বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ব্যানারে ছাত্র-জনতার নেতৃত্বে গত ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকারের পতন হয়। আন্দোলন চলাকালীন সময়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের থেকে সরকার পতনের ১ দফা দাবি আদায়কে ছাত্র-জনতার কেউ কেউ স্বাধীনতা অর্জনের সাথেও তুলনা করেছেন। ধারাবাহিকতায় কিছু রাজনীতিক প্রকৃত অর্থে দেশের স্বাধীনতা বলতে যে ধরণের ভূখণ্ড, অন্য রাষ্ট্রের নিকট থেকে অর্জন করে নিতে হয়, হোক সেটা আলোচনা কিংবা চুক্তিতে কিংবা যুদ্ধ সংগ্রাম লড়াই, লাগাতার বঞ্চিত হতে হতে দাবীদাওয়ার মাধ্যমে সেটা অল্প কিছুদিনের জন্য হলেও চাপা পড়ে যায়। এই চাপা পড়ে যাবার পিছনেও অনেকেই অনেক যুক্তি খোঁজেন বা দিয়ে যাচ্ছেন। ভিন্ন মতাদর্শের লোকদের মানতে অনেকটাই জোরজবরদস্তি করতে দেখে গেছে। পাশাপাশি বিরুদ্ধ মতের লোকজন কিংবা রাজনৈতিক মতবিরুদ্ধ ব্যক্তিগণ অনেকাংশেই ‘চোরের কিল মতনে খাওয়ার’ মতো করে হজম করে যাচ্ছেন।
আসুন পটপরিবর্তনের সুফলভোগীরা সাধারণ জনগণকে কী বার্তা দিয়ে আসছিলেন তা জেনে নেই। তাদের অভিযোগ ছিল দেশের প্রতিটি সেক্টরে সীমাহীন দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, মানুষজনকে জিম্মি করে একশ্রেণির লোক রাতারাতি হাজার কোটি টাকার মালিক বনে যাচ্ছে। সাথে ছিল দ্রব্যমূল্যের ক্রমাগত ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণের ক্রয়ক্ষমতার বাহিরে চলে যাওয়া। তেমনি করে মেগা প্রকল্পের নামে মেগা লুটপাট, সিন্ডিকেট করে টেন্ডার বাণিজ্য বাগিয়ে নিয়ে কাজের গুণগত মান ঠিক না রেখে কাজ করা। চাকরিতে তদ্বির বাণিজ্য, দলীয়করণের ফলে সুফল বঞ্চিত হওয়া, মুদ্রাস্ফীতি, ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমে যাওয়া, ডলারের কৃত্রিম সংকট তৈরি, অবৈধ উপায়ে মুদ্রা পাচার, নেতাদের অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প গ্রহণ, রিজার্ভ কমে যাওয়া, সরকারি কর্মচারীদের ভোগবিলাস, রাজনৈতিক নেতাদের উচ্চাভিলাষী মানসিকতা, দলের উঁচু থেকে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত নিজেকে স্তরভিত্তিক রাজা-মহারাজা মনে করা, নামে বেনামে সম্পদ অর্জন যেমন আছে। তেমনি করে অভিযোগ আছে, বিচার বহির্ভূত হত্যা, গুম, খুনের মতো ঘটনা। আর বিদেশি প্রচার মাধ্যমের অতিরঞ্জিত প্রোপাগাণ্ডা, যা সরকারে থাকা কর্তাব্যক্তি তো বটেই সংশ্লিষ্ট সকলকেই বেকায়দায় ফেলতে যথেষ্ট ভূমিকা পালন করেছে।
এর পাশাপাশি বিগত আওয়ামী লীগ সরকারকে প্রতিবেশী বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্র ভারতের মাত্রাতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণসুলভ আচরণের ফলে বৈশ্বিক ও ভারতের নিজস্ব নিরাপত্তার স্বার্থে একটি বলয় তৈরিতে এবং বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা তাদের জন্যও জরুরি ছিলো বিধায় একটু বেশিই পরিমাণে একনিষ্ঠতা ধরে রাখতে যেয়ে সরকারকে জনবিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়। এই সময়ে বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে প্রবল ভারত বিদ্বেষের বীজ বপন করে জনগণকে ক্ষেপিয়ে তুলে সরকারকে টালমাটাল অবস্থায় ফেলে দেয়। দলীয় চাটুকার বেষ্টিত থাকায় সরকারের শীর্ষ মহল জনগণের ভাষা বুঝতে না পেরে অনিবার্য পরিণতি প্রকারান্তরে নিজেদেরই ধ্বংস ডেকে আনে।
অভিযোগ ছিল পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট বাহিনীগুলোকে দলীয় লেজুড়বৃত্তির অংশ করে তোলে। তারই ফলশ্রুতিতে ক্রমেই পরিস্থিতি জটিল থেকে জটিলতর হতে থাকে। সাম্প্রতিক শ্রীলঙ্কা যেখানে দৃশ্যমান উদাহরণ সেখানে নেপথ্যের কুশীলবদের চিন্তায় অনেকটুকু সহজ করে দিয়েছে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে। যার পরিণতি বিশ্ব দেখেছে অবাক অবিশ্বাস্য বিস্ময়ে। দেশত্যাগ করলেন প্রবল পরাক্রমশালী সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। লুট হলো প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় দাম্ভিকতার নিশানা গণভবন। লুটের তালিকায় যোগ হলো মাছ, মুরগী, পশু, পাখি, ব্যবহার্য জিনিসপত্র, রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ দলীলদস্তাবেজ। সাথে লুট হয়েছে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে প্রাচীন দলটির দাপুটে ঐতিহ্য। বাদ যায়নি ব্যক্তিগত ব্যবহার্য অন্তর্বাসও! আমরা কোন যুগে বাস করছি? যার দরুন এই হীন কুরুচিপূর্ণ কাজে বিবেকবোধ বিবর্জিত হয়েছে বলে মনে না করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম নিজের ওয়ালে ছবি তুলে পোস্ট দিতে হয়। মিডিয়াও সেসব প্রচার করে দেখিয়ে দিয়েছে একজন জনবান্ধব সরকারের জনবিচ্ছিন্ন হওয়ার খবর। যদি এই দেশের রাজনীতিবিদরা শিক্ষা নেন তো ভালো কথা! কিন্তু ইতিহাসের প্রবল শিক্ষা হচ্ছে কেউই ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয় না। আবার ইতিহাস বারবার ফিরে ফিরে আসে! আমাদের ভুলে গেলে চলবে না।
গণভবন লুট হতে হতে শুরু হয় আরেক ধ্বংসযজ্ঞ। যারা পরিবর্তন চেয়ে আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে যার যার অবস্থান থেকে রাস্তায় ছিলেন তারাও ভাবলেশহীন হয়ে পড়লেন। এক সময় যারা সরকারকে অস্থিতিশীল করে তুলেছিল তাদের ভাষ্যমতে বিপ্লব পরবর্তী সহিংসতা সকল দেশেই হয়। এই দেশেও হচ্ছে, তবে থেমে যাবে। বাহ্ কি উক্তি! সাবলীলভাবে বলে দিলেন। সারাদেশে শুরু হয় এক আতংকের প্রহর। জনপদে মানুষ তথা পতিত সরকারের অনুসারী বলে পরিচিত নেতা-কর্মী, সমর্থক কেউ বাদ যায় না। ঘর বাড়ি জ্বালিয়ে পুড়িয়ে লুট করে আরেকটি পক্ষ। গাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয় মন্ত্রী-এমপি উপজেলা চেয়ারম্যানদের ব্যক্তিগত গাড়ি, সরকারি গাড়ি ও জিনিসপত্র পুড়িয়ে চাই করে দেয়া হয়। পুড়িয়ে দেয়া হয় থানা। পিটিয়ে মারা হয় পুলিশসহ নেতাকর্মীদের। মেরে গাছের সাথে উল্টো করে ঝুলিয়ে লাশ বিকৃত করা হয়। তার সাথে আরো অনুতাপের বিষয় জাতিরজনকের প্রতিকৃতি সকল জায়গায় ম্যুরাল ভেঙে ফেলা হয়। আরো অবাক করা বিষয় হচ্ছে, সংরক্ষিত এরিয়ায়ও একই ঘটনা ঘটিয়েছে। বঙ্গবন্ধুর মূর্তিতে উঠে প্রশ্রাব করার দৃশ্যও প্রচারিত হতে দেখা গেছে। আবার কিছু কিছু জায়গায় সেনাবাহিনীর পোশাকধারী কিছু সদস্য, কিছু আনসার সদস্যকেও তেমন করে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙতে দেখা গেছে প্রবল উৎসাহে। ঘরছাড়া হয়েছে লক্ষ লক্ষ রাজনৈতিক নেতা কর্মী সমর্থক ও অনুসারী। মানুষের ভীতি কাটছে না। মানুষ সন্ত্রস্ত। কি বিভীষিকাময় সময় অতিক্রম করছে। সাথে শুরু হয়েছে, প্রতিপক্ষের প্রতি লাগাতার হামলা মামলা। আবার মামলা নিয়ে বাণিজ্যের খবরও বেশ জোরেশোরে শোনা যাচ্ছে। পুলিশ এখনো স্বাভাবিক অবস্থায় কর্মে ফিরতে পারে নাই। তারাও ভীত সন্ত্রস্ত অবস্থায় রয়েছে। যারা অভ্যুত্থান ঘটিয়েছে তাদের দাবী শান্তি শৃঙ্খলা ফেরাতে তারা কাজ করছে। শীর্ষ দুই দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতা দলীয় নেতাকর্মীদের শান্ত থাকার পরামর্শ দিলেও তৃণমূলে চরম বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি বিরাজ করছে। সেই সাথে আলোচনায় উঠে এসেছে, মব জাস্টিস, মব কিলিং, মব লিঞ্চিং, ফার্স্ট ডিগ্রি মার্ডারের মতো ঘটনা পরিক্রমা। এসব মব লিঞ্চিংয়ে দেখা গেছে কোথাও ভাত খাইয়ে গণপিটুনি দিয়ে আবার ভাত খাইয়ে আবার গণপিটুনি দেয়ার ফলে মৃত্যু। এ ধরনের আরো আছে, গান গাইতে গাইতে গণপিটুনিতে হত্যার মতো নির্মম পৈশাচিক উন্মত্ততায় হত্যাকাণ্ড ঘটানোর মতো ঘটনা।
এই মুহূর্তে বৃহৎ একটি দল আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর আর দৃশ্যমান কোন রাজনীতিতে না থাকলেও দোষারোপ থেমে নেই। বিভিন্ন স্তরের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যখন পূর্ব থেকে দাবী দাওয়া করে জোরালো ভূমিকায় রাস্তায় নামে তখনও বলায় ‘ফ্যাসীবাদের দোসর’ রাস্তায় বিভিন্ন রূপে ফিরে এসেছে বলে অভিযোগ করে যাচ্ছে। গার্মেন্টস সেক্টর একটি বৃহৎ রপ্তানি খাত হলেও বিশৃঙ্খলা করে গঠনমূলক সমাধান না দিলে মালিকপক্ষ অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিতেও বাধ্য হয়েছেন মর্মে মিডিয়ার মাধ্যমে জানিয়েছেন এবং সরকারের কাছে নিরাপত্তা চেয়েছেন।
শুরু হয় দেশব্যাপী গুজব গুজবের ডালপালা। প্রচারের ভীড়ে অপপ্রচার দাপট দেখিয়ে যাচ্ছে অনলাইনে। কেউ মেট্রোরেল নিয়ে, কেউ ইলিশ নিয়ে। সেই ইলিশকে কেউ কেউ ‘রাজনৈতিক মাছ’ আখ্যা দিয়ে ট্রলও করছে। শেষ পর্যন্ত আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের ২০২৩ সালের একটি স্ট্যাটাস ভাইয়াল হয়। যেখানে বলা হয় সরকার শহীদের রক্তের ওপর ভারতকে ৫০০ টন ইলিশ দিচ্ছে। উপদেষ্টা পরিষদে আসার পর উপদেষ্টাদের ভারত বিদ্বেষী মনোভাব আরো প্রকট হয়। ভারতে ইলিশ পাঠানোর বিপক্ষে মত প্রকাশ করে বেশ বাহবা কুড়িয়েছেন। যদিও সেই বাগাড়ম্বর বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। এবার ৩ হাজার টন ইলিশ পাঠিয়েছে। আর এতেই সাধারণ মানুষ ক্ষেপে উপদেষ্টাদের গোষ্ঠী উদ্ধার করতেও ছাড়ছেন না।
আবার ছাত্র সমন্বয়কদের সেই ঝাঁঝালো স্লোগান ‘দিল্লি না ঢাকা’ ‘ঢাকা ঢাকা’ বেশ জনপ্রিয়তা পেলেও এখন উপহাসে পরিণত হতে শুরু করেছে। প্রথমত, ভারতের অভ্যন্তরীণ সমস্যা ‘সেভেন সিস্টার্স’ খেয়ে দেয়ার প্রকাশ্য ঘোষণা সাথে সাথে বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামে শুরু হয় অস্থিরতা। ব্যস কুপোকাত! মনে করছে মানুষ। একদিন অভ্যন্তরীণ সমস্যা সমাধানে হিমশিম খেতে হচ্ছে অন্যদিকে পাহাড়ের অস্থিরতা। দুয়ে মিলে সরকার আর নিজস্বতা বজায় রেখে যে কথা সে কাজে অবিচল রাখতে সক্ষম হয়নি। দিতে হয়েছে ভারতের পুজো উপলক্ষ্যে বহুল কাঙ্ক্ষিত ‘ রাজনৈতিক মাছ ইলিশ’।
প্রধান উপদেষ্টা নোবেলজয়ী প্রফেসর ড. ইউনূসের দায়িত্ব গ্রহণ পূর্ব ভারতীয় মিডিয়ায় দেয়া ইন্টারভিউতে বলেন, ‘বাংলাদেশ অস্থিতিশীল হলে, সেভেন সিস্টার্সেও প্রভাব পড়বে।’ এর পরই ভারতও নড়েচড়ে বসে। তবে এখন বিএনপি এবং জামায়াত যথারীতি ভারত বিদ্বেষী মনোভাব থেকে সরে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা তদ্বির করছে বলেও মিডিয়ায় খবর প্রকাশ হয়। তাহলে কি বোঝা গেল? ভারত বিদ্বেষী হয়ে নয়, ভারতের সাথে সদ্ভাব রেখেই রাজনীতি করতে হবে এটা সকলেই বুঝে গেছেন। তাই ভারত বিদ্বেষের লম্ফঝম্প আর মানুষ গিলছে না। এই মুহূর্তে রাজনৈতিক দলগুলোও ভারতে খুব একটা ঘাঁটাতে চাইবে না এটা জানা কথা। আঞ্চলিক পরাশক্তি ভারত যদি বেঁকে বসে তবে গদি টিকানো মুশকিল তো হবেই, ইজ্জত নিয়ে থাকাও দুষ্কর হয়ে পড়বে।
এরই মধ্যে প্রফেসর ইউনূস ২য় স্বাধীনতা উদযাপন করতে জাতিকে আহ্বান জানিয়েছেন। তাহলে কি তিনি জেনে শুনে বুঝে এই অভ্যুত্থানকে ‘২য় স্বাধীনতা’ বলে উল্লেখ করলেন? আসুন বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মতামত জেনে নেয়া যাক, বহুমাত্রিক বিশ্লেষক
প্রফেসর সলিমুল্লাহ খান বলেন, ২য় স্বাধীনতা বলে কোন কথা নাই। স্বাধীনতা একটাই, কেবল একবারই এসেছে যা ১৯৭১ সালে। তিনি একাধিক জায়গায় ইউটিউব বক্তব্যে আরো বলেন, হ্যাঁ বিভিন্ন সময় আরো স্বাধীনতা এসছিলো। তবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ওই একবারই। ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, স্বাধীনতার জন্য একটা ভূখণ্ড থেকে আলাদা হয়ে আরেকটা স্বাধীন ভূখণ্ড লাগবে। সেটা কই? আছে? আলাদা জাতীয় সঙ্গীত, জাতীয় পতাকা, আরেকটি রাষ্ট্র থেকে যুদ্ধ করে আদায় না হলে কীভাবে হয় স্বাধীনতা। তাহলে ২য় স্বাধীনতা অমূলক চিন্তা। যেটা কাল্পনিক চিন্তা প্রসূত। আবার বিএনপি সহ রাজনৈতিক দলগুলো সরকার উৎখাতকে স্বাধীনতা বললেও মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক দলটিকে এখন আর এই কথা বলতে শোনা যাচ্ছে না। অন্যদিকে ধর্মভিত্তিক দল জামায়াত কিন্তু বরাবরই ছাত্র-জনতার বিপ্লবকে স্বাধীনতা বলে আসলেও ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধ, বিজয় এসব অস্বীকার করার পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের প্রতি চরম বৈরী মনোভাব পোষণ করলেও ২৪ শের বিল্পবকে স্বাধীনতা বলে চালিয়ে দিতে চেয়েও বারবার হোঁচট খাচ্ছে। কেউই সেই অর্থে সরকার পতন আন্দলনকে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সমতায় চিন্তা করছে না। এই ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী জেড আই খান পান্না স্পষ্ট করেই বলেছেন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযোদ্ধারা এখনো মরে যায় নাই। টিভি মিডিয়ায় দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধ একবারই সংঘটিত হয়েছে। স্বাধীনতা একবারই এসেছে। তাহলে যে যে দৃষ্টিকোন থেকেই ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করেন না কেন, ২০২৪ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে রূপ নেয়া বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন পর্যায়ক্রমে ছাত্র-জনতার ৯ দফা থেকে সরকার পতনের ১ দফা।
এই দফা গুলোই নতুন করে বিতর্ক উস্কে দিচ্ছে রাজনীতির মাঠে। শুরু হয়েছে ‘মাস্টারমাইন্ড‘ বিতর্ক। একে একে ছাত্রলীগ বেশ ধারণকারী ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া শিবিরকর্মী নেতাদের পরিচয় প্রকাশ পেতে শুরু করে। তারা নিজেরাও এই পরিচয় প্রকাশ করে নতুন নতুন চমক নিয়ে হাজির হলেও বিএনপির সাথে দ্বন্দ্বের সূত্রপাত হতে থাকে। যেহেতু সাধারণ মানুষ বুঝতে দেরি হলেও একে একে আন্দোলনে জনসমর্থন আদায়ে নিজেদের পরিচয় গোপন করে কৌশলগত কারণ দেখিয়ে আন্দোলন জোরদার করে। নেতৃত্ব দেয় এবং দফা প্রণয়ন করে। এদিক দিয়ে পিছিয়ে থাকা বিএনপির জনসমর্থন থাকলেও আন্দোলনে সমর্থন সহযোগিতা সবকিছু করেও নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেতৃত্বের ভার নিতে ব্যর্থ হয়ে প্রবাসে থাকা দলিটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে কৃতিত্ব দিয়ে আন্দোলনের ‘মাস্টারমাইন্ড’ হিসেবে নাম ঘোষণা করলেই বাঁধে নতুন বিপত্তি। শুরু হয় নেপথ্যের কুশীলবদের সাথে মাঠের সর্বাগ্রে থাকা বিএনপির দ্বন্দ্ব ও দূরত্ব। এসব বিষয়ে বিএনপি পূর্বের যেকোন সময়ের চেয়ে কৌশলী অবস্থান নেয়। অপরদিকে জামায়াত প্রচার করতে থাকে, আন্দলনে নেতৃত্ব দেয়া ১৫১ জনের ১০৮ জনই শিবিরের নেতাকর্মী। তখনই বিতর্ক ও বিভেদ চূড়ান্ত রূপ নেয়। এদিকে কৌশল নেয় জামায়াত। যারা ইতিপূর্বে সাধারণ ছাত্র বেশে ছিলো। কিংবা ছাত্রলীগের ছায়াতলে আত্মপরিচয় গোপন করে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালাতো তারাই এখন নিজেদের পরিচয় প্রকাশ করায় বিএনপিও নড়েচড়ে বসে। এখন আর জনগণকে বোঝাতে সক্ষম হচ্ছে না বিএনপির কোন পর্যায়ের কোন নেতাকর্মী এই আন্দোলনের ‘মাস্টারমাইন্ড’ নয়। ইতোমধ্যে অনেকেই বলতে শুরু করেছেন, উপদেষ্টা পরিষদে থাকা দুই ছাত্র প্রতিনিধিও জামায়াতের অনুসারী। যাই হোক সকল দল দাবি জানিয়েছে, নির্বাচনি রোডম্যাপ ঘোষণা করার।
পরিশেষে, আজকের এই আলোচনা হতে একটু হলেও ধারণা পাওয়া যাচ্ছে যে, ২য় স্বাধীনতার কোন অস্তিত্ব নেই। মাস্টারমাইন্ড বিতর্ক পরবর্তী বিজয়ী দলই তাদের মতো করে ইতিহাস লিখবে। তবে কতদিন এই ‘২য় স্বাধীনতা’ অটুট থাকে আর কতদিনে ফয়সালা হয় ‘মাস্টারমাইন্ড’ বিতর্কের তা সময়ই নির্ধারণ করবে। হয়তো আরো ৫৩ বছরের অপেক্ষা। সময় দ্রুতই ফুরিয়ে যায়। ইতিহাস বারবার ফিরে আসে।
লেখক : অ্যাডভোকেট, জেলা ও দায়রা জজ আদালত, ফেনী