চট্টগ্রোমের জে এম সেন হলের পূজামঞ্চেে ইসলামি গান পরিবেশন নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে। সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডওতে দেখা যায়, একদল যুবক ইসলামি গান গাইছেন। এতে ক্ষুব্ধ হন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। এ ঘটনায় মামলার নির্দেশ দিয়েছেন জেলা প্রশাসক।
ঘটনাটি ঘটেছে নগরের রহমতগঞ্জের জে এম সেন হলে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে। চট্টগ্রাম মহানগনর পূজা উদযাপন পরিষদের আয়োজনে চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় মণ্ডপ এই জে এম সেন পূজামণ্ডপ। সেখানেই এমন ঘটনায় উপস্থিত সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বিস্ময় প্রকাশ করেন। এই গানের ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে রাতে প্রশাসন দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দেয়।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, শুধু মুসলমানের লাগি আসেনিকো ইসলাম/ বিশ্ব মানুষের কল্যাণে স্রষ্টার এই বিধান’ গান গাইছে ছয় তরুণ। এ ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর ফেসবুকে এ নিয়ে শুরু হয় তুমুল আলোচনা। কিছুক্ষণ পর এ সম্পর্কিত আরেকটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে, যেখানে ওই গানটি নেই। এ নিয়ে আলোচনা ও তর্ক-বিতর্ক শুরু হয়। এক পক্ষ প্রথম ভিডিওকে এডিটেড বা সম্পাদিত বলে আখ্যা দেয়। অন্যপক্ষ দ্বিতীয়টিকে অসম্পূর্ণ বলে মন্তব্য করে।
এদিকে, ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ওই অনুষ্ঠানের ভিডিও যাচাই করে স্বাধীন ফ্যাক্ট চেকিং প্রতিষ্ঠান রিউমার স্ক্যানার তাদের ফেসবুক পেজে জানিয়েছে, পূজামণ্ডপে গানের ভিডিওটি আসল, এডিটেড নয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বৃহস্পতিবার উপস্থাপক ও পূজা উদযাপন কমিটির যুগ্ম সম্পাদক সজল দত্ত চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমির সদস্যদের মঞ্চে ডাকেন। মঞ্চে ওঠেন ৬-৭ জন তরুণ। তাঁরা সেখানে দুটি গান পরিবেশন করেন। প্রথম পরিবেশন করেন, ‘গেরামের নওজোয়ান, হিন্দু মুসলান’ গানটি। এর পর তারা ‘শুধু মুসলমানের লাগি আসেনিকো ইসলাম/ বিশ্ব মানুষের কল্যাণে স্রষ্টার এই বিধান’ ইসলামি গানটি পরিবেশন করলে উপস্থিত সকলে হকচকিয়ে যান। এই গানের একটা লাইন ছিল-‘বিশ্ব মানুষের মুক্তির শেষ পথ বিপ্লব, ইসলামী বিপ্লব’। গানটির গীতিকার চৌধুরী আবদুল হালিম। পরে উপস্থিত নেতৃবৃন্দ ও কয়েকজন বিএনপি নেতার হস্তক্ষেপে তাঁরা মঞ্চ ত্যাগ করেন। সামাজিক মাধ্যমে ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়লে এবং এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হলে রাতেই চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসন ও পুলিশের পদস্থ কর্মকর্তারা পূজা মণ্ডপে ছুটে যান। তাঁরা পূজা উদযাপন কমিটির নেতৃবৃন্দের সাথে বৈঠক করেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত ভিডিওটি শেয়ার করে অনেকে দাবি করেন, মঞ্চে গানটি পরিবেশনকারীরা ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাংস্কৃতিক সংগঠন পাঞ্জেরীর সদস্য। তবে দলটি এমন দাবি নাকচ করেছে।
কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমি নামের একটি সাংস্কৃতিক সংগঠনের ছয় সদস্য অনুষ্ঠানে দুটি গান পরিবেশন করেন। তার মধ্যে একটি গান ছিল ‘শুধু মুসলমানের লাগি আসেনিকো ইসলাম’। এ সময় অনুষ্ঠানস্থল থেকে অনেকে উঠে চলে যান। সংগঠনটি জামায়াতে ইসলামী সমর্থিত বলে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন দক্ষিণ পুলিশের উপ-কমিশনার লিয়াকত আলী জানান, পূজা উদযাপন পরিষদের অনুমতি নিয়ে তারা সেখানে সংগীত পরিবেশন করেছে। তা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হইচই হলেও চট্টগ্রামে কোনো সমস্যা নেই।
তবে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম রাতেই ওই পূজামণ্ডপে গিয়ে এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তারের আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি বলেন, দোষীদের বিরুদ্ধে রাতের মধ্যে মামলা করা হবে এবং তাদের যেকোনোভাবেই হোক আইনের আওতায় আনা হবে। অনুষ্ঠান পরিচালনায় যারা চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমিকে মঞ্চে ডেকেছে, তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমির সভাপতি সেলিম জামান সংবাদমাধ্যমকে বলেন, পূজা উদ্যাপন পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক সজল দত্তের আমন্ত্রণেই সেখানে সংগীত পরিবেশন করতে গেছেন তাঁরা। সেখানে দুটো গান পরিবেশন করা হয়েছে, দুটোই সম্প্রীতির সংগীত। কেউ কেউ ভিডিও এডিট করে অপপ্রচার চালাচ্ছে।
সজল দত্তের সঙ্গে এ বিষয়ে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে পূজা উদ্যাপন পরিষদ সূত্র বলছে, সন্ধ্যায় অনুষ্ঠান চলাকালে কয়েকজন তরুণ এসে দেশাত্মবোধক গান পরিবেশন করবেন বলে মঞ্চে ওঠেন। তাঁরা দুটি গান পরিবেশন করেন। পরে তাঁরা ‘ধন্যবাদ’ দিয়ে নেমে চলে যান।
সার্বিক বিষয়ে চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদপাপন পরিষদের সভাপতি লায়ন আশীষ ভট্টাচার্য্য ইনডিপেনডেন্ট ডিজিটালকে বলেন, ঘটনার সময় তাঁরা পাশের অফিসে সভা করছিলেন। এ সময় হঠাৎ ইসলামি সংগীত গেয়ে ওঠেন কয়েকজন। সে সময় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক অনুষ্ঠান পরিচালনা করছিলেন। এই ঘটনায় তাঁরা বিব্রত। যুগ্ম সম্পাদক সজল দত্তকে বহিষ্কার করা হয়েছে।