২০ সেপ্টেম্বর রাঙামাটি শহরের দক্ষিণ কালিন্দীপুর সড়কে প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যা করা হয় অনিক কুমার চাকমাকে। কাপ্তাইয়ের কর্ণফুলী সরকারি ডিগ্রি কলেজের উচ্চমাধ্যমিক প্রথমবর্ষের ছাত্র অনিককে হত্যার দৃশ্যসংবলিত ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এ হত্যার ঘটনায় অনিকের বাবা আদর সেন চাকমা মামলা করেছেন।
শহরের কালিন্দীপুর এলাকার কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, জেলা প্রশাসনের ফটক এলাকা থেকে অনিক চাকমাকে দৌড়ে পালিয়ে আসতে দেখেছেন তাঁরা। অনিক জীবন বাঁচাতে চায়ের দোকানে ঢুকে যান। কিছুক্ষণের মধ্যে সেখান থেকে বের করে এনে সড়কের পাশে তাঁকে পেটাতে থাকে একদল যুবক।
ঘটনার দিন রাঙামাটি শহরে সমাবেশ করছিল ‘সংঘাত ও বৈষম্যবিরোধী পাহাড়ি ছাত্র আন্দোলন’ নামে শিক্ষার্থীদের একটি জোট। তাদের মিছিল শহরের বনরূপা বাজারে গেলে সংঘাত বাধে। একদল বাঙালি যুবক ধাওয়া করলে মিছিলকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়েন। পাহাড়িদের ওপর হামলা, দোকানপাট, বাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। অনিক ওই মিছিলে ছিলেন।
রাঙামাটি সদর উপজেলার মগবান ইউনিয়নের নোয়াআদম গ্রামে অনিকের বাড়ি। বাবা জুমচাষি। ভাই কিশোর কুমার চাকমা বাবার সঙ্গে কৃষিকাজ করেন।
মিছিলকে কেন্দ্র করে হাঙ্গামা শুরুর পর বেলা ১১টার দিকে অনিকের বাবা জানতে পারেন, তাঁর ছেলে আহত হয়েছেন। বাবা আদর সেন বলছিলেন, ‘শুনলাম ছেলেকে মেরে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। ফোন করে আমাকে একজন জানাল, অনেক মেরেছে ছেলেকে। আমি দিশাহারা হয়ে যাই। আধঘণ্টা পর ফোন আসে আমার ছেলে নাই।’
কলেজের কাছে একটি মেসে খালাতো ভাইয়ের সঙ্গে থাকতেন অনিক। অর্থকষ্টের কারণে এক বছর তাঁর লেখাপড়া বন্ধ ছিল। বাবা বলছিলেন, ‘আমি, ওর মা আর ভাই মিলে কষ্ট করেছি যেন অনিক লেখাপড়া করে বড় হয়।’ শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) সকালেও ফোন করেছিল। ওটাই শেষ ফোন। এরপর ওর নাম্বারে কতবার ফোন করলাম আর সাড়া দেয় না। এখনো সকাল–রাতে মনে হয়, ছেলেটি ফোন করবে। কিন্তু…
মাটির মেঝেতে মাদুরে বসে কথা হচ্ছিল দূর পাহাড়ের এই জুমিয়া পরিবারটির সঙ্গে। বাবা আদর সেন ও অনিকের ভাই কিশোর কথা বললেও শুধু কাঁদছিলেন মা তারাসুন্দরী চাকমা। এরপর একটু ধাতস্থ হলে চাকমা ভাষায় ছেলের সঙ্গে তাঁর নানা স্মৃতি হাতড়ে যা বললেন, এর অর্থ-ছেলে প্রায়ই বলত, এমন কষ্ট আর থাকবে না। সে আরেকটু লেখাপড়া করে সেনাবাহিনীতে যোগ দেবে, নয়তো আইন পড়বে। প্রায়ই পরিবারের কষ্ট লাঘবের কথা বলত অনিক।
রাঙামাটি জেলা প্রশাসন অনিকের বাবার হাতে ২৫ হাজার টাকা দিয়েছে। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ৫৮ হাজার টাকা তুলে দিয়েছেন রোববার অনুষ্ঠেয় ধর্মীয় কাজের জন্য।
হাসপাতালে নিয়ে আসার আগেই অনিকের মৃত্যু হয় বলে জানান রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক মো. শওকত আকবর।
ঘটনার পরদিন রাঙামাটি কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন অনিকের বাবা; কিন্তু ছয় দিন পর গতকাল পর্যন্ত এ ঘটনায় কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আলী বলেন, কেউ গ্রেপ্তার না হলেও চেষ্টা চলছে, তদন্ত চলছে।