সারজিস ও হাসনাতের রিট দুটি ‘কার্যতালিকা থেকে বাদ’ দিয়েছেন একটি হাইকোর্ট বেঞ্চ

: যথাসময় ডেস্ক
প্রকাশ: ২ মাস আগে

নির্বিচারে মানুষ হত্যা, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংসসহ নানান অভিযোগে দেশের ১১টি দলের রাজনৈতিক কার্যক্রম বন্ধসহ হাইকোর্টে দুটি আলাদা রিট দায়ের করা হয়েছে। রিট দুটিতে উঠে এসেছে নানান সাংবিধানিক প্রশ্ন। ফলে আবেদন দুটি শুনতে অপারগতা জানিয়েছে একটি হাইকোর্ট বেঞ্চ।

এর আগে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম, মো. আবুল হাসনাত ও হাসিবুল ইসলাম বাদী হয়ে পৃথক এ দুটি রিট দায়ের করেন। রিটকারীদের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন আহসানুল করিম।

সোমবার (২৮ অক্টোবর) বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি মুবিনা আসাফের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চের কার্যতালিকায় মামলা দুটি যথাক্রমে ২৮৩ ও ২৮৪ নম্বর ক্রমিকে ছিল। তবে শুনানির জন্য নির্ধারিত থাকলেও এ বিষয়ে অপারগতা প্রকাশ করেন হাইকোর্টের ওই বেঞ্চ।

এদিন রাষ্ট্রপক্ষে আদালতে উপস্থিত ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মাহফুজ বিন ইউসুফ, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল শফিকুর রহমান ও ব্যারিস্টার মহিউদ্দিন হানিফ।

ওয়েবসাইট থেকে দেখা গেছে, মামলা দুটির ক্রমিক ও বাদী-বিবাদীর নামের সামনের ঘরে ‘আউট’ শব্দ লেখা রয়েছে। যেটি মূলত ‘আউট অব লিস্ট’ বা কার্যতালিকা থেকে বাদ দেওয়াকে বুঝানো হয়ে থাকে।

রিট মামলা দুটি কার্যতালিকা থেকে বাদ দেওয়ার বিষয়ে কথা হয় সংশ্লিষ্ট কোর্টের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মাহফুজ বিন ইউসুফের সঙ্গে। তিনি  জানান, মামলা দুটির শুনানি না করে আদালত কার্যতালিকা থেকে বাদ দিতে অনুরোধ করেছেন। আদালত রিটকারীর আইনজীবীর উদ্দেশ্যে বলেছেন, রিট দুটিতে অনেক সাংবিধানিক ও গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন-বিষয় উঠে এসেছে। যেহেতু অনেক সাংবিধানিক বিষয় জড়িত তাই আবেদন দুটি এখতিয়ারাধীন সিনিয়র বেঞ্চ (হাইকোর্টের) আছে, সেখানে শুনানি করলে ভালো হয়।

আদালতের বক্তব্যে সন্তোষ প্রকাশ করেন রিটকারীর আইনজীবী। পরে মামলাটি বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি মুবিনা আসাফের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চের কার্যতালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়।

সুপ্রিম কোর্টের কজ লিস্ট থেকে পাওয়া তথ্য মতে, আবেদন দুটি বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও বিচারপতি শিকদার মাহমুদুর রাজীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) শুনানির জন্য কার্যতালিকার ২০৮ ও ২০৯ নম্বর ক্রমিকে রাখা হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সুপ্রিকোর্টের এক আইনজীবী বলেন, আদালত কোনও মামলা না শুনতে চাইলে তার অপারগতা প্রকাশের সুযোগ রয়েছে। যেহেতু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রিট দুটিতে রয়েছে সেহেতু জ্যেষ্ঠ বিচারপতিদের সমন্বয়ে গঠিত কোনও হাইকোর্ট বেঞ্চে এর শুনানি হতে পারে। দায়ের করা রিট দুটিতে হাইকোর্টের কাছে পৃথক পৃথক আরজি চাওয়া হয়েছে।

প্রথম রিটে নিষিদ্ধ চাওয়া হয়েছে ১১টি দলকে। সে দলগুলো হল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি (এরশাদ), জাতীয় পার্টি (আনোয়ার হোসেন মঞ্জু), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন, গণতন্ত্রী দল, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বিকল্প ধারা বাংলাদেশ, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), সাম্যবাদী দল (দীলিপ বড়ুয়া) এবং বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ।

দলগুলোর বিরুদ্ধে নির্বিচারে মানুষ হত্যা, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংসসহ বেশকিছু অভিযোগ যুক্তি হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। ফলে তারা যেন পরবর্তী রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা ও নির্বাচনে অংশ নিতে না পারে সে বিষয়ে রিটে রুল এবং নির্দেশনা জারির আবেদন জানানো হয়েছে।

দ্বিতীয় রিট আবেদনে বিগত তিনটি নির্বাচন (২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪) বাতিল ও অবৈধ ঘোষণা চাওয়া হয়েছে। এছাড়াও ওই নির্বাচনগুলোতে যারা সংসদ সদস্য হয়ে বেতন-ভাতাসহ যেসব সুবিধা ভোগ করেছেন তা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা করার নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।

দিনভর ১১টি দল নিষিদ্ধসহ সারজিস ও হাসনাতের রিট দুটি দায়েরের বিষয়ে হেয়ার রোডে ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধের ব্যাপারে সরকারের অবস্থান জানতে চেয়ে প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদারকে প্রশ্ন করা হয়।

প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, সরকার এখনও এসব বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি। সরকার শুধু ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং জানানো হয়েছে। আর কোনও রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে সরকারের এই মুহূর্তে কোনও সিদ্ধান্ত নেই।

সূত্র : বাংলা ট্রিবিউন, রিপোর্টার : বাহাউদ্দিন ইমরান

  • ‘কার্যতালিকা থেকে বাদ’ হাইকোর্ট বেঞ্চ
  • রিট
  • সারজিস-হাসনাত
  • #