রাজধানীর কাকরাইল মসজিদ ও টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমার ময়দানের যাবতীয় কার্যক্রম ওলামায়ে কেরামের তত্ত্বাবধানে করাসহ ৯ দফা দাবি জানিয়েছে ওলামা মাশায়েখ বাংলাদেশ। এ ব্যাপারে অন্তর্বর্তী সরকারের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেছেন তারা।
মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ওলামা মাশায়েখ বাংলাদেশের উদ্যোগে ‘তাবলীগ, কওমি মাদ্রাসা ও দ্বীন রক্ষার্থে’ এক মহাসম্মেলনে ঘোষণাপত্রে এ দাবিগুলো তুলে ধরা হয়। ঘোষণাপত্র পাঠ করেন মাওলানা মাহফুজুল হক।
১. এ দেশে কওমি মাদ্রাসাগুলো দারুল উলুম দেওবন্দের অনুকরণে শতাব্দীকাল ধরে দীনি শিক্ষা-কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। বিগত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের আমলে বিভিন্ন পর্যায়ে প্রশাসন এবং সরকারদলীয় লোকজন নানাভাবে হয়রানি ও হস্তক্ষেপ করেছিল। আমরা লক্ষ্য করছি যে, ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পরও কওমি মাদ্রাসাগুলোর উপর ওই ফ্যাসিস্ট সরকারের ঘাপটি মেরে থাকা একটি বিশেষ মহল সুকৌশলে হস্তক্ষেপের পাঁয়তারা করে চলছে। আজকের মহাসম্মেলন থেকে আমরা এ জাতীয় সকল হয়রানি ও হস্তক্ষেপ থেকে বিরত থাকার জোর দাবি জানাচ্ছি।
২. আজকের এই মহাসম্মেলন জোর দাবি জানাচ্ছে যে, সাধারণ শিক্ষা সিলেবাসের সর্বস্তরে ধর্মশিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করতে হবে।
৩. বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে মজলুম আলেম-ওলামা ও তৌহিদি জনতার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সকল মিথ্যা মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে।
৪. ২০১৩ সালের শাপলা চত্বরে রাতের আঁধারে সারাদেশ থেকে আগত নবীপ্রেমিক নিরীহ ছাত্র-জনতা ও মুসল্লিদের উপর বর্বরোচিত ও নৃশংস গণহত্যার দোষীদেরকে অবিলম্বে শাস্তির আওতায় এনে বিচার কার্যকর করতে হবে এবং সারাদেশের আলেম, মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ও সাধারণ জনতার উপর দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে।
৫. ২০১৮ সালের ১ ডিসেম্বর টঙ্গী ময়দানের জোড়ের প্রস্তুতিমূলক কাজে অংশগ্রহণকারী মাদ্রাসার নিরীহ ছাত্র- শিক্ষক এবং সাধারণ তাবলীগী সাথি ভাইদের উপর সাদপন্থিরা পুলিশ প্রশাসনের গুটিকয়েক অফিসারের সহযোগিতায় নৃশংস হামলা চালায়। আজকের এ মহাসম্মেলন থেকে উক্ত হামলাকারী ও তাদের সহযোগীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোর দাবি জানানো হচ্ছে।
৬. স্বঘোষিত আমির মাওলানা সাদ কোরআন-সুন্নাহর অপব্যাখ্যা, নবী-রাসুল ও সাহাবায়ে কেরামের সমালোচনা এবং আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের আকিদা-বিশ্বাস বিরোধী বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন। আরো উল্লেখ্য যে, দাওয়াত ও তাবলিগের এই মকবুল মেহনত যুগ যুগ ধরে হজরত মাওলানা ইলিয়াস রহ., হজরত মাওলানা ইউসুফ রহ, ও হজরত মাওলানা এনামুল হাসান রহ.-এর উসুলের উপর পরিচালিত হয়ে আসছে। কিন্তু মাওলানা সাদ তাবলীগ জামাতের স্বীকৃত উসুল তথা নীতিমালা উপেক্ষা করে নিজস্ব মতের ভিত্তিতে পরিচালনা করার অপপ্রয়াস চালায়। এ কারণে দারুল উলুম দেওবন্দসহ উপমহাদেশের প্রখ্যাত উলামায়ে কেরাম তার গুমরাহপূর্ণ বক্তব্য ও অবস্থানের ব্যাপারে উম্মাহকে সতর্ক করেছেন। তাই ইতিপূর্বে বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমান সাদ সাহেবকে বাংলাদেশে আসতে বাধা প্রদান করেছে। বিধায় বর্তমান সরকারের নিকট অদ্যকার মহাসম্মেলন থেকে জোর দাবি জানানো হচ্ছে যে, কোনো অবস্থাতেই মাওলানা সাদকে বাংলাদেশে আসতে দেওয়া যাবে না।
৭. ওলামায়ে কেরামের তত্ত্বাবধানে শুরায়ি নেজামে পরিচালিত বিশ্ব ইজতেমা এক পর্বে আয়োজন করা অত্যন্ত দুরূহ ব্যাপার। তাই আগামী বিশ্ব ইজতেমা দুই পর্বেই অর্থাৎ ৩১ জানুয়ারি ও ০১-০২ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার, শনিবার ও রবিবার এবং দ্বিতীয় পর্ব ০৭-০৮-০৯ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার, শনিবার ও রবিবার করার তারিখ আজকের এ মহাসম্মেলন থেকে ঘোষণা করা হলো। এ ব্যাপারে সরকারের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করছি।
৮. কাকরাইল মসজিদ ও টঙ্গী বিশ্ব ইজতেমার ময়দানের যাবতীয় কার্যক্রম উলামায়ে কেরামের তত্ত্বাবধানে শুরায়ি নেজামে পরিচালিত হবে। উক্ত স্থানদ্বয়ে সাদপন্থিদের কোনো কার্যক্রম চালাতে দেওয়া হবে না।
৯. বর্তমান সরকারকে ইসলাম ও মুসলমানদের দুশমন অভিশপ্ত কাদিয়ানীদের অবিলম্বে অমুসলিম ঘোষণা করতে হবে। এবং সেই সাথে কাদিয়ানীদের ইসলামী পরিভাষা ব্যবহার নিষিদ্ধ করারও জোর দাবি জানাচ্ছে আজকের এ মহাসম্মেলন।
এদিন সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল ৯টা থেকে সম্মেলন শুরু হয়। এই সম্মেলনকে কেন্দ্র করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, শাহবাগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বিভিন্ন অংশে বিপুলসংখ্যক আলেম-ওলামারা জমায়েত হন। এসব এলাকায় বড় আকারে ট্রাফিক জ্যাম দেখা দেয়। এতে বিভিন্ন জেলা থেকে হাজার হাজার মাদ্রাসা শিক্ষার্থী অংশ নেন।
সরেজমিন দেখা গেছে, ফজরের নামাজের পর থেকেই তাবলিগ জামায়াতের লোকজন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জড়ো হতে শুরু করেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। এরপর উদ্যানের আশপাশের এলাকায় অবস্থান নেন আলেম-ওলামারা।
আমীর আল্লামা শাহ্ মহিবুল্লাহ বাবুনগরীর সভাপতিত্বে সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্যে দেন হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক আল্লামা মুফতি খলিল আহমদ কাসেমী, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমীর আল্লামা শাহ্ মহিবুল্লাহ বাবুনগরীর লিখিত বক্তব্য পাঠ করে মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী। এছাড়া মাওলানা আবদুল হামিদ, মাওলানা সালাহউদ্দীন নানুপুরী, মাওলানা সাজেদুর রহমান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।