শেরপুরের মুর্শিদপুর পীরের দরবারে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় একজন নিহত হয়েছেন। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) ভোরে হাফেজ উদ্দিন (৩৯) নামে ওই ব্যক্তি মারা যান। এর আগে ওই দরবারে হামলা-ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ আট জনকে আটক করে।
আটক ব্যক্তিরা হলেন শেরপুর জেলার সদর উপজেলার দহরিয়াপাড় গ্রামের উসমান মিয়ার ছেলে জয়নাল (৩২); নালিতাবাড়ী উপজেলার সন্ন্যাসীভিটা গ্রামের আয়াতুল্লাহর ছেলে মামুন (১৭); সদর উপজেলার সাতপাকিয়া গ্রামের রমজান মিয়ার ছেলে শহীদ (৩৫); লছমনপুর গ্রামের ছামিদুলের ছেলে মজনু (২৬); বয়ড়াপরানপুর গ্রামের সামউদ্দিনের ছেলে এনামুল হক (৩৫); লছমনপুর ঝাউয়েরচর গ্রামের আবুল কালামের ছেলে আসিফ (১৬); কান্দা শেরীরচর ইদু মিয়ার ছেলে হাফেজ উদ্দিন (৩৯); বলাইয়েরচর গ্রামের মঞ্জিলের ছেলে জিসান (২২)।
আটক আট জনের মধ্যে হাফেজ উদ্দিন ও জয়নালকে গুরুতর আহত অবস্থায় পাওয়া যায়। আটকের পর তাদের প্রথমে শেরপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে হাফেজের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে তার অবস্থার আরও অবনতি হওয়ায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ ভোরে হাফেজ উদ্দিন মারা যান।
পুলিশ, লিখিত অভিযোগ ও দরবার কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর থেকে স্থানীয় একটি মাদ্রাসার কয়েকজন শিক্ষক ও স্থানীয় বাসিন্দা সদর উপজেলার লছমনপুর এলাকায় অবস্থিত মুর্শিদপুর দরবার শরিফের কার্যক্রম বন্ধের হুমকি দিয়ে আসছিলেন। তাদের অভিযোগ, ওই দরবারে ইসলাম পরিপন্থি কার্যকলাপ হয়।
মঙ্গলবার ভোরে (২৬ নভেম্বর) মাদ্রাসাশিক্ষক তরিকুল ইসলামসহ ৪০০-৫০০ জন মানুষ মুর্শিদপুর পীরের দরবারে হামলা চালায়। তারা দরবারের টিনের বেড়া ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। এ সময় দরবারে থাকা খাদেম ও অন্য মুরিদরা তাদের বাধা দিলে উভয় পক্ষের সংঘর্ষে কমপক্ষে ১৩ জন আহত হন। খবর পেয়ে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও র্যাব গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে দরবার থেকে কয়েকটি পেট্রোল বোমা এবং অবিস্ফোরিত ককটেল উদ্ধার করে পুলিশ।
এ ঘটনায় দরবার শরিফের খাদেম মাহমুদান মাসুদ বাদী হয়ে স্থানীয় একটি মাদ্রাসার সুপারসহ ২৫ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত আরও ৪০০-৫০০ জনকে আসামি করে মঙ্গলবার রাতে সদর থানায় মামলা করেন।
অপরদিকে মাদরাসা পক্ষ থেকেও দরবার শরিফের লোকজনকে আসামি করে আরও একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
শেরপুর সদর থানার ওসি জুবায়দুল আলম বলেন, দরবারে হামলার ঘটনায় মুর্শিদপুর দরবার শরিফের পক্ষ থেকে থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ আট জনকে গ্রেফতার করেছে। পুলিশ পুরো ঘটনাটি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করে দেখছে। পুলিশ সুপার মো. আমিনুল ইসলাম ও সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা গতকালই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।