চার পাহাড়ি নিহতের ঘটনায় দোষীদের গ্রেফতারের দাবি ৪৪ বিশিষ্ট নাগরিকের

: যথাসময় ডেস্ক
প্রকাশ: ৩ মাস আগে

খাগড়াছড়ি সদরের পানখাইয়া পাড়ায় মোটরসাইকেল চুরির অভিযোগে এক বাঙালি যুবককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনার জেরে অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে পার্বত্য অঞ্চল। দফায় দফায় সংঘর্ষে খাগড়াছড়িতে তিন জন এবং রাঙামাটিতে একজন পাহাড়ি নিহত হন। এসব হতাহতের ঘটনায় দোষীদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন দেশের ৪৪ জন নাগরিক ও অধিকারকর্মী।

বিবৃতিতে পাহাড়িদের বাড়িঘরে আগুন, লুট ইত্যাদির নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ ও উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত ও দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণেরও দাবি জানানো হয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, আমরা গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভের সঙ্গে লক্ষ্য করছি- দশকের পর দশক পার্বত্য তিন জেলার আদিবাসী জনগোষ্ঠীসহ সারা দেশের আদিবাসীরা অন্যান্য অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ইত্যাদি নানা ক্ষেত্রে ঐতিহাসিকভাবে এবং স্বাধিনতা পরবর্তী দশকের পর দশক ধরে যে বৈষম্যর শিকার হয়ে আসছেন। মৌলিক নিরাপত্তা ও মানবিক আচরণের ক্ষেত্রেও একই ধরনের রাষ্ট্রীয় বৈষম্য ও অবহেলার মধ্যে দিনাতিপাত করেন তারা। ন্যায় বিচারের ক্ষেত্রেও বার বার তাদের বঞ্চিত করা হচ্ছে। এটা বর্তমান অন্তবর্তী সরকারের ঘোষিত লক্ষ্যের সঙ্গে সঙ্গতিহীন, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার অভুত্থানের মধ্য দিয়ে অর্জিত সাফল্যের সঙ্গেও অসামঞ্জস্যপূর্ণ।

খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে ১৯ ও ২০ সেপ্টেম্বর যে হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, তার সঙ্গে লুট, সরকারি ও বেসরকারি সম্পদ ধংস এ সবের উচ্চ পর্যায়ের স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ তদন্তের পাশাপাশি পাঁচ দাবি করেন বিশিষ্টজনরা। তাদের দাবিগুলো হলো—

১) খাগড়াছড়িত ও রাঙামাটিতে ৪ জন আদিবাসী হত্যাসহ সব ঘটনার সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ, উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত করতে হবে। ভিডিও ফুটেজে চিহ্নিত দোষী ব্যক্তিদের দ্রুত গ্রেফতার করে আইন অনুযায়ী কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

২) নিহত ৪ পাহাড়ি আদিবাসী পরিবারকে পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি যে সব বাড়িঘর লুটপাট করা হয়েছে এবং দোকান পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে তাদেরও যথাপোযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

৩) পাহাড়ে শান্তি ও সমঝোতার পরিবেশ বজায় রাখতে অপ্রকাশ্যে পাহাড়ি-বিরোধী কোনও বহিরাগত জনগোষ্ঠীকে রাষ্ট্রীয় কোনও এজেন্সি বা মহল থেকে মদদ বা সহায়তা দেওয়া অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।

৪) সব অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়নে একটি সময়নির্দিষ্ট রোডম্যাপ তৈরি করতে হবে, যেটি বৈষম্যমুক্ত ’নতুন বাংলাদেশের’ স্বপ্ন বাস্তবায়নে অপরিহার্য।

৫) সাম্প্রতিক হত্যাকাণ্ড, লুট, অগ্নিসংযোগ এবং অন্যান্য অপরাধের পুনরাবৃত্তি রোধে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে অবিলম্বে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর সব অংশীজন এবং দেশের উদ্বিগ্ন নাগরিক সমাজের উচ্চ প্রতিনিধিদের নিয়ে গোলটেবিল আলোচনার আয়োজন করতে হবে। সেই আলোচনার সুপারিশের ভিত্তিতে স্থায়ী শান্তির লক্ষ্যে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন-

মানবাধিকার কর্মী ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা সুলতানা কামাল; ‘নিজেরা করি’র সমন্বয়ক খুশি কবীর; সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাড. জেড আই খান পান্না; টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান; সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটির উপাচার্য পারভীন হাসান; সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাড. সুব্রত চৌধুরী, অ্যাড. মিনহাজুল হক চৌধুরী, ড. ফস্টিনা পেরেইরা; ব্যারিস্টার আশরাফ আলী, ব্যারিস্টার শাহদাত আলম, অ্যাড. নাজমুল হুদা, অ্যাড. মো: আজিজুল্লাহ ইমন; ‘ব্লাস্ট’-এর অনারারি নির্বাহী পরিচালক ব্যারিস্টার সারা হোসেন; সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট তবারক হোসেন; ‘নারী পক্ষ’র সদস্য শিরিন পারভীন হক; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সামিনা লুৎফা, ড. সুমাইয়া খায়ের, ড. শাহনাজ হুদা, রোবায়েত ফেরদৌস, ড. খাইরুল ইসলাম চৌধুরী, জোবায়দা নাসরিন ও গীতি আরা নাসরিন; আলোকচিত্রী ড. শহিদুল আলম; ‘বেলা’র ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী তাসলিমা ইসলাম শমি; লেখক রেহনুমা আহমেদ; ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে ফেরদৌস আজিম এবং এএলআরডি’র নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা।

এতে আরও স্বাক্ষর করেছেন বিএনডব্লিউএলএ‘র নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট সালমা আলী; লেনচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র রিসার্সার সাদাফ নুর; জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মির্জা তাসলিম সুলতানা; গবেষক ও অধিকার কর্মী রোজিনা বেগম; চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সহযাগী অধ্যাপক মাইদুল ইসলাম; ভিজিটিং প্রফেসর লন্ডন স্কুল অফ ইকোনোমিক্স অ্যান্ড পলিটিক্যাল সায়েন্সের ড. স্বপন আদনান; কাপেং ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক পল্লব চাকমা; বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনিন্দ্র কুমার নাথ; কোস্ট ট্রাস্টের নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম চৌধুরী; নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নোভা আহমেদ; ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ফারহা তানজীম তিতিল; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক তাসনীম সিরাজ মাহবুব; নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন; এমএসএফ’র প্রধান নির্বাহী অ্যাডভোকেট সাইদুর রহমান; মানবাধিকার কর্মী দীপায়ন খীসা; আদিবাসী অধিকার কর্মী হানা শামস আহমেদ এবং সাঙ্গাত কোর গ্রুপের মুক্তাশ্রী চাকমা।

  • খাগড়াছড়ি
  • #