চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে বিএনপির সঙ্গে ছাত্রদলের দফায় দফায় হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় একাধিক ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে উভয়পক্ষের নেতাকর্মী ও পথচারীসহ অর্ধ-শতাধিক আহত হয়েছেন। এরমধ্যে একজনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাকে কুমিল্লায় রেফার করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) বিকালে প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী থেমে থেমে হাজীগঞ্জ বাজারে এ সংঘর্ষ হয়। পরে সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
জানা গেছে, কেন্দ্রীয় কর্মসূচীর অংশ হিসেবে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে হাজীগঞ্জ বাজারে বিজয় মিছিল বের করে উপজেলা ও পৌরসভা ছাত্রদল। দুপুর থেকেই হাজীগঞ্জ বাজারে অনুষ্ঠিত মিছিলে তারা শহীদ জিয়াউর রহমান, বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমান ও ইঞ্জিনিয়ার মমিনুল হকের স্লোগান দেয়।
এরপর বেলা আড়াইটার দিকে হাজীগঞ্জ উপজেলা ও পৌরসভা বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদলসহ সব সহযোগী সংগঠনের ব্যানারে হাজীগঞ্জ বাজারে বিজয় মিছিল বের করে বিএনপির আরেকটি গ্রুপ। বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন খোকনের সমর্থনে এই বিজয় মিছিলের আয়োজন করে তার সমর্থকরা। দুই পক্ষের এই মিছিলকে কেন্দ্র করে বাজারে উত্তেজনা দেখা দেয়।
এক পর্যায়ে দুই পক্ষের নেতাকর্মীদের মধ্যে দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। হামলায় নেতাকর্মীরা ইট ও কাঁচের বোতল ছুড়ে মারে। এ সময় ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে বাজারে আতঙ্ক সৃষ্টি করলে সব দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়।
খবর পেয়ে সেনাবাহিনীর সদস্য ও হাজীগঞ্জ থানা পুলিশ দুই পক্ষকে ধাওয়া দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সংঘর্ষে দুই পক্ষের নেতাকর্মী ও পথচারীসহ অর্ধ-শতাধিক আহত হন। আহতরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নিয়েছেন।
এ সংঘর্ষের জন্য ইঞ্জিনিয়ার মমিনুল হককে দায়ী করেন, উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেন খাঁন। তিনি বলেন, পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি বানচালের উদ্দেশ্যে মমিনুল হকের লোকজন আমাদের বিজয় মিছিলে হামলা করে। এতে আমাদের ১৫-২০ জন নেতাকর্মী আহত হয়। এর মধ্যে গুরুতর আহত অবস্থায় মিজানুর রহমান নামের একজনকে কুমিল্লায় পাঠানো হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ১৬ ডিসেম্বর তারা (ইঞ্জিনিয়ার মমিনুল হক) বিজয় দিবসের প্রোগ্রাম রেখেছিল। সে জন্য আমরা আজকে (১৭ তারিখ) বিজয় মিছিল করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি এবং প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে আজ (মঙ্গলবার) বিজয় মিছিল বের করি। কিন্তু তারা অতর্কিতভাবে আমাদের মিছিলে হামলা করে। আমরা তারেক রহমানের কাছে এর বিচার চাই। এসময় তিনি জানান, শতবাধা উপেক্ষা করে বিজয় মিছিল সম্পন্ন হয়েছে।
এ বিষয়ে উপজেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও উপজেলা যুবদলের সাবেক আহ্বায়ক আকতার হোসেন দুলাল বলেন, হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তিতে বিএনপির কোনো গ্রুপ নেই। গত ৫ আগস্টের পূর্বে যারা মিছিল, মিটিং, সভা-সমাবেশ করেছে, এখনো তারাই মিছিল-মিটিং করছে। সুতরাং এখানে সবাই এক, এখানে কোন বিভক্তি নেই। যারা বিশৃঙ্খলা করে, তারা বিএনপির কেউ নয়।
এ দিকে হামলার বিষয়ে উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এমএ রহিম পাটওয়ারী বলেন, কেন্দ্রীয় কর্মসূচীর অংশ হিসেবে আজ (মঙ্গলবার) হাজীগঞ্জ বাজারে বিজয় মিছিল করে ছাত্রদল। এই মিছিলটি গতকাল (সোমবার) হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু ওই দিন (সোমবার) আমাদের পূর্ব নির্ধারিত প্রোগ্রাম (বিজয় র্যালী) থাকার কারণে ছাত্রদল মিছিলটি করতে পারেনি।
তিনি বলেন, আজকে যখন তারা (ছাত্রদল) মিছিল করে, তখন কিছু দুস্কৃতকারী, যারা চাঁদাবাজি ও স্ট্যান্ড দখল করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে, তারাই হাজীগঞ্জ বাজারে নৈরাজ্য সৃষ্টির লক্ষে ছাত্রদলের মিছিলে হামলা করে।
তিনি জানান, হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তিতে বিএনপির কোন গ্রুপ নেই। গত ১৭ বছর শত নির্যাতন, মামলা হামলা সহ্য করে ইঞ্জিনিয়ার মমিনুল হকের নেতৃত্বে রাজপথে নেতাকর্মীরা ছিলো, আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে।
উপজেলা বিএনপির সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আলহাজ্ব ইমাম হোসেন বলেন, বিগত সরকারের আমলে আমরা রাজপথে মিছিল-মিটিং করেছি। এখনো করে যাচ্ছি। কিন্তু আজকে যারা দলের নাম ভাঙিয়ে হাজীগঞ্জে নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে চেয়েছিল, তারা এতোদিন কোথায় ছিল? দলীয় ব্যানারে যারা শান্ত হাজীগঞ্জকে অশান্ত করেছে এবং তারা যে ভাষায় কথা বলেছে, আমি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিল্পনা কর্মকর্তা ডা. আহমেদ তানভীর হাসান বলেন, হাসপাতালে ৮ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে উন্নত চিকিৎসার জন্য একজনকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে।
হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ফারুক বলেন, হাজীগঞ্জে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছিল। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ও স্বাভাবিক রয়েছে।