অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত তিন মাসে দেশে ৭৪৩ জন খুন হয়েছে। এর মধ্যে নভেম্বরে ২১১, অক্টোবরে ২৪৯ ও সেপ্টেম্বরে ২৮৩টি খুনের মামলা নথিভুক্ত হয়। এ নিয়ে চলতি বছরের ১১ মাসে ৩ হাজার ১৮০ জন খুনের তথ্য জানা গেল। গত তিন মাসে ১৭২টি ডাকাতি ও ৩৯৪টি দস্যুতার মামলাও হয়েছে। আর চুরির ঘটনা ঘটেছে ২ হাজার ৭৫৫টি। গতকাল রোববার পুলিশ সদরদপ্তরের ওয়েবসাইটে এসব তথ্য প্রকাশ করা হয়।
এর আগে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর গত ৫ ডিসেম্বর প্রায় ছয় বছরের অপরাধ পরিসংখ্যান প্রকাশ করে পুলিশ সদরদপ্তর। সেখানে দেখা যায়, ঢাকাসহ সারাদেশে ছয় বছরে ১৯ হাজার ৪০ জন খুন হয়েছে। এর মধ্যে চলতি বছরের জুলাই ও আগস্টে নিহত ৯৫২ জন। যদিও এই দুই মাসে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে মৃত্যুর সংখ্যা হাজার ছাড়িয়েছে বলে বিভিন্ন সংগঠনের তথ্যে উঠে আসে। এর পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ জানায়, জুলাই-আগস্টে খুনের যে পরিসংখ্যান দেওয়া হয়েছে, তা শুধু মামলার ভিত্তিতে। ওই দুই মাসে নিহতের ঘটনায় পরের মাসগুলোতেও মামলা হয়েছে।
পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে জানা যায়, দেশে প্রতিবছর তিন হাজারের বেশি খুনের ঘটনা ঘটে। ২০২৩ সালে ৩ হাজার ২৩ জন এবং ২০২২ সালে ৩ হাজার ১২৬ জন খুন হয়। সেই হিসাবে প্রতিমাসে গড়ে ২৫৬ জন খুন হয়। এর সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায়, গত তিন মাসে খুনের ঘটনা প্রায় একইরকম রয়েছে। প্রতিমাসে গড়ে খুনের ঘটনা ঘটেছে ২৪৭টি। আর চলতি বছরের ১১ মাসের হিসাবে গড়ে প্রতিমাসে ২৮৯ জন খুন হয়েছে।
পুলিশ সদরের তথ্য অনুযায়ী, তিন মাসে দেশে ২ হাজার ৪৩টি চুরির ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়াও ৭১২টি চুরি হয়েছে বাসাবাড়িতে। অবশ্য চুরি-ডাকাতির ঘটনা প্রকৃতপক্ষে আরও বেশি বলে অভিযোগ রয়েছে। কারণ সব ঘটনায় ভুক্তভোগীরা মামলা করতে যান না। ফলে সেসব ঘটনা পরিসংখ্যানে অন্তর্ভুক্তও হয় না।
এদিকে তিন মাসে দেশে ৪ হাজার ৫৯০টি নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় সেপ্টেম্বরে ১ হাজার ৫৭৮, অক্টোবরে ১ হাজার ৫৬০ ও নভেম্বরে ১ হাজার ৪৫২টি মামলা হয়েছে। একই সময়ে অপহরণের ঘটনা ঘটেছে ২২৮টি। এর মধ্যে সেপ্টেম্বরে ৬৫, অক্টোবরে ৯৬ ও নভেম্বরে ৬৭টি মামলা হয়েছে। বিভিন্ন অপরাধের ঘটনায় এই তিন মাসে ৩৯ হাজার ৩৩৭টি মামলা নথিভুক্ত হয়েছে।
মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ উমর ফারুক বলেন, গবেষণায় দেখা গেছে, সার্বিক অপরাধের মাত্র ২৭ শতাংশ পরিসংখ্যানে আসে। অবশ্য খুনের ঘটনার বেশির ভাগই জানা যায় এবং পরিসংখ্যানে অন্তর্ভুক্ত হয়। তবে এখন চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইসহ সম্পত্তিসংক্রান্ত অপরাধ বেড়েছে। এসব ঘটনায় খুনখারাবিও হচ্ছে। কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে পুলিশ এখনও শক্তিশালী অবস্থানে না আসাসহ অন্য কারণে লোকজন থানায় কম যাচ্ছে। ফলে অনেক ঘটনা পরিসংখ্যানের বাইরে থেকে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, অপরাধ পরিসংখ্যান প্রকাশের বিষয়টি সাধুবাদযোগ্য। তবে আগে দেশে সুশাসন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো দেখানোর জন্য সরকার অপরাধের সংখ্যা কম দেখাত। এখন অন্য অপরাধ কমলেও সম্পত্তিসংক্রান্ত অপরাধ বেড়ে যাওয়ায় জনমনে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা রয়েছে। এই জায়গাটিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও নজর দিতে হবে।