ভিয়েতনাম-ইইউ মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি, ২১ শতাংশ রপ্তানি কমবে বাংলাদেশের

: যথাসময় ডেস্ক
প্রকাশ: ৩ সপ্তাহ আগে

স্বল্পোন্নত দেশ থেকে মধ্য আয়ের দেশে উত্তোরণের ফলে শুল্ক বাড়বে। একই সঙ্গে প্রতিযোগী দেশ ভিয়েতনাম বাণিজ্যে বৈচিত্র্য নিয়ে আসায় তার প্রভাবও পড়বে। এতে দেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ১ শতাংশ কমবে। ইউরোপে রপ্তানি কমবে ২১ শতাংশ। গত মঙ্গলবার রাজধানীর একটি হোটেলে গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্ট (র‌্যাপিড) এবং জার্মানভিত্তিক উন্নয়ন সংস্থা ফ্রেডরিক-ইবার্ট-স্টিফটাং (এফইএস) বাংলাদেশ যৌথভাবে সেমিনার আয়োজন করে। সেখানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনায় এসব কথা বলেন র‌্যাপিডের চেয়ারম্যান এম এ রাজ্জাক।

কমনওয়েলথ সচিবালয়ের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যনীতির সাবেক এই প্রধান বলেন, ‘এলডিসি থেকে উত্তরণ এবং ভিয়েতনামের সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির (এফটিএ) ফলে কেবল এ অঞ্চলেই বাংলাদেশের রপ্তানি কমবে ২১.১ শতাংশ। বাংলাদেশ যখন এলডিসির পরে ধুঁকতে থাকবে, তখন ভিয়েতনাম কেবল মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির ফলে ইইউতেই ৮২ শতাংশ রপ্তানি বাড়াতে পারবে।

সংকট মোকাবেলায় এলডিসি উত্তরণের পরে তিন থেকে পাঁচ বছরের জন্য শুল্ক কম বৃদ্ধির জন্য আলোচনা বাড়ানো, জিএসপি প্লাসের সক্ষমতা অর্জন, বৈদেশিক বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে মুক্ত বাণিজ্য ও বিনিয়োগ চুক্তি এবং শিল্পে প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বাড়ানোর সুপারিশ করেন এই অর্থনীতিবিদ।

এ সময় বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি ফজলে শামীম এহসান গবেষণার এ ফলের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে বলেন, আমি ভাবি না যে এলডিসির পরে রপ্তানি ২০ শতাংশ কমে যাবে, বরং আমাদের প্রবৃদ্ধি ধীরে হতে পারে। সব কিছু আমাদের ব্যবসার বিরুদ্ধে যাচ্ছে। এ রকম চলতে থাকলে প্রবৃদ্ধি কমবে কিন্তু রপ্তানির পরিমাণ কমবে না। আমাদের এখন নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহ প্রয়োজন। একই সঙ্গে পোশাক রপ্তানি থেকে চোখ না সরিয়ে বরং অন্যান্য খাতের রপ্তানি কেন বাড়ানো গেল না তার জন্য গবেষণার অনুরোধ জানান তিনি।

বাংলাদেশে ইইউর বাণিজ্য উপদেষ্টা আবু সৈয়দ বেলাল বলেন, ভিয়েতনামকে ইইউ প্রবেশের সুযোগ করে দেয়নি বরং তারা সঠিক সময়ে সঠিক নীতি পদক্ষেপ নিয়েছে। দেশটি তাদের নীতি সব সময়ই খুবই সহজ রেখেছে। তাজরীন ফ্যাশনস বা রানা প্লাজার মতো দুর্ঘটনা ভিয়েতনামে হয়নি, কিন্তু বাংলাদেশে হয়েছে। এসব আর যেন সামনের দিনে না হয় সেটি নিশ্চিত করতে হবে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এফটিএ শাখার অতিরিক্ত সচিব আয়েশা আক্তার বলেন, রপ্তানির প্রতিযোগিতা বাড়াতে নীতি সহায়তা ছাড়াও অনেক বিষয়ের প্রয়োজন রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংস্কার। ভিয়েতনাম সময় সময় এটি করতে পেরেছে। ইইউয়ের সঙ্গে এফটিএ করতে বাংলাদেশ সরকার চেষ্টা করে যাচ্ছে। একই সঙ্গে চীন, জাপান, ইন্দোনেশিয়াসহ ২৮টি দেশের সঙ্গে এফটিএর সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়েছে। অনেক দেশের সঙ্গে একাধিক আলোচনাও হয়েছে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোতে (ইপিবি) ভাইস চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার হোসেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সমালোচনা করে বলেন, রপ্তানি নীতি ও আমদানি নীতি আদেশে আংশিক রপ্তানিকারকদের কথা যুক্ত থাকলেও এসব নীতি বাস্তবায়ন করেনি রাজস্ব আদায়ের এই সংস্থা। এ সময় এটি গেম চেঞ্জার হতে পারত। এর ফলে এসএমই খাতও বন্ডের সুবিধা গ্রহণ করে রপ্তানি বাড়াতে পারত।এনবিআরকে বারবার অনুরোধ করলেও এটি আমলে নেওয়া হয়নি।

তবে এর সত্ত্বেও বাংলাদেশের রপ্তানির ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ২০৩০ নয়, বরং এর আগেই পোশাক খাতের রপ্তানি দাঁড়াবে ১০০ বিলিয়ন ডলার।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব মো. শাহরিয়ার কাদের ছিদ্দিকীও এ বিষয়টি উল্লেখ করে বলেন, প্রতিনিয়ত নীতি হস্তক্ষেপ থাকলে হয়তো রপ্তানি বাড়বে, কিন্তু টেকসই হবে না। বিদেশিরা আসবেন না। আমাদের নীতির সামঞ্জস্য লাগবে। এর সঙ্গে নীতির ধারাবাহিকতাও প্রয়োজন। বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে বিশ্বব্যাংকসহ অন্যান্য দাতা সংস্থা ও দেশ আগ্রহী বলেও জানান তিনি।

  • বাংলাদেশ
  • ভিয়েতনাম-ইইউ. মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি
  • রপ্তানি
  • #