নারায়ণগঞ্জের বন্দরে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে থাকা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বঙ্গবন্ধুর ছবি ভাঙচুর করেছেন যুবদল নেতাকর্মীরা। এ সময় তারা মুক্তিযোদ্ধাদের অবরুদ্ধ করে তোপের মুখে নানা প্রশ্ন করেন।
বিকালে বন্দর থানা যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক হুমায়ুন কবিরের নেতৃত্বে একদল বিএনপি ও যুবদল নেতাকর্মী মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনে প্রবেশ করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বঙ্গবন্ধুর ছবি ভাঙচুর করেন। বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভাঙচুর করা হয়। এ সময় ভবনের ভেতরে উপস্থিত মুক্তিযোদ্ধাদের তোপের মুখে ফেলে নানা প্রশ্ন করে। মুক্তিযোদ্ধা ভাতা বন্ধ করাসহ মুক্তিযোদ্ধা সনদ বাতিল করা হবে বলেও হুমকি দেন যুবদল নেতা হুমায়ুন কবির।
এ বিষয়ে বন্দর থানা যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক হুমায়ুন কবির বলেন, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালিয়ে গেছে। অথচ তার দোসররা এখানও মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে শেখ হাসিনা ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি সাঁটিয়ে রেখেছে। এতেই প্রমাণ হয়, এরা তাদের দোসর। আমরা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে অভিযান চালিয়ে শেখ মুজিবের সব ছবি ভেঙে দিয়েছি। আর ভেতরে যারা বসে আছে, তারা হচ্ছে আওয়ামী লীগ ও হাসিনার দালাল। দেশকে ধ্বংসের পাঁয়তারা করছে তারা। এখন আমরা বিএনপির ভাইয়েরা মিলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডের সাবেক ডেপুটি কমাণ্ডার কাজী নাছিরউদ্দিন বলেন, যুবদলের নেতা-কর্মীরা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের ভেতরে ঢুকে চিৎকার-চেঁচামেচি করতে থাকেন। বঙ্গবন্ধুর ছবি ছাড়াও কিছু ঐতিহাসিক ছবি দেওয়ালে ছিল, সেগুলোও নামিয়ে ভাঙচুর করে। আগেই দেওয়াল থেকে নামিয়ে গোডাউনে রাখা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবিগুলোও ভেঙে বাইরে ফেলে দেয়। ভেতরে কিছু প্ল্যাস্টিকের চেয়ারও ভাঙচুর চালায় তারা। কমপ্লেক্সে থাকা বইগুলোও ছুড়ে ফেলে দেয়।
এর আগে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোস্তাফিজুর রহমানের কার্যালয়ে বিজয় দিবস উপলক্ষে প্রস্তুতি সভায় অংশ নেন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে এক দফায় ভাঙচুর ও লুটপাট এবং লুট করা হয়। মুক্তিযোদ্ধারা ইউএনও’র সামনে সেসব বিষয়গুলো উপস্থাপন করেন বলে জানান নাছিরউদ্দিন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, ইউএনও এবং ওসির ‘উপস্থিতিতে’ কমপ্লেক্স ভবনের ভেতর ঢুকে পড়ে হামলাকারীরা। পরিস্থিতি ‘উত্তপ্ত দেখে’ সরকারি কর্মকর্তারা সেখান থেকে বেরিয়ে গেলে ভাঙচুর শুরু করে। এ সময় কমপ্লেক্সের ভেতরে শেখ মুজিবুর রহমানের কংক্রিটের প্রতিকৃতিও ‘হাতুড়ি দিয়ে’ ভেঙে ফেলা হয়।
বন্দর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে ভাঙচুরের ঘটনার একটি ভিডিও সাংবাদিকদের হাতে এসেছে। সেখানে যুবদল নেতা হুমায়ূন কবির তার অনুসারী কর্মীদের শেখ মুজিবুর রহমান ও শেখ হাসিনার ছবি ভাঙচুর করতে দেখা গেছে। ভবনের ভেতরে থাকা মুক্তিযোদ্ধাদের সামনে ক্ষিপ্ত হয়ে টেবিল চাপড়ে কথা বলছিলেন যুবদলের নেতাকর্মীরা।
ভাঙচুরের বিষয়ে বন্দর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, কমপ্লেক্সের ভেতরে ভাঙচুর করা হয়েছে, ব্যাপারটি এমন না। আসলে ভাঙচুর করার মতো তেমন কিছুই নেই।
বন্দর থানার ওসি তরিকুল ইসলাম বলেন, কমপ্লেক্সের ভেতরে থাকা ছবিগুলো ফেলে দেওয়া হয়েছে বলে জেনেছি। এই বিষয়ে এখনো কেউ অভিযোগ না করলেও কমপ্লেক্সের চাবিটি পুলিশের কাছে রয়েছে। পরে দায়িত্বরতদের কাছে দেওয়া হবে।