মাদারীপুরের ডাসার উপজেলায় শশিকর শহীদ স্মৃতি মহাবিদ্যায়ের অধ্যক্ষ দুর্লভানন্দের পদত্যাগপত্রে জোর করে স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় প্রশাসনের উপস্থিতিতে এমনটা হয়েছে- যার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
ডাসার উপজেলার শশিকর নামে ওই গ্রামেই রয়েছে শহীদ স্মৃতি মহাবিদ্যালয়। গ্রামটি শতভাগ হিন্দু অধ্যুষিত । যদিও দূর-দুরান্তের বিভিন্ন এলাকা থেকে ভিন্নধর্মী ছাত্ররাও এখানে আসে এবং হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা করে। ধর্মীয় সম্প্রীতি বজায় রাখতে কলেজ ভবনের একটি অংশে মুসলিম ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীদের নামাজ পড়ার জন্য একটা ঘরের ব্যবস্থা করে দিয়েছে কলেজ কর্তৃপক্ষ।
জানা যায়- কলেজে গত ৯ নভেম্বর কিছু শিক্ষার্থী মিলে ওই কলেজের নামাজের ঘরটিতে আজান দেওয়ার জন্য একটি মাইক লাগানোর প্রস্তুতি নেন। পরে এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় শিক্ষার্থী হোস্টেলে থাকা শিক্ষার্থীদের মধ্যে রিরোধের সৃষ্টি হয়।
এরপর গত ১৮ নভেম্বর সন্ধ্যায় পুনরায় কলেজে আজান দেওয়ার জন্য একটি মাইক লাগাতে গেলে স্থানীয়দের সঙ্গে বহিরাগতদের কথা কাটাকাটি হয়। এ নিয়ে দু’পক্ষের মাঝে বিরোধ দেখা দেয়। পরে ডাসারের উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং ওসিকে জানানো হয়। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে কলেজের অধ্যক্ষ দুর্লাভনন্দকে ডাসার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. গোলাম মাসুম প্রধান গাড়িতে করে উপজেলা পরিষদের অফিস কক্ষে নিয়ে যান। এ সময় শিক্ষার্থী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের উপস্থিতিতে ওই অধ্যক্ষ পদত্যাগপত্রে সই করানো হয়।
অধ্যক্ষ দুর্লাভনন্দের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, মাদারীপুর থেকে কিছু শিক্ষার্থী সমন্বয়ক পরিচয়ে এসে আমাকে কলেজে আজান দেও্যয়ার জন্য মাইক লাগাতে বললে আমি অপরাগতা প্রকাশ করি এবং তাদেরকে বলি আপনারা লাগাতে চাইলে আপনারা নিজেরা দায়িত্ব নিয়ে লাগান। এ নিয়ে কিছুটা উত্তপ্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে ডাসার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ওসিকে জানানো হয়।
অধ্যক্ষ দুর্লাভনন্দ আরও বলেন, ঐদিন সন্ধ্যায় ইউএনও অফিসে আমাকে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। পরে ইউএনওর সামনে সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে কিছু লোকজন আমাকে ঘিরে ধরেছে এবং একটি সাদা কাগজে স্বাক্ষর করতে জোর করে বাধ্য করেন ও আমাকে পদত্যাগ বলতে বাধ্য করেন। আমি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করিনি।
আরও অভিযোগ রয়েছে- সমন্বয়ক পরিচয়দানকারীরা অধ্যক্ষকে বলে যে ‘হয় আগামীকাল আপনি মাইক লাগাবেন অথবা পদত্যাগ করবেন’। এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা ইসরাফিল বলেন, আমি ঘটনার সময় উপস্থিত ছিলাম। অধ্যক্ষকে কেউ জোর করে পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করাতে বাধ্য করা হয়নি। তিনি স্বেচ্ছায় পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করছেন। পদত্যাগপত্র দেওয়ার সময় ইউএনও এবং স্থানীয় প্রশাসনের লোকজন ছিল। তাদের সামনে কেউ তাকে জোর করতে পারে না।
স্থানীয় প্রশাসনের উপস্থিতি উপজেলায় গত ১৮ নভেম্বর এ নিয়ে একটি বৈঠক হয়। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় কলেজ এলাকায় ছাত্রদের জন্য নামাজের ঘর নির্মাণ করা হবে এবং অধ্যক্ষকে দুই মাসে ছুটি প্রদান করা হবে। অধ্যক্ষের পক্ষ থেকে এই সিদ্ধান্ত মেনে না নিলে আবারো উত্তেজনা দেখা দেয়। হেফাজত ইসলাম কলেজ এলাকায় সমাবেশ করার ঘোষণা দেয়। পরে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা এবং প্রশাসনের অনুরোধে সমাবেশ বন্ধ রাখা হয়।
পরে তাদের দু’পক্ষকে নিয়ে ডাসার উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ে আবারো বৈঠক করে উপজেলা প্রশাসন। বৈঠকে দু’পক্ষকেই উত্তেজনাকর পরিস্থিতি যাতে সৃষ্টি না হয় তার জন্য অনুরোধ করা হয়।
এ বিষয়ে ডাসার ইউএনও রেজা মো. গোলাম মাসুম প্রধান বলেন, দু’পক্ষকে নিয়ে সমাধনের চেষ্টা চলছে। গণ্যমান্য যারা আছে তাদের নিয়ে একাধিক বৈঠক করেছি। সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে।
প্রসঙ্গত, কলেজটি শিক্ষার্থীদের মানসম্মত শিক্ষা দিতে সবসময় সচেষ্ট থাকে। এর ফলে কলেজটি মাদারীপুরে জেলার সেরা কলেজ হয়েছে। ২০২৩ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় ৬৪ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে, পাশের হার ছিল ৮৮.৬৫।