কুমিল্লা-১১ (চৌদ্দগ্রাম) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক মুজিবের রাজনৈতিক কার্যালয়টি দখলে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা কার্যালয়টি দখলে নে। পরে জিয়াউর রহমানের নামে এটির নামকরণ করা হয়। বিষয়টি নিয়ে চৌদ্দগ্রামসহ আশপাশের এলাকাজুড়ে আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম বাজারের মাঝামাঝি এলাকায় ঢাকামুখী লেনের ডান পাশে কার্যালয়টির অবস্থান। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর এটি প্রথমে ভাঙচুর করা হয়। পরে কার্যালয়টি দখলে নেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। দখলের পর সেটিকে মেরামত করে ‘শহীদ জিয়াউর রহমান বীরউত্তম হল’ নামে নামকরণ করা হয়।
স্থানীয়রা জানান, ২০০৩ সালে চৌদ্দগ্রাম সদর ইউনিয়নকে বিলুপ্ত ঘোষণা করে চৌদ্দগ্রাম পৌরসভা চালু করা হয়। ওই সময় সদর ইউনিয়ন পরিষদের পাশে একটি হলরুম করা হয়। এ সম্পত্তির মালিক কুমিল্লা জেলা পরিষদ। পৌরসভা গঠনের পর ইউনিয়ন পরিষদের কার্যালয়সহ আশপাশের সম্পত্তির ওপর শপিংমল নির্মাণ করে চৌদ্দগ্রাম পৌরসভা। পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকে তৎকালীন ইউনিয়ন পরিষদের হলরুমটি।
২০১৯ সালে হলরুমটি দখল করেন তৎকালীন সংসদ সদস্য মুজিবুল হক মুজিব। পরে সেটিকে মেরামত করে ২০২০ সালে নিজের রাজনৈতিক কার্যালয় বানান তিনি। নাম দেন ‘মো. মুজিবুল হক মুজিব, মাননীয় সংসদ সদস্য-২৫৯ এর রাজনৈতিক কার্যালয়’।
এরপর থেকে সাবেক রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক মুজিব যখনই চৌদ্দগ্রাম পৌরসদরে আসতেন, কার্যালয়টিতে বসতেন। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ৭ জানুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনে এটি ছিল মুজিবুল হকের প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়। এর ভেতরে একটি হলরুম এবং মুজিবুল হকের বসার জন্য আরেকটি কক্ষ ছিল।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দিন চৌদ্দগ্রাম উপজেলা বিএনপির সভাপতি কামরুল হুদা এবং চৌদ্দগ্রাম পৌরসভা বিএনপির আহ্বায়ক হারুনুর রশিদের অনুসারী নেতা-কর্মীরা সদলবলে হামলা চালিয়ে দরজা-জানালাসহ ভাঙচুর করা হয়। গত ১৭ আগস্ট কার্যালয়টি দখলে নেন স্থানীয় বিএনপির নেতা-কর্মীরা। দখলের পর কার্যালয়টির দরজা-জানালা মেরামত করে সেটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘শহীদ জিয়াউর রহমান (বীর উত্তম) হল’।
এ বিষয়ে চৌদ্দগ্রাম পৌর বিএনপির আহ্বায়ক হারুনুর রশিদ বলেন, একতলা বিশিষ্ট টিনশেড ভবনটির সম্পত্তির মালিক জেলা পরিষদ। এটি এক সময় চৌদ্দগ্রাম সদর ইউনিয়ন পরিষদের হলরুম ছিল। মুজিবুল হক ক্ষমতার অপব্যবহার করে এটি দখল করেছেন। এটি সরকারি সম্পত্তি। আমরা এটি উদ্ধার করে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ রেখেছি। সরকার নিজ প্রয়োজনে যখনই চাইবে তখনই আমরা এটি হস্তান্তর করতে রাজি আছি। আমরা জেলা পরিষদ বা সরকারের এ সম্পত্তি দখল করিনি, উদ্ধার করেছি।
বিষয়টি নিয়ে জানতে উপজেলা বিএনপির সভাপতি কামরুল হুদাকে বেশ কয়েকবার ফোন করা হয়। কিন্তু তিনি ফোন রিসিভ না করায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
অপরদিকে, বন্ধ রয়েছে সাবেক সংসদ সদস্য মুজিবুল হক মুজিবের মোবাইল নম্বর। সরকার পতনের পর থেকে গা-ঢাকা দিয়েছেন তিনি।
চৌদ্দগ্রাম উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ বলেন, শিগগিরই এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমি বিষয়টি দ্রুত সময়ের মধ্যে জেলা পরিষদকে অবহিত করব। এ ছাড়া বিষয়টির বিস্তারিত খোঁজ-খবর নেওয়া হবে।
কুমিল্লা জেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তাসলিমুন নেছা বলেন, বিষয়টি এখনই জেনেছি। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সরকারি সম্পত্তি দখলের কোনো সুযোগ নেই।