বরিশালের বানারীপাড়ায় অতিশয় ভাঙনকবলিত সন্ধ্যা নদীর বালু তোলা থেকে আদায়কৃত টাকার ভাগবাটোয়ারা নিয়ে বিএনপি নেতার একটি তালিকা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এ নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। চলছে আলোচনা-সমালোচনা।
বানারীপাড়া উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব রিয়াজ মৃধা স্বাক্ষরিত এ তালিকা সম্প্রতি ভাইরাল হয়। বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করে রিয়াজ মৃধা বলেন, সন্ধ্যা নদী থেকে বালু উত্তোলন করত মেসার্স ফাতেমা এন্টারপ্রাইজ। গত ৫ আগস্টের পর তারা বালু উত্তোলনের জন্য আর আসেনি। পরে ফাতেমা এন্টারপ্রাইজের সঙ্গে বানারীপাড়া পৌর বিএনপির সদস্য সচিব হাবিবুর রহমান জুয়েল চুক্তি করেন। ওই চুক্তি অনুযায়ী বালু উত্তোলন করে বিক্রি করা হয়। লাভের টাকা ১৭ বছর বঞ্চিত বিএনপির নেতাকর্মীসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনে ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। মোট ১ মাস ১৭ দিনের লাভের টাকা ভাগবাটোয়ারা করা হয়েছে। বরিশালের বটতলায় একটি হোটেলে বসে এ ভাগবাটোয়ারার তালিকা করা হয় বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
ছড়িয়ে পড়া তালিকায় ওই বিএনপি নেতা প্রভাবশালী কাউকে উদ্দেশে করে লিখেছেন, ‘নেতা, আমি যে টাকা পাই আমার এখানে যারা সব সময় থাকে তাদের অধিকাংশকে ১ হাজার/২ হাজার টাকা করে দিয়েছি, তাহলে দয়া করে বিবেচনা করে দেখুন আমি একা বালুর টাকা খাই কিনা? তাহলে কেন আমার বিরুদ্ধে এত যড়যন্ত্র? হ্যাঁ, আমার দোষ, দলীয় লোকজন যে কাজে আসে সে কাজগুলো করার চেষ্টা করি এবং আপনার নির্দেশ পালন করি। আল্লাহ হাফেজ, ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন।’ নিচে উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব রিয়াজ মৃধার স্বাক্ষর, নাম ও দলীয় পদবি রয়েছে।
তালিকায় মোট ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা ভাগবাটোয়ারার হিসাব দিয়েছেন রিয়াজ। তবে তিনি পৌর বিএনপির সদস্য সচিব হাবিবুর রহমান, উপজেলা যুবদলের সভাপতি সুমন হাওলাদার ও চাখারের যুবদল নেতা সনেট তালুকদার কত টাকা নিয়েছেন, তা উল্লেখ করেননি। এ বিষয়ে রিয়াজ বলেন, নেতাকর্মীকে ভাগ করে দেওয়ার পর লাভের টাকা যা ছিল, বালুমহাল নিয়ন্ত্রণ করায় তারা চারজন তা ভাগ করে নিয়েছেন।
তালিকায় প্রথম উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক শাহ আলম মিঞার নাম রয়েছে। তাঁর জন্য বরাদ্দ ৫০ হাজার টাকা। এ ছাড়া পৌর বিএনপির আহ্বায়ক নান্না হাওলাদারের জন্য ১০ হাজার, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুস সালামের ২৫ হাজার, বিএনপি নেতা রুহুল মল্লিকের ১০ হাজার, জাহাঙ্গীরের ৫ হাজার, চাখার ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আলমগীর মেম্বারের ৫ হাজার, চাখারের বিএনপি নেতা সেলিম বালীর ১০ হাজার, কুদ্দুস ফকিরের ৫ হাজার, সৈয়দকাঠি ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি হানিফ হাওলাদারের ৫ হাজার, সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম খানের ৫ হাজার, সাংগঠনিক সম্পাদক আহম্মদ মীরার ৫ হাজার, ১ নম্বর ওয়ার্ড সভাপতি আলমগীর হোসেনের ৫ হাজার, থানা যুবদলের ১০ হাজার, পৌর যুবদলের ১০ হাজার, থানা ও পৌর ছাত্রদলের ১০ হাজার, থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের ১০ হাজার, পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের ১০ হাজার, থানা ও পৌর শ্রমিক দলের ৫ হাজার, থানা কৃষক দলের ৫ হাজার, থানা মৎস্যজীবী দলের ৫ হাজার ও সাংবাদিকের জন্য ২০ হাজার টাকা।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সন্ধ্যা নদী থেকে বালু উত্তোলনের ইজারা পাওয়া প্রতিষ্ঠান গত ৫ আগস্টের পর আসেনি। এর পর থেকে বালু উত্তোলনের বিষয়টি বিএনপি নেতারা নিয়ন্ত্রণ করে প্রতিদিন কয়েক লাখ টাকা সেখান থেকে নেন। ছড়িয়ে পড়া তালিকা প্রতিদিনের হিসাব।
বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন-২০১০ এ উল্লেখ আছে- বালু ও মাটি উত্তোলন বা বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে ড্রেজিংয়ের ফলে কোনো নদীর তীর ভাঙনের শিকার হয় কিংবা নদীর ভূ-প্রাকৃতিক পরিবেশ, প্রতিবেশ, জীববৈচিত্র্য, মৎস্য, জলজ ও স্থলজ প্রাণী, ফসলি জমি বা উদ্ভিদ বিনষ্ট হয় বা হওয়ার আশঙ্কা থাকেে এমন নদী থেকে বালু উত্তোলন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ এবং আইনত অপরাধ ।
এক্ষেত্রে সন্ধ্যা নদীর অব্যাহত ভাঙনে কৃষিজমিসহ সাধারণ মানুষের বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলুপ্ত হচ্ছে। তবে সাধারণ মানুষ জানিয়েছেন, কীভাবে ভাঙনপ্রবণ সন্ধ্যা নদী থেকে বালু তুলছেন- তার জবাব স্থানীয় প্রশাসন দিতে পারবে। তবে তারা কৃষিজমি ও বসতভিটা হারিয়ে দিন দিন নিঃস্ব হচ্ছেন।
বানারীপাড়া সন্ধ্যা নদীর বালুমহাল ইজারাদার মনির হোসেনের মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় তাঁর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। খুদেবার্তা দিলেও সাড়া মেলেনি।
বানারীপাড়ার ইউএনও অন্তরা হালদার জানান, বালু তুলতে না পারার বিষয়ে বালুমহাল ইজারাদার কোনো অভিযোগ করেননি। এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।