গত এক সপ্তাহে (১ থেকে ৭ অক্টোবর) দেশব্যাপী র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) এবং পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট ৭ হাজারের বেশি মানুষকে গ্রেপ্তার করেছে। এদের মধ্যে বেশিরভাগই আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী এবং তাদের বিরুদ্ধে ছাত্র আন্দোলনে সহিংসতা চালানোর অভিযোগসহ মাদক পাচার, হত্যা, ডাকাতি ও অন্যান্য অপরাধের অভিযোগ রয়েছে। পুলিশ সদরদপ্তর থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
মহানগর পুলিশের ৮টি ইউনিট, ৯টি রেঞ্জ (রেলওয়ে রেঞ্জসহ) এবং র্যাবের গ্রেপ্তারের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত সপ্তাহে দেশে মোট ৭,০১৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ১,২৪৯ জনকে গ্রেপ্তার হয়েছে চট্টগ্রামে। তার পরেই দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১,০৩৩ জনকে ঢাকা রেঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তৃতীয় অবস্থানে রাজশাহী রেঞ্জ, যেখানে মোট ৮৬৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এদিকে, মেট্রোপলিটন পুলিশের ইউনিটগুলোর মধ্যে সর্বাধিক ৭৬৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ। র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) দেশব্যাপী ৪০০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। ৩ অক্টোবর সর্বাধিক ১,২৫৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
সহকারী পুলিশ মহাপরিদর্শক (এআইজি মিডিয়া) এনামুল হক বলেন, প্রাথমিকভাবে আমরা অনেক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছি কারণ শত শত পুলিশ স্টেশন পুড়ে গেছে এবং ভাঙচুর হয়েছে। অনেক যানবাহনও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কিন্তু এখন মাঠ পর্যায়ের নতুন নেতৃত্ব আসায়, সেই পরিস্থিতি থেকে পুনরুদ্ধার করা হচ্ছে। বর্তমান গ্রেপ্তার পরিস্থিতি সম্পর্কে এনামুল হক জানান, অপরাধের হার বেশি এমন এলাকায় গ্রেপ্তার বাড়ছে। তবে অস্ত্র উদ্ধার করা ছাড়া কোনো বিশেষ অভিযান চলমান নেই।
সংশ্লিষ্ট সূত্র অনুযায়ী, অক্টোবরের প্রথম সাত দিনে ঢাকায় প্রতিদিন গড়ে ১০০ জনের বেশি গ্রেপ্তার হয়েছে। পূর্বের আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে, রাজধানীতে বিভিন্ন মামলায় প্রতিদিন ২৫০ থেকে ৩০০ জন অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হতো। রাজনৈতিক আন্দোলন বা বিশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এই গ্রেপ্তারের সংখ্যা বাড়তো। সেই সময়ে রাজনৈতিক নেতাদের এবং কর্মীদের বাইরে খুব কম সংখ্যক অভিযুক্ত গ্রেপ্তার হতো।
কারা গ্রেপ্তার হচ্ছেন?
গ্রেপ্তারের সাথে জড়িত বিভিন্ন সূত্রের সাথে কথা বলে জানা যায়, ছাত্র আন্দোলনের সময় আহতদের করা মামলায় গুরুতর অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এই মামলাগুলোতে পূর্ববর্তী সরকারের অনেক মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, গুরুত্বপূর্ণ নেতা এবং সাবেক সরকারি কর্মকর্তাদের আসামি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে অনেকে বড় অপরাধ ও দুর্নীতির অভিযোগের সম্মুখীন হয়েছেন।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে কমপক্ষে ২২২টি মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং এর মধ্যে ১৯০টি হত্যা মামলা। অধিকাংশ মামলায় শেখ হাসিনার পাশাপাশি তার সরকারের সাবেক মন্ত্রী, আওয়ামী লীগ নেতা, সাবেক আইজিপি, সাবেক ডিএমপি কমিশনার এবং বিভিন্ন স্তরের পুলিশ কর্মকর্তা ও সাবেক কর্মকর্তাদেরও আসামি করা হয়েছে।
এখন পর্যন্ত মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও সাংবাদিকসহ ৪৫ জন শীর্ষ ব্যক্তিত্ব গ্রেপ্তার হয়েছেন। তাদের মধ্যে সাবেক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী এবং নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, সাবেক মুখ্য সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান রোববার (৬ অক্টোবর) গ্রেপ্তার হন। সাবেক সংসদ সদস্য ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ শনিবার (৫ অক্টোবর) গ্রেপ্তার হন। এছাড়াও, গত এক সপ্তাহে কয়েকজন সাবেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য এবং সাবেক সরকারি কর্মকর্তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।