মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডুতে বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন আরাকান আর্মি ও জান্তা সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে বেশ কিছুদিন ধরে যুদ্ধের তীব্রতা বেড়েছে। সংঘর্ষে ব্যবহার হচ্ছে মর্টারশেল ও ভারি গোলা। আকাশপথে যুদ্ধ বিমান থেকেও হামলা হচ্ছে। এতে টেকনাফ সীমান্তে বসবাসকারীদের মাঝে বিরাজ করছে আতঙ্ক। তবে বিকট শব্দে কাঁপছে সাবরাং সীমান্ত এলাকা।
বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত গোলাগুলি-বিস্ফোরণের পাশাপাশি সীমান্তের আকাশ পথে যুদ্ধবিমান দেখেছে সীমান্তের বাসিন্দারা। এই চলমান ওপারের যুদ্ধে সাবরাং সীমান্তের ১০-১৫টি ইট-মাটির ঘরের বিভিন্ন অংশে ফাটল ধরেছে বলেও দাবি স্থানীয়দের।
প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, টেকনাফ শহর থেকে ছয় কিলোমিটার দূরে সীমান্তের অবস্থান সাবরাং ইউনিয়নের আচারবনিয়া পাড়া ও ডেইল্ল্যাবিল গ্রামের। সীমান্তের কাছাকাছি দেড় কিলোমিটারের ঠিক ওপারে মিয়ানমারের নুরুল্ল্যা পাড়া। সেখানে যুদ্ধ চলছে। সীমান্তের এপারে এই দুই গ্রামের সীমান্তের কাছাকাছি ছয় হাজারের মানুষের বসতি। সম্প্রতি মিয়ানমারের চলমান যুদ্ধে ১০-১৫টি ঘরবাড়ি ফাটলের ঘটনা ঘটে। তবে বেশির ভাগই বাড়ি-ঘরগুলো ছিল জরাজীর্ণ।
স্থানীয় অধিবাসী আমিনা খাতুন বলেন, মিয়ানমারে বিস্ফোরণের কম্পনে আমার শো-পিস থেকে নিচে পড়ে থালা-বাসন ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। বাড়ির আলমারির গ্লাসও ভেঙে গেছে। মনে হচ্ছে, আমার বাড়ির ওপর দিয়ে গুলিবর্ষণ করছে। পাঁচ-ছয় মাস ধরে এরকম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছি আমরা।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মোহাম্মদ শরীফ জানান, মিয়ানমারের মংডু শহরের নুরুল্ল্যা পাড়ার পশ্চিম পাশে নাফ নদী। এর প্রস্থ তিন কিলোমিটার। এই নদীর পাড়েই সাবরাং ইউনিয়নের আচারবনিয়া ও ডেইল্যাবিল গ্রাম। মিয়ানমারের বিকট বিস্ফোরণের শব্দে কাঁপছে এই দুই গ্রাম। গ্রাম দুটির অন্তত ১৫টি মাটির দেয়ালের বাড়িতে ফাটল হয়েছে বলে স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন। তিনি আরো জানান, সীমান্তে মর্টারশেলের বিকট শব্দে ঘুমানো যায় না। রাত হলে স্থানীয়দের মাঝে আতঙ্ক বেড়ে যায়।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে আমরা শুনেছি, সীমান্তের কয়েকটি বাড়ি-ঘরে ফাটল ধরেছে। তবে সেটি কয়েক মাস ধরে ফাটল দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আসলে মিয়ানমার সীমান্তে সাম্প্রতিক সময়ে পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে যাচ্ছে। আকাশ পথে যুদ্ধ বিমান দিয়েও বড় যুদ্ধ চলছে সেখানে। নাফনদী থেকে প্রায় সময় সেটি লক্ষ্য করা যায়। এখন আসলে বিস্ফোরণ কারণে ঘরবাড়িগুলো ফাটল হয়েছে কিনা, সেটি বিশেষজ্ঞের মতামতের একটা বিষয় আছে।
তিনি আরো বলেন, আমরা বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। এ নিয়ে আমাদের বিজিবি ও কোস্টগার্ডও কাজ করছে। যদি কোনো রির্সাচ প্রতিষ্ঠান সেটি নিয়ে কাজ করলেও বিষয়টি আরো পরিষ্কার হওয়া যেতো। তবে আমরা সীমান্তের লোকজনের খোঁজখবর রাখছি।
সূত্র : কালের কণ্ঠ