুটি প্রজ্ঞাপন বাতিলের বিষয়ে জনপ্রশাসন নসচিব আশ্বাস দিয়েছেন। নতুন নিয়োগ পাওয়া ডিসিরা যাতে সংশ্লিষ্ট জেলায় না যান, ঢাকায় অবস্থান করেন, সেটি নিশ্চিত করবেন বলে সচিব জানিয়েছেন।

নতুন ডিসিদের ব্রিফিং স্থগিত

নতুন নিয়োগ পাওয়া ডিসিদের নিয়ে আজ সকাল নয়টায় প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে ব্রিফিং হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সচিবালয়ে বঞ্চিত দাবি করা কর্মকর্তাদের হট্টগোলের ঘটনায় ওই ব্রিফিং স্থগিত করা হয়। এ ছাড়া দুপুরে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে নতুন ডিসিদের নিয়ে পূর্বনির্ধারিত একটি বৈঠক হয়নি। একই সঙ্গে পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত নতুন ডিসিদের পদায়নকৃত কর্মস্থলে না গিয়ে ঢাকায় অবস্থান করতে বলা হয়েছে।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, স্থগিত করা দুটি বৈঠক কবে হবে, তা পরে জানিয়ে দেওয়া হবে।

এদিকে ডিসি নিয়োগ নিয়ে কর্মকর্তাদের হট্টগোলের কারণ খতিয়ে দেখতে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব এম এ আকমল হোসেনের নেতৃত্বে এক সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

যে কারণে নিয়োগ বাতিল

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, নতুন ডিসি হওয়া আটজনের নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ পেয়ে। একজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) থাকার সময়ে সরকারি কলেজের একজন শিক্ষককে পা ধরে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করেন। সমালোচনার মুখে তখন ওই ইউএনওকে প্রত্যাহার করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মাধ্যমে শেয়ারবাজারে বিপুল বিনিয়োগের অভিযোগ করেছেন বিক্ষোভকারী কর্মকর্তারা।

আরেকজনের নিয়োগ বাতিল হয়েছে দলবাজি করার কারণে। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘ম্যান’ বা লোক হিসেবে তুলে ধরেছিলেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের রপ্তানি অনুবিভাগে কর্মরত এক কর্মকর্তার ডিসি পদে নিয়োগ বাতিল করা হয় আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কারণে। ওই কর্মকর্তা বেসরকারি একটি টেলিভিশন চ্যানেলে সংবাদ পাঠ করেন।

সাবেক একজন প্রতিমন্ত্রীর ও একজন সাবেক উপমন্ত্রীর একান্ত সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালনের কারণে ডিসি পদের নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে দুজনের। দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ থাকা এক কর্মকর্তাকে ডিসি নিয়োগ দেওয়ার পর আজ বাতিল করা হয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান আবু হেনা রহমাতুল মুনিমের দীর্ঘদিন একান্ত সচিব থাকা এক কর্মকর্তার ডিসি পদে নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে। আরেক কর্মকর্তা ইউএনও থাকার সময় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে (২১ ফেব্রুয়ারি) বনভোজন আয়োজন করেছিলেন। তাঁর ডিসি পদে নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে।

সূত্র : প্রথম আলো

  • জেলা প্রশাসক
  • সচিবালয়
  • #