গণপিটুনিতে গত ছয় মাসে ১২১ জন নিহত

: যথাসময় ডেস্ক
প্রকাশ: ৩ মাস আগে
প্রতীকী ছবি

উত্তরায় ছিনতাইকারী সন্দেহে দুই ব্যক্তিকে পিটিয়ে আহত করার পর পায়ে দড়ি বেঁধে পদচারী-সেতুর সঙ্গে তাঁদের উল্টো করে ঝুলিয়ে রাখা হয়। টঙ্গীতে ছিনতাইকারী সন্দেহে পিটুনিতে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল রাত সাড়ে ১০টার দিকে টঙ্গীর স্টেশন রোড এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে এ ঘটনা ঘটে। প্রাথমিকভাবে নিহত ওই যুবকের নাম-ঠিকানা জানাতে পারেনি পুলিশ।

নির্বিচার গণপিটুনি এবং তাতে হত্যা বাড়ছেই। একাধিক মানবাধিকার সংগঠনের হিসাবে দেখা গেছে, গত বছরের আগস্ট থেকে বিগত ছয় মাসে এ ধরনের গণপিটুনির ঘটনা ও নিহত মানুষের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। মানবাধিকার সংগঠন মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের (এমএসএফ) হিসাব অনুযায়ী, গত বছরের (২০২৪) আগস্ট থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত গণপিটুনিতে ১২১ জন নিহত হয়েছেন।

আরেক মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) হিসাব অনুযায়ী, ২০২০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে দেশে গণপিটুনিতে সর্বোচ্চ নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটে গত বছর। ২০২৪ সালে গণপিটুনিতে নিহত হন ১৪৬ জন, যা আগের বছরের প্রায় তিন গুণ। ২০২৩ সালে নিহত হয়েছিলেন ৫১ জন।

মানবাধিকারকর্মীদের মতে, গত ৫ আগস্টের পর ‘মব ভায়োলেন্স’ বা উচ্ছৃঙ্খল জনতার সহিংসতার পরিমাণ বেড়ে গেছে। সরকার তা বন্ধ করতে তেমন পদক্ষেপ নেয়নি। কখনো কখনো কাউকে জোর করে কোনো পদ থেকে নামিয়ে দেওয়াসহ নানাভাবে ‘মবের’ সাহায্য নেওয়া হয়েছে। এ কারণেই বেড়েছে এসব মবকেন্দ্রিক সহিংসতা বা গণপিটুনি।

মানবাধিকার সংগঠনগুলোও গণপিটুনিতে নিহত হওয়ার ঘটনা নিয়ে উদ্বিগ্ন। গণপিটুনির মতো এই মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা বেড়ে যাওয়ার পেছনে তিনটি কারণ উল্লেখ করে মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী মো. সাইদুর রহমান বলেন, প্রথমত, এটি ঘটছে পরিকল্পিত উসকানির কারণে। সরকারের সহযোগী বিভিন্ন গোষ্ঠী এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয় কিছু ব্যক্তি এতে ইন্ধন জোগাচ্ছেন। দ্বিতীয়ত, পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা একটা বড় কারণ। হয়তো ইচ্ছা করেই এ বাহিনীকে নিষ্ক্রিয় করে রাখা হয়েছে। সর্বোপরি সরকারের উদাসীনতা ও কোনো পদক্ষেপ নিতে অনীহার কারণেই বেড়ে যাচ্ছে গণপিটুনির প্রবণতা।

পুলিশের তথ্য বলছে, ছয় মাসে ডাকাতি ও দস্যুতার (ছিনতাই) ঘটনায় মামলা হয়েছে ১ হাজার ১৪৫টি, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৫০ শতাংশ বেশি। ডাকাতি ও দস্যুতা সাম্প্রতিক মাসগুলোয় আরও বেড়েছে। দেশে গত জানুয়ারিতে ডাকাতি ও দস্যুতার ঘটনায় মামলা হয়েছে ২৪২টি, যা গত বছরের একই মাসের তুলনায় ৯৯টি বেশি (৬৯ শতাংশ)। ডাকাতি ও দস্যুতার ঘটনায় গত ডিসেম্বরে মামলা হয়েছে ২৩০টি, যা গত বছরের একই মাসের তুলনায় ৯৫টি (৭০ শতাংশ) বেশি।

আইনজীবী শাহদীন মালিক বলছিলেন, গণপিটুনি এখন বেড়ে যাচ্ছে। কিন্তু একে নিয়ন্ত্রণে তেমন কোনো প্রচেষ্টা সরকারিভাবে দেখছি না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তাদের চাকরি ও বদলি নিয়ে তটস্থ। এমন দুরাবস্থা থাকলে ভালো কিছু করা সম্ভব নয়।

  • গণপিটুনি
  • নিহত
  • #