‘ফাউন্ডেশন ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ’ নামে দেশে নতুন একটি গবেষণাধর্মী প্রতিষ্ঠানের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। এ প্রতিষ্ঠানটি রাষ্ট্রে সুশাসন, জাতীয় নিরাপত্তা, উন্নয়ন এবং পলিসি কর্মকৌশল নির্ধারণপ্রক্রিয়ায় ‘থিংক ট্যাংক’ হিসেবে গবেষণাকাজ করবে জানানো হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) ফজলে এলাহী আকবর।
রোববার রাতে রেডিসন ব্লু ওয়াটার গার্ডেন হোটেলের বলরুমে প্রতিষ্ঠানটির আত্মপ্রকাশের এই অনুষ্ঠান হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রতিষ্ঠানটির উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য তুলে ধরেন প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) ফজলে এলাহী আকবর।
প্রতিষ্ঠানের আত্মপ্রকাশের এই আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন সেনাবাহিনীর প্রধান ওয়াকার-উজ-জামান, বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার মার্শাল হাসান মাহমুদ খান ও নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ নাজমুল হাসান। আরও উপস্থিত ছিলেন সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক এবং সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল এম নুরুউদ্দিন খানসহ অবসরপ্রাপ্ত বেশ কিছু সেনা কর্মকর্তারা।
শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ছাড়া পররাষ্ট্রনীতি বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয় উল্লেখ করে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেছেন, শক্তিশালী প্রতিরক্ষা গড়ে তুলতে কোন কোন ক্ষেত্রে জোর দেওয়া উচিত, তা গবেষণার মাধ্যমে বের করতে হবে। একই সঙ্গে খাদ্য, পানি, জ্বালানি নিরাপত্তাসহ সব ক্ষেত্রেই গবেষণার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন তিনি।
অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, বাংলাদেশে অনেক গবেষণা সংস্থা আছে। তারা ভালো গবেষণা করেছে। কিন্তু নীতিনির্ধারণের ক্ষেত্রে গবেষণার ফলাফলের প্রতিফলন কম দেখা গেছে। সরকার ও বেসরকারি খাত যদি নীতি পদক্ষেপের ক্ষেত্রে গবেষণার ফলাফলকে বিবেচনায় না নেয়, তাহলে গবেষণা কাজে লাগবে না।
এফএসডিএস প্রতিষ্ঠাকে সময়োপযোগী উদ্যোগ হিসেবে বর্ণনা করে সেনাপ্রধান বলেন, সুশাসন, টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও জাতীয় সংহতির জন্য গবেষণাভিত্তিক নীতিকাঠামো দরকার। কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে নতুন এই প্রতিষ্ঠানকে সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দেন সেনাপ্রধান।
অনুষ্ঠানে এফএসডিএসের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) ফজলে ইলাহী আকবর বলেন, তাদের এই প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য হলো জাতীয় সংহতি ও অগ্রগতির স্বার্থে সবার মধ্যে সহযোগিতা ও সংযোগ বৃদ্ধি করা। তিনি বলেন, একই লক্ষ্য নিয়ে দেশে আরও কিছু চিন্তন প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তবে ফাউন্ডেশন ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের মূল দৃষ্টিভঙ্গি জাতীয় চেতনার মশাল প্রজ্বলিত করে-‘বাংলাদেশ ফার্স্ট’ নীতি অবলম্বন। এই প্রতিষ্ঠানের প্রধান মনোযোগ থাকবে জাতীয় নিরাপত্তা, বেসামরিক ও সামরিক খাতের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধি এবং ভূরাজনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি ভারসাম্যপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতি বজায় রাখতে সহযোগিতা করা।
বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ককে আরও সম্প্রসারিত করার জন্য আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকার বাজারে প্রবেশের উদ্যোগ নেওয়া দরকার জানিয়ে ফজলে এলাহী আকবর বলেন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও বাজার বৈচিত্র্যপূর্ণ করার মাধ্যমে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে হবে। বাংলাদেশের জন্য বঙ্গোপসাগর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এটি বৈশ্বিক বাণিজ্য ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে একটি কৌশলগত সামুদ্রিক অঞ্চল। এর প্রাকৃতিক সম্পদ ও গুরুত্বপূর্ণ শিপিং রুটগুলোর (সমুদ্র পরিবহনের পথ) প্রতি আন্তর্জাতিক মহলের আগ্রহ ক্রমে বাড়ছে। এটা বাংলাদেশকে আঞ্চলিক সামুদ্রিক নিরাপত্তায় প্রধান অংশীদার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করছে।
প্রতিবেশী দেশ ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সম্পর্ককে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে বলে উল্লেখ করে ফজলে এলাহী আকবর বলেন, ‘জাতীয় স্বার্থ ও নিরাপত্তার ভিত্তিতে কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন বজায় রাখা অপরিহার্য। যা আমাদের কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক উদ্যোগের মূল ভিত্তি হতে পারে। দুঃখজনকভাবে, আমাদের রাজনৈতিক আলোচনায় এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি প্রায়ই উপেক্ষিত হয়েছে।’
প্রতিষ্ঠানটির আত্মপ্রকাশের অনুষ্ঠানে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, মেজর (অব.)হাফিজ উদ্দিন আহমদ, ভাইস চেয়ারম্যান (অব.) এয়ার ভাইস মার্শাল আলতাফ হোসেন চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ইসমাইল হোসেন জবিউল্লাহ, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব এ বি এম আবদুস সাত্তার, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা মাহাদী আমিন, শামা ওবায়েদ, মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল, শায়রুল কবির খান প্রমুখ।
এ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক মুভমেন্টের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ।
আরও উপস্থিত ছিলেন উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম, ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম, মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, দেশ রূপান্তরের সম্পাদক কামাল উদ্দিন সবুজ, একুশে টেলিভিশনের চেয়ারম্যান আবদুস সালাম, সাবেক পুলিশপ্রধান আশরাফুল হুদা, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারসহ অবসরপ্রাপ্ত ঊর্ধ্বতন সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তারা।
অনুষ্ঠানে অতিথিদের ধন্যবাদ জানিয়ে বক্তব্য দেন মেজর জেনারেল এম আবুল কালাম। আরও বক্তব্য দেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মাহবুবউল্লাহ, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী, আইনজ্ঞ অধ্যাপক বোরহান উদ্দিন খান এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল আহসান।