শেরপুরের মুর্শিদপুর পীরের দরবারে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) সকাল ১১টার দিকে সদর উপজেলার লছমপুর গ্রামে স্থাপিত দোজা পীরের দরবারে ওই ঘটনা ঘটে।
সেনাবাহিনী, র্যাব ও পুলিশ দরবারের নিরাপত্তায় ব্যাপক প্রস্তুতি নিলেও জনস্রোতের কারণে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা।
দরবারের এক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত দরবারে লুটপাট চালানো হয়। গরু, মহিষ, ছাগল, দুম্বা, পুকুরের মাছসহ সব মালপত্র নিয়ে যায় বিক্ষুব্ধ জনতা। পরে দরবারে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। তাঁর দাবি, প্রায় ১৫ কোটি টাকার মালপত্র লুট হয়েছে। দরবারের গাছ পর্যন্ত কেটে নিয়ে গেছে লোকজন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার ভোরে ৪০০-৫০০ লোক দরবারে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করে। এ সময় দরবারের খাদেমসহ পীরের মুরিদদের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষে উভয় পক্ষের বেশ কয়েকজন আহত হয়। গুরুতর আহত লছমনপুর কান্দা শেরীরচর গ্রামের হাফেজ উদ্দিন নামে এক ব্যক্তি গত বুধবার চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান। এ ঘটনায় বিক্ষুব্ধ জনতা আবারও দরবারে হামলা করে। গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে স্থানীয় জমশেদ আলী কলেজ মাঠে নিহত হাফেজ উদ্দিনের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
এদিকে সেনাবাহিনী, র্যাব, বিজিবি, পুলিশ ও ব্যাটালিয়ন আনসার সদস্যরা ভোর থেকেই মুর্শিদপুর দরবার শরিফ এলাকায় এবং কুসুমহাটি বাজার এলাকায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে শক্ত অবস্থান নেন। কিন্তু বেশ কয়েকটি রাস্তা দিয়ে বিক্ষুব্ধ লোকজন দরবারে ঢুকে হামলা করে।
শেরপুর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপপরিচালক জাবেদ হোসেন তারেক বলেন, আগুন নেভানোর জন্য তারা কুসুমহাটি বাজার পর্যন্ত এলেও নিরাপত্তার অভাবে তারা ঘটনাস্থলে যেতে পারেননি।
সদর থানার ওসি জুবায়দুল আলম বলেন, বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এ ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গত ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর থেকে মুর্শিদপুর দরবার শরীফের কার্যক্রম বন্ধের চেষ্টা করে আসছিল সদর উপজেলার লছমপুর ইউনিয়নের জামতলা এলাকার ফারাজিয়া আল আরাবিয়া কওমি মাদরাসার সুপার মো. তরিকুল ইসলাম, খোরশেদ, মজিবর, শহিদুলসহ মুসল্লিদের একটি অংশ। তাদের অভিযোগ, পীরের দরবারে ইসলাম পরিপন্থি কার্যকলাপ সংগঠিত হয়। এই পীরের দরবার বন্ধের দাবিতে এর আগেও মাদরাসা ও লছমপুর এলাকাবাসীর উদ্যোগে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
এর আগে গত ২৬ নভেম্বর মঙ্গলবার মাজারবিরোধী ও মাজারপন্তিদের মাঝে ব্যাপক সংঘর্ষ সংগঠিত হয়। উক্ত সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন আহত হয়ে, হাসপাতালে ভর্তি হয়। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন একজনের গত রাতে মৃত্যু হয়। এতে বিক্ষোভে আজ মাজারে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে মাজার বিরোধী এলাকাবাসী। বর্তমানে কুসুমহাটি বাজারসহ পুরো এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।