কেশবপুরে মাচা পদ্ধতিতে পটল চাষে ঝুঁকে পড়েছে চাষিরা। পটল একটি প্রধান গ্রীষ্মকালীন সবজি। উষ্ণ ও আদ্র জলবায়ু ও উর্বর মাটি পটল চাষের জন্য উত্তম। পটোল র্দীর্ঘমেয়াদি ফসল এবং দাম ও ভাল পাওয়ায় কৃষকরা দিন দিন পটল চাষে বেশি আগ্রহী হয়ে উঠেছে। মাঠের চারিদিকে শুধু সবুজ পটল খেত।
মাটি থেকে দুই-তিন ফুট উঁচুতে তার-বাঁশের তৈরি সারি সারি মাচার উপরে নিচে ঝুলছে অসংখ্য পটল। প্রতিদিন সকাল ও বিকেলে এসব পটোল খেত পরিচর্যায় কৃষকরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। আবার ভোর হলেই চাষিরা খেত থেকে সপ্তাহে একদিন পটল তুলে বস্তায় ভরে ভ্যান বা অটোযোগে নিয়ে যাচ্ছেন আঠার মাইল বাজার, কেশবপুর বাজারসহ যশোর, খুলনার মোকামে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার পটোলের বাম্পার ফলনের পাশাপাশি দামও বেশি হওয়ায় অর্থনৈতিক মুক্তির পথ খুঁজে পেয়ে কৃষকরা দারুন খুশি। এদৃশ্য কেশবপুর উপজেলার আলতাপোল চারের মাথার মাঠজুড়ে বিরাজ করছে। প্রতিবছর ১৫ অক্টোবর থেকে ১৫ নভেম্বর মাসে পটল চাষ শুরু হয়। একবার চাষ করলে একাধারে ২-৩ বছর পর্যন্ত রাখা যায়। জীবনকাল বেশি ও রোগবালাই কম থাকায় কৃষকরা এ চাষে বেশি আগ্রহী হয়ে আার্থিকভাবে লাভবান হন।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট পটলের দুটি জাত আবিষ্কার করেছে। জাত দুটো উচ্চফলনশীল ও রোগবালাই সহ্য করতে পারে সেগুলো হলো ‘বারি পটল-১’ ও ‘বারি পটল-২’। হেক্টরপ্রতি ফলন ৩০ থেকে ৩৮ টন।
এলাকার চাকরীজীবী জি. এম. মনিরুজ্জামান জানান, তিনি এ মৌসুমে ১২ শতক জমিতে পটলের আবাদ করেছেন। পটল একটি দীর্ঘমেয়াদি ফসল। আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া যায়। এ কারণে তার এলাকার কৃষকরা পটল চাষে ঝুঁকে পড়েছেন। ভালো ফলন হওয়ায় তিনি এপর্যন্ত এক লাখ টাকার পটল বিক্রি করেছেন।
কৃষক জি.এম মনিরুজ্জামান ১২ শতক, হাবিবুর রহমান ১০ শতক, তুহিন ২২ শতক, আমিনুর রহমান ১০ শতক, আতিয়ার মোড়ল ১০ শতক ও আবুল মোড়ল ৮ শতকজমিসহ এলাকার প্রায় প্রতিটি বাড়ির কৃষকরা মাঠে পটল আবাদ করেছেন। এ বছর বৃষ্টির পরিমাণ বেশি হলেও পটলের কোনো ক্ষতি না হওয়ায় গাছ যেমন সবুজ ও সতেজ তেমন ফলনও বাম্পার হয়েছে। সপ্তাহে শতকে ২০ থেকে ২৫ কেজি পটল তোলা যাচ্ছে। বন্যার কারণে এবার পটলের বাজার দরও বেশি। তাদের এলাকার অনেক ছাত্র এখন পটল আবাদ করে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছে।
স্বাস্থ্যকর্মী হাবিবুর রহমান বলেন, পটলের জন্য উত্তম বেলে দো-আঁশ, দো-আঁশ মাটি যা আমাদের এখানে আছে। এছাড়া উঁচু ও মাঝারি উঁচু, বন্যা মুক্ত এবং সুষ্ঠু পানি নিষ্কাশনযুক্ত হওয়ায় এ অঞ্চলের কৃষকরা এ চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। বেলে মাটিতেও পটল জন্মে, তবে ফলন কম হয়।
অনার্স পড়ুয়া শিক্ষার্থী তুহীন হোসেন জানান, তাদের এলাকা সবজি চাষের জন্যে বিখ্যাত। বর্তমান কেশবপুর বাজারে প্রতিকেজি পটল ৫০ থেকে ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা অনাথ বন্ধু দাস বলেন, গত বছরের তুলনায় এ বছর বেশি জমিতে পটল আবাদ হয়েছে। ওই এলাকার মাটি সবজি চাষের উপযোগী। কৃষকদের লাভবান করতে দিকনির্দেশনাসহ সর্বাত্মকভাবে সহযোগিতা করা হচ্ছে। পটল চাষে খরচ কম, লাভ বেশি হয়ে থাকে। যে কারণে দিন দিন পটলের আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে।