জুলাই থেকে অক্টোবর- এই চার মাসে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ঐতিহাসিক পটপরিবর্তন হয়েছে। সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলন পরবর্তীতে সরকার পতনের আন্দোলনে পরিণত হয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে। দলটির সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়। এরপর নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেয়।
আন্দোলনের শুরু থেকে প্রচণ্ড জনরোষে পড়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। নতুন সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে শেখ হাসিনাসহ দলটির নেতাকর্মীদের নামে হত্যা মামলাসহ বিভিন্ন মামলা দায়ের করা হচ্ছে। হামলা চালোনো হচ্ছে তাদের বাড়িঘর, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে। এমন কি দলটির অনেক নেতাকর্মীকে হত্যার খবর পাওয়া গেছে।
চলতি বছরের জুলাইয়ে কোটা-সংস্কার আন্দোলন শুরু হওয়ার পর থেকে সদ্য শেষ হওয়া অক্টোবর পর্যন্ত চার মাসে বাংলাদেশে অন্তত ৩৭০ জন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে দলটি। সোমবার (২ নভেম্বর) তাদের নাম, হত্যার দিন ও হামলার স্থানের তথ্য দিয়ে একটি তালিকা প্রকাশ করেছে দলটি। খবর আনন্দবাজারের।
দলীয় সূত্রে বলা হচ্ছে, এই তালিকা জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধানী দলের হাতে তুলে দেয়া হবে। যদিও এই তালিকা একেবারে প্রাথমিক। সরকারের অসহযোগিতায় নিহত সকলের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছে দলটি।
জুলাই থেকে অক্টোবর- এই চার মাসে বাংলাদেশে ঐতিহাসিক পটপরিবর্তন হয়ে গিয়েছে। কোটা-সংস্কারের আন্দোলন গণঅভ্যুত্থানে পর্যবসিত হয়ে শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করেছে। প্রধানমন্ত্রী হাসিনা দেশত্যাগ করে দিল্লিতে আশ্রয় নিয়েছেন। আন্দোলনকারীদের দমনে বলপ্রয়োগের অভিযোগ করে তাকে ও তার সরকারের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ এনে আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইবুনালে মামলা করেছে সরকার। পাশাপাশি নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়েছেন সাবেক শাসক দলের নেতা-কর্মীরা। নিষিদ্ধ করা হয়েছে আওয়ামী লীগের শাখা ছাত্রলীগকে। গণরোষের অজুহাত তুলে খুন করা হয়েছে আওয়ামী নেতা-কর্মীদের। আওয়ামী লীগের প্রকাশ করা তালিকা থেকে দেখা যাচ্ছে, সবচেয়ে বেশি ৩১৭ জনকে খুন করা হয়েছে আগস্টে।
তার আগে জুলাইয়ে নিহত হয়েছিলেন ২২ জন আওয়ামী কর্মী। সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে খুন করা হয়েছে যথাক্রমে ১১ ও ২২ জনকে। নিহতদের মধ্যে ২২৮ জনকে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে। পিটিয়ে ও কুপিয়ে খুন করা হয়েছে ১০০ জনকে। গুলিতে নিহত ২৩ জন। তবে মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার ইতোমধ্যে আন্দোলনকারীদের অভিযোগ থেকে রেহাইয়ের দেয়ায় এই সব হত্যা মামলার বিচার হবে না বলেই মনে করছেন দলটির নেতাকর্মীরা।