বিজয়ের অঙ্গীকার, প্রজন্মের কাছে প্রত্যাশা

: স্বপ্নীল ফিরোজ
প্রকাশ: ৫ মিনিট আগে

বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ শুধুমাত্র একটি ভূখণ্ডের স্বাধীনতার সংগ্রাম ছিল না; এটি ছিল একটি জাতির আত্মপরিচয় প্রতিষ্ঠার লড়াই। ১৯৭১ সালের এই গৌরবময় অধ্যায় বাঙালির চেতনা, সাহস এবং আত্মত্যাগের প্রতীক। এই বিজয়ের পেছনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বীর মুক্তিযোদ্ধারা, মুজিবনগর সরকার, এবং মুক্তিকামী জনগণের ঐকান্তিক প্রচেষ্টার পাশাপাশি ভারতের ঐতিহাসিক ভূমিকা অপরিসীম।

মুক্তিযুদ্ধে ভারতের ভূমিকা :

ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী শুধু রাজনৈতিকভাবে নয়, মানবিক এবং সামরিকভাবেও বাংলাদেশকে সহযোগিতা করেন। প্রায় ১ কোটি শরণার্থীকে ভারত আশ্রয় দিয়েছিল এবং তাদের খাওয়ানোর দায়িত্ব নিয়েছিল। যুদ্ধের শেষদিকে ভারতের সেনাবাহিনী বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সঙ্গে যৌথভাবে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করে।

মুক্তিযুদ্ধে ভারতের ১,৪৪৬ জন সৈনিক জীবন উৎসর্গ করেছেন এবং অনেক আহত হয়েছেন। ভারতের এই আত্মত্যাগ শুধু রাজনৈতিক কৌশল নয়; এটি ছিল মানবতার প্রতি তাদের দায়বদ্ধতার প্রকাশ। ভারতের সঙ্গে রাশিয়াও বাংলাদেশকে কূটনৈতিকভাবে সমর্থন দেয়। রাশিয়া জাতিসংঘে পাকিস্তানের পক্ষে যেকোনো পদক্ষেপ ঠেকানোর জন্য ভেটো দেয়।

পাকিস্তান ও তাদের মিত্রদের পরাজয় :

পাকিস্তান, চীন এবং তাদের মিত্ররা মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত হয়। পাকিস্তানি সেনারা বাংলাদেশের গ্রামে গ্রামে হত্যাযজ্ঞ চালায়, বুদ্ধিজীবীদের নির্মমভাবে হত্যা করে এবং নারীদের ওপর ভয়াবহ নির্যাতন চালায়। তাদের মদদপুষ্ট জামাতে ইসলামি, রাজাকার, আলবদর এবং আল শামস বাহিনী পাকিস্তানের হয়ে কাজ করেছিল। কিন্তু ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১-এ ঢাকা রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে বাঙালির বিজয় নিশ্চিত হয়।

৭১-এর পরাজিত শক্তির পুনরুত্থান :

দুঃখজনকভাবে, ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করার পর ৭১-এর পরাজিত শক্তি ধীরে ধীরে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হতে শুরু করে। তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংস করতে ষড়যন্ত্র করে, স্বাধীনতাবিরোধীদের রাজনীতিতে পুনর্বাসিত করে এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করার নীলনকশা আঁকে।

বর্তমানে, স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী শক্তি মিথ্যা প্রচারণা এবং প্রপাগান্ডার মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের মনে বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করছে। তারা মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস আড়াল করে ভিন্ন narrative তৈরি করতে চায়। ইতিহাস বিকৃতির এ প্রক্রিয়া মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে আঘাত করার একটি সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র।

ইতিহাস বদলানো যায় না :

ইতিহাসের সত্য চিরকাল অম্লান। মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় অধ্যায় এবং বাঙালির সংগ্রামকে কোনো বিকৃত তথ্য বা মিথ্যা প্রপাগান্ডা দিয়ে আড়াল করা সম্ভব নয়। যে জাতি নিজের রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছে, তাদের কাছে এ সত্য চিরকাল প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।

প্রজন্মের দায়িত্ব

আজকের প্রজন্মের দায়িত্ব হলো মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস জানানো এবং চেতনা বাঁচিয়ে রাখা। পাঠ্যপুস্তক, গবেষণা, স্মৃতিসৌধ এবং সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের সত্যকে তুলে ধরতে হবে। তবেই আমরা ৭১-এর চেতনাকে অমলিন রাখতে পারব এবং পরাজিত শক্তির ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দিতে পারব।

লেখক : টেক্সাস,  যুক্তরাষ্ট্র  থেকে

  • মুক্তিযুদ্ধ
  • স্বাধীনতার সংগ্রাম
  • #