প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর এক ভাষণে সমালোচনাকারীদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশ আত্মসামাজিক উন্নয়নে একটি উন্নত সমৃদ্ধ দেশে পরিবর্তন হোক একটি মহল সেটি কোনো অবস্থাতে চায় না। তারা শুধু কথায় কথায় সমালোচনা করে। এই চক্র ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করে দেশের সাধারণ মানুষদের বিভ্রান্ত করে।’ কথাটি যথার্থ সত্য বলে ইতিমধ্যে প্রমাণিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কথার সূত্র ধরে বলতে চাই- আমাদের দেশের মানুষের মতো সমালোচনাকারী আর কোন জাতি-সম্প্রদায় বিশ্বব্যাপী আছে কিনা জানা নাই। কথায় কথায় একটি অতি সাধারণ তুচ্ছ বিষয়কে সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে টেনে নিয়ে তুলোধুনো করে না ছাড়া পর্যন্ত যেন পেটের ভাত হজম হয় না। প্রায় এক দশক থেকে ফেসবুক নামক এই বিষাক্ত বাতাস বাংলাদেশের রাজনীতি আর ধর্মীয় সম্প্রীতিতে কী রকম যে প্রভাব ফেলেছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
সাধারণ একটি ফেসবুকে কে কী লিখেছে বুঝার আগেই শকুনোর ঝাঁকের মতো হুমড়ি খেয়ে পড়ে। যা বিশ্বের আর কোথাও এরকমটি নেই। এরকম হওয়ার কারণ প্রকৃত জ্ঞানানুীশলনের অভাব। তথ্যপ্রযুক্তির আবিস্কার আর বিশ্বব্যাপী বিজ্ঞানের যে একটি প্রভাববলয় সৃষ্টি হয়েছে ফেসবুক তারি একটি অংশ। তাই বলে খেয়ালখুশি মতো যেমন তেমন পোস্ট দেয়ার মধ্যেও শালীনতা থাকা দরকার। ধরুন, কারো যদি মাথায় মাথা ব্যাথ উঠে তাহলে রাগ করে মাথা কি কেউ কেটে ফেলে? না, কোনো অবস্থাতেই নয়। এর জন্য চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে ওষুধ সেবন করতে হবে। তবেই মাথা ব্যাথা থেকে উত্তরণ ঘটবে। ফেসবুকও তেমনি একটি বিষয় এটি একমাত্র নিয়ন্ত্রণ করতে পারে নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা বা সরকার। সরকার ও নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানকে অবগত করলে তারা সে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বদ্ধপরিকর। কিন্তু কথা হচ্ছে কে করবে-। বাংলাদেশে এই পর্যন্ত ভুয়া ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে যতসব ঘটনা ঘটেছে তার মধ্যে ক’টির সুষ্টু বিচার হয়েছে? বলতে গেলে তেমন একটা হয়নি। আবার বেশিরভাগ ঘটনা ঘটেছে ধর্মীয় উস্কনিমুলক। এইভাবে বিচার না হওয়ার সংস্কৃতি যখন ক্রমশ বাড়তে থাকে তখন একশ্রেণির স্বার্থান্বেষী ধর্মান্ধ, উগ্র, মৌলবাদের উত্থান দিন দিন বেড়ে য়ায়। আবার এই উগ্রবাদী গোষ্ঠীরা এতবেশি সুচতুর যে তারা যেকোনো উপায়ে রাজনীতিকে ঘটনার সাথে গুলিয়ে ফেলে। এভাবে রাজনীতি যখন ধর্মীয় বিধিবিধানে প্রবেশ করে তখন বিচার পাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়ে। বাংলাদেশে এখন একটি মহল রাজনীতিকে যেভাবে ব্যবহার করছে বিশেষ কওে দেশের বিভাগীয় শহর ও জেলা শহরের সবকটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও উপাসনালয় রাজনীতির মদদে পরিচালিত হচ্ছে। যা স্বতন্ত্র ধর্মানুশীলনে সীমাহীন অন্তরায় বলে সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষরা মনে করেন। ধর্ম, রাজনীতির প্রভাববলয় থেকে মুক্ত হওয়া না গেলে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো এক সময় রাজীতির খোলসে পরিণত হবে। ইতিমধ্যে তার কয়েকটি নমুনা আমরা দেখতে পাচ্ছি! যা হোক এবার আসি মূল প্রসঙ্গে।
রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে যে বিধিবিধান দেশের জনগণের কল্যাণে প্রণীত হয় সেটির নাম সংবিধান। আর দেশের ভিতরে অবস্থিত যেসব সামাজিক, সাংস্কৃতিক, মানবিক সংগঠনগুলো কার্যক্রম পরিচালনা করতে গিয়ে যে বিধিবিধান সমাজে বসবাসকারী মানুষের কল্যাণে প্রণয়ন করে সেটির নাম গঠনতন্ত্র। আমাদের দেশে ক্ষমতার পালাবদলের সাথে সাথে সংবিধান বা গঠনতন্ত্র একটি মূখ্য ভূমিকা হয়ে ওঠে। কথায় কথায় সংবিধান নিয়ে কাদা ছোড়াছুড়ি করে। এই সংস্কৃতি থেকে সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোও কোনোভাবে পিছিয়ে নেই। আবার শুধু আমার দেশের কথা বলি কেন বিভিন্ন দেশেও এ নজির ভুরি ভুরি। প্রত্যেকে চায় দেশ ও সংগঠনকে সুকৌশলে নিরাপদ রাখতে। তাই সময়ে সময়ে নির্বাচিত পার্লামেন্ট সদস্য বা সংগঠনের কার্য নির্বাহি সংসদ তাদের মতো কওে সংবিদান প্রনয়ন করে। কারণ এটি করাকে আমি ভুল কিছু দেখি না। সংবিধান বা গঠনতন্ত্র এমন কোনো ধর্মীয় কিতাব বা গ্রন্থ নয় যে, তাঁর কোনোরকম সংশোধন, পরিবর্তন, পরিমার্জন করা যাবে না। যুগের প্রয়োজন ও কাজের সুবিধার্থে এটি সংযোজন-বিয়োজন করা স্বাভাবিক প্রক্রিয়ারই একটি অংশ বলে মনেকরি। তবে এ কথা ঠিক যে, বাংলাদেশের সংবিধানে একটি কলঙ্কজনক অধ্যায়ের সূচনা হয়েছিল। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যার মাত্র ৯ দিনের মাথায় ২৪ আগস্ট জেনারেল জিয়াউর রহমান সেনাবাহিনীর প্রধান হিসেবে নিযুক্ত হন। তখন তাঁর সমর্থিত সরকার ছিলেন প্রেসিডেন্ট খন্দকার মোশতাক। জেনারেল জিয়াউর রহমানের নির্দেশে হত্যাকারীদের রক্ষার জন্য তিনি ১৯৭৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর ইনডেমেনিটি অধ্যাদেশ আইনটি জারি করতে একপ্রকার বাধ্য হন। এরপর মোশতাককে সড়িয়ে দিয়ে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা নিয়ে নেন জিয়াউর রহমান। ১৯৯৬ সালের ১২ জুন নানান চড়াই উৎরাই পার করে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার প্রক্রিয়া শুরু করার আইনি বাধা অপসারণের প্রক্রিয়া হিসেবে সংবিধান বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে ‘ইনডেমনিটি’ ‘অধ্যাদেশ রহিতকরণ বিল’ ১৯৯৬ সালে সপ্তম সংসদে উত্থাপন করা হয়। ১৯৯৬ সালের ১২ নভেম্বর আইনটি সংসদে পাশ হয়। ১৪ নভেম্বর রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের পর এটি পরিপূর্ণভাবে আইনে পরিণত হয়। ফলে মোশতাকের জারি করা এবং বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা মেজর জিয়াউর রহমানের সময় বৈধতা পাওয়া ইনডেমনিটি অধ্যাদেশটি বিলুপ্ত বলে গণ্য হয়। এটি বিলুপ্ত হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার কার্য পরিচালনার ক্ষেত্রে সব রকম বাধা ওঠে যায়।
আরেক সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল হুসাইন মুহম্মদ এরশাদ ১৯৮৩ সালের ১১ ডিসেম্বর স্বঘোষিত রাষ্ট্রপতির পদ দখলে নিয়ে ১৯৮৮ সালের ৫ জুন চতুর্থ জাতীয় সংসদে সংবিধানের অষ্টম সংশোধনীতে সংবিধানের ২ (ক) নম্বর অনুচ্ছেদ যোগ করা হয়। এত বলা হয়, ‘প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম, তবে অন্যান্য ধর্মও শান্তিতে পালন করা যাইবে উল্লেখ করে এটি নতুন করে সংবিধানে সংযোজন করেন। এখানেতো শুধুতো দুটি বিষয়ের কথা উল্লেখ করলাম এরকম আরো অজস্র বিষয় আছে যা বহুবার ধরে সংশোধন-সংযোজন-পরিবর্তন করতে হয়েছে রাষ্ট্র পরিচালনার প্রয়োজনীয় স্বার্থের অংশ হিসেবে। এইভাবে স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের সংবিধান প্রায় ১৭ বার সংশোধিত হয়েছে। আবার অপরদিকে ভারতের সংবিধান সংযোজন-বিয়োজন হয়েছে ১০৫ বার। যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান সংশোধিত হয় ২৭ বার। কথাটি আমি এই জন্য উল্লেখ করেছি যে, ইদানীং বাংলাদেশে যেভাবে একটি বিশেষ মহল আরেকটিকে ঘায়েল করার লক্ষেসংগঠনের গঠনতন্ত্র নিয়ে বিষেধাগার করে চলেছেন, শুধু বিষেধাগার করে ক্ষান্ত থাকেননি একাধিক সংগঠনকে মামলা-মোকদ্দমায় জড়িয়ে নিজেদের জোর অধিকার রক্ষায় সর্বশক্তি দিয়ে নেমেছেন। এ যেন মগের মুল্লুক! মূলত সে কারণেই উপরের উদাহরণটি জনগণ এবং সংগঠনপ্রিয় মানুষের সুবিধার্থে তুলে ধরলাম।
এবার আমার একটি জানাশোনা সংগঠনের কিছু কথা তুলে ধরি। এরকম দৃশ্য শুধু আমার নজরেরটার কথা কেন বলি, আপনার আশেপাশের সংগঠনের কর্মকান্ডের দিকে দৃষ্টি ফেরালে আশাকরি আপনাদের মনেও একই দৃষ্টিভঙ্গি অনুভুত হবে। গত ৮ ও ৯ মার্চ চট্টগ্রামে বৌদ্ধদের ঐতিহাসিক প্রতিষ্ঠানে একটি উগ্রবাদ ধর্মান্ধগোষ্ঠীর প্রত্যক্ষ মদদে জ্বালাও পোড়াও সংগঠিত করে, পরে ঐ পক্ষের একটি মহল নিজেদেরকে আড়াল করতে গিয়ে বাংলাদেশি বৌদ্ধদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ বৌদ্ধ সমিতির গায়ে কালিমালেপন করতে উঠেপড়ে লাগে। এই উগ্র ধর্মান্ধ গোষ্ঠী তারা সহজ সরল সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষদেরকে বুঝাতে চাচ্ছেন ধর্মগুরু কর্তৃক নারীর শাড়ি টেনে খুলে ফেলা, বৌদ্ধমন্দিরের গেইটের তালা ভেঙে জোর প্রবেশের মাধ্যমে অবস্থানকারী ভিক্ষুদের কক্ষ ভাঙচুর করা, মোবাইল, কম্পিউটার, ল্যাপটপ, পাসপোর্ট, নগদ টাকা লুটপাট, সমিতির অফিসের আসবাবপত্র ভাঙচুর, সংগঠনের প্রায় সত্তরোর্দ্ধ প্রবীণ ব্যক্তিদের গায়ে জুতা ছুড়ে মারা, বিহারের প্রয়োজনীয় সামগ্রী ধ্বংস করা, দলিল-দস্তাবেজ ও সাংগঠনিক নথিপত্রে আগুন লাগিয়ে দিয়ে পুড়িয়ে ফেলা এসব ঘটনায় যখন বৌদ্ধ সমিতি তাদের বিরুদ্ধে মামলারুজু করে এই এতগুলো নোংরা কান্ড থেকে দুষ্কৃতকারীদের বাঁচানোর জন্য তাদেরই একটি মহল ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে নানারকম ষড়যন্ত্রের আশ্রয় নিয়েছে। যে কারণে সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষের সহানুভূতি পেতে তারা বেশ জোড়েসোড়ে মিথ্যা প্রপাগান্ডা চালাচ্ছে। সেটির কারণ হচ্ছে সংগঠনের সংবিধান বা গঠনতন্ত্র। তাদের অভিযোগ, বৌদ্ধ সমিতির ১৯২৬ সালে গঠনতন্ত্রের একস্থানে উল্লেখ আছে- ‘সমিতির অফিস অন্যত্র ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত বিহারাধ্যক্ষের অনুমতি নিয়ে থাকিতে পারিবে এবং অনুমতি নিয়ে যাবতীয় সভা চট্টগ্রাম বৌদ্ধবিহারে হইতে পারিবে।’ কিন্তু পরবর্তিতে আরো অনেকবার গঠনতন্ত্র সময় এবং কালের প্রেক্ষাপটে কার্যনির্বাহী সংসদ ও সাধারণ সভায় উপস্থিত সদস্যগণের সম্মতি ভোটে সংশোধন, পরিবর্তন, পরিমার্জন করা হলে তখন আগেরটির কোনো রকম গুরুত্ব থাকে না। একথা তারা কোনোভাবে জনগণের কাছে প্রকাশ করতে চায় না। জনগনকে ভুলবার্তা দিয়ে বার বার তারা বিভ্রান্ত করে চলেছেন। সংঘাত সৃষ্টি করে তাদেরই একটি মহল ক্ষমতা দখলে মরিয়া হয়ে উঠে। যেখানে বাংলাদেশের সংবিধান, ভারতীয় সংবিধান, যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান পরিবর্তন হয়েছে, হচ্ছে এবং আগামীতেও হবে। সে কথা যেমন সত্য তেমনি বৌদ্ধ সমিতি তথা দেশের অপরাপর সমাজ সংগঠনগুলোর পরিবর্তন হওয়া এটিতো একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়ারই অংশ। এটি নিয়ে বাজার গরম করার যুক্তিকতা কি আছে? প্রশ্ন রাখতে চাই, গঠনতন্ত্র নিয়ে যারা জোড়েশোড়ে হৈ-হুল্লোর চেচামেচি করছে তারা আগামীতে যদি ঐ সমিতির দায়িত্ব কাঁধে নেয়, তারা কি আগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী চলবে? কখনো না, এটি হতে পাওে না। এরকম একটি সস্তা বিষয়কে পুঁজি করে দেশে-সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা লোকগুলো তারা কতটুকু অনৈতিক গুণসম্পন্ন মানুষ হলে এধরনের জগন্য কাজগুলো করতে পারে ভাবতে অবাক লাগে! দেশ-সমাজ-সম্প্রদায়ে সংবিধান বলুন আর গঠনতন্ত্র বলুন, এ নিয়ে কথা বলা কিন্তু যত সহজ বাস্তবে প্রয়োগ করা বহু কঠিন।
আমরা প্রত্যেকে যদি অধিকার নিয়ে সচেতন হই তাহলে সমাজ-সংগঠনে কেন পুরোদেশের চিত্র পাল্টে যাবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশকে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে ইতিমধ্যে যেসব পদক্ষেপ গুলো গ্রহণ করেছেন তা দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় একেকটি যুগান্তকারী বলে গণ্য হয়েছে। আসুন, মিথ্যার প্রোপাগান্ডায় গা না ভাসিয়ে দেশ ও জাতির সমৃদ্ধির উন্নয়নে আত্মনিয়োগ করি, আর দেশকে গভীর মমতায় ভালোবাসি। লালন সাঁই এর চরণ উল্লেখ করে শেষ করছি- সত্য কাজে কেউ নয় রাজি/ সবই দেখি তা-না-না/ জাত গেল জাত গেল বলে একি আজব কারখানা/ আসবার কালে কি জাত ছিলে/ এসে তুমি কি জাত নিলে/ কি জাত হবা যাবার কালে/ সে কথা ভেবে বল না… ।
লেখক : সাংবাদিক ও প্রাবন্ধিক