গণপিটুনিতে নিহত জামায়াত কর্মী নেজাম ও তাঁর বাহিনী গুলি ছোঁড়ে, মিলেছে বিদেশি পিস্তল : পুলিশ

: যথাসময় ডেস্ক
প্রকাশ: ৬ দিন আগে
নেজাম উদ্দিন ও আবু ছালেক, ছবি : সংগৃহীত

চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় ‘ডাকাত সন্দেহে’ গণপিটুনিতে দুজন নিহত হয়েছেন। গত সোমবার রাত ১০টার দিকে উপজেলার সাতকানিয়ার এওচিয়া ইউনিয়নের ছনখোলা পশ্চিমপাড়া এলাকায় এ ঘটনায় আরও চারজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। জামায়াতের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এই দুজন তাদের সক্রিয় কর্মী। এ ঘটনার পর থেকে এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা রয়েছেন সতর্ক অবস্থানে।

নিহত দুজন হলেন উপজেলার কাঞ্চনা ইউনিয়নের মধ্যমকাঞ্চনা এলাকার নেজাম উদ্দিন (৪৬) ও একই ইউনিয়নের গুরগুরি এলাকার আবু ছালেক (৩৮)। তাঁরা দুজনই জামায়াতের সাবেক সংসদ সদস্য শাহজাহান চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত। নেজাম উদ্দিনের বিরুদ্ধে হত্যাসহ ১০ টির বেশি মামলা রয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে সাতকানিয়া থানা-পুলিশ।

এ বিষয়ে জানতে জামায়াত চট্টগ্রাম মহানগরী আমির ও সাতকানিয়া-লোহাগাড়ার সাবেক সংসদ সদস্য শাহজাহান চৌধুরীর মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি একটি দলীয় প্রোগ্রামে ব্যস্ত বলে জানান তাঁর ব্যক্তিগত সহকারী রিপন।
সাতকানিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহেদুল ইসলাম গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘রাতে গোলাগুলির খবর পেয়ে আমরা ছনখোলা গ্রামে গিয়ে দুজনের লাশ উদ্ধার করি। নিহত দুজনই স্থানীয় গ্রামবাসীর হামলা-গণপিটুনিতে মারা গেছেন বলে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছি। ঘটনাস্থল থেকে একটি পিস্তল, গুলির ছয়টি খোসা ও একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা জব্দ করা হয়েছে। তবে নিহত ব্যক্তিরা কেন ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন, তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।’

পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, সোমবার রাত ১০টার মধ্যে চারটি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় চেপে একদল যুবক ছনখোলা পশ্চিমপাড়া এলাকায় গিয়ে এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ করতে থাকেন। এ সময় স্থানীয় মসজিদের মাইকে ‘ডাকাত আসছে, ডাকাত আসছে’ এমন ঘোষণার পর লোকজন জড়ো হয়ে বহিরাগত অস্ত্রধারী যুবকদের ঘিরে ফেলে। এরপরই বহিরাগত যুবকেরা গুলি চালাতে থাকেন।

এ সময় চারজন গুলিবিদ্ধ হন। এই চারজনের মধ্যে তিনজন স্থানীয় বাসিন্দা ও এক দোকানি। তাঁরা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। স্থানীয়রা বলছেন, নেজাম, ছালেকদের গুলিতে ওই ব্যক্তিরা আহত হয়েছেন।
সাতকানিয়ায় ডাকাত পড়েছে বলে মাইকে ঘোষণা দিয়ে মারধর, নিহত ২সাতকানিয়ায় ডাকাত পড়েছে বলে মাইকে ঘোষণা দিয়ে মারধর, নিহত ২

পুলিশ ও স্থানীয়দের ধারণা, একপর্যায়ে গুলি শেষ হলে বহিরাগতরা অদূরে রাখা তাঁদের গাড়িগুলোর দিকে এগোতে থাকেন। কিন্তু এর মধ্যে এলাকাবাসী লাঠিসোঁটা ও দেশীয় বিভিন্ন অস্ত্র নিয়ে নেজাম, ছালেকসহ বহিরাগতদের কয়েকজনকে ধরে গণপিটুনি দেন। এতে ঘটনাস্থলেই দুই যুবক নিহত হন। এক যুবকের লাশের পাশ থেকে একটি পিস্তল উদ্ধার করেছে পুলিশ।

চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘নিহতের পাশ থেকে উদ্ধার হওয়া পিস্তলটি বিদেশি। ধারণা করা হচ্ছে, গত ৫ আগস্ট কোনো থানা থেকে লুট হয়ে অস্ত্রটি এই যুবকদের হাতে এসেছে।’

উদ্দেশ্য ছিল লুটপাট :

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ছনখোলা ও কাঞ্চনা এলাকার একাধিক বাসিন্দা জানান, ছনখোলা গ্রামে আওয়ামী লীগ আমলে স্থানীয় চেয়ারম্যান মানিকের আধিপত্য ছিল। ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর মানিক এলাকা ত্যাগ করলে নেজাম উদ্দিন এলাকায় ফেরেন। এরপর থেকে মানিক চেয়ারম্যানের বাড়িঘর, গরুর খামার, ইটভাটা, বাগান লুট করেন নেজাম ও তাঁর বাহিনী। শুধু ছনখোলা গ্রামের মানিক চেয়ারম্যানের বাড়িই নয়, নেজাম বাহিনীর চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড কাঞ্চনা, এওচিয়া, চরতি, আমিলাইশ এলাকায়ও পৌঁছেছে। ঘটনার দিনও লুটপাটের উদ্দেশ্যে নেজাম বাহিনী ছনখোলা গ্রামে গিয়েছিল।

সাতকানিয়া উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি তারেক হোসাইন বলেন, আওয়ামী পলাতক সন্ত্রাসী মানিক চেয়ারম্যান ও তাঁর ক্যাডাররা পরিকল্পিতভাবে জামায়াতের দুই কর্মীকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেছে।

সূত্র : আজকের পত্রিকা
  • গণপিটুনি
  • চট্টগ্রাম
  • ডাকাত
  • নিহত
  • সাতকানিয়া
  • #