নারীর ওপর যৌন নিপীড়ন-হয়রানিতে উদ্বেগ, শিক্ষক নেটওয়ার্কের ৫ দাবি

: যথাসময় ডেস্ক
প্রকাশ: ১ সপ্তাহ আগে

দেশে নারীর প্রতি যৌন নিপীড়ন, হয়রানি, হিংসা, বিদ্বেষ, নানা নিপীড়নের ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক। সংগঠনটি বলেছে, কোনো ধরনের শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে স্বৈরাচারী কায়দায় নারীর প্রতি অব্যাহত যৌন নিপীড়ন, সহিংসতা ও বিদ্বেষকে প্রশ্রয় দেওয়া হলে সরকার ও সংশ্লিষ্টজনদের এর দায়ভার নিতে হবে। বুধবার এক বিবৃতিতে এ সংক্রান্ত ৫ দাবি তুলে ধরে শিক্ষক নেটওয়ার্ক।

বিবৃতিতে বলা হয়, আমরা অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করেছি যে, অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশে নারীর প্রতি যৌন নিপীড়ন, হয়রানি, হিংসা, বিদ্বেষ, অসূয়াসহ নানাবিধ নিপীড়নের ঘটনা উত্তরোত্তর বেড়েই চলেছে। নারীরা সমাজের বিভিন্ন স্তরে নানাভাবে হেয় প্রতিপন্ন হচ্ছেন, মাইক্রো-এগ্রেশনের শিকার হচ্ছেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ৯ জন ছাত্রীকে অগণতান্ত্রিক ও স্বৈরাচারী কায়দায় বহিষ্কার করা হয়েছে, যেটি নারীর প্রতি কাঠামোগত (সিস্টেমেটিক) নিপীড়নেরই একটি রূপ বলে আমরা মনে করি। জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ন্যাক্কারজনকভাবে নারীবিদ্বেষী কথা বলেছেন এবং সেটির সঙ্গে ধর্ম ও আইনের ভুল-ভাল ব্যাখ্যাকে কৌশলে যুক্ত করে দিয়েছেন।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, আমরা লক্ষ করছি যে, এ ধরনের বিদ্বেষ ও নিপীড়ন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও ঘটছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সম্প্রতি ‘বহিষ্কৃত’ ছাত্রীদের ব্যাপারে যথাযথ তদন্ত না করে এবং কোনো আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়েই দুই বছরের যে বহিষ্কারাদেশ দিয়েছিল, সিন্ডিকেট সভার পরেও প্রশাসন তা বহাল রেখেছে। যদিও এবার আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হয়েছে, কিন্তু এটি স্পষ্ট যে প্রথম দফায় সেই সুযোগ না রেখে শাস্তির সিদ্ধান্ত নেওয়া যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে হয়নি, ফলে সেই শাস্তি বহাল রাখারও যৌক্তিকতা নেই।

আরও বেশ কয়েকটি ক্যাম্পাসে এবং বাইরে নারী শিক্ষার্থীদের প্রতি অন্যায় ও নিপীড়নের ঘটনা ঘটেছে উল্লেখ করে শিক্ষক নেটওয়ার্ক বলে, ‘একটি নতুন ছাত্র সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর অত্যন্ত ন্যাক্কারজনকভাবে হামলা করা হয়েছে। এই হামলার সময় প্রতিবাদী ছাত্রীদের ওপর যৌন নিপীড়ন করেছে নতুন ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা। গণঅভ্যুত্থানের আগে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যেখানে সারাদেশেই স্বৈরাচারী সরকারের আক্রমণে নাজেহাল হয়ে পড়েছিল, তখন রাস্তায় নেমে বাংলাদেশকে পথ দেখিয়েছেন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তাদের এই অবদান এতটা অনস্বীকার্য হওয়ার পরেও তাদের কাউকেই সেভাবে কোনো স্তরেই মূল্যায়ন করা হয়নি। এমনকি নতুন ছাত্র সংগঠনেও না। স্বভাবতই তারা ক্ষুব্ধ হয়েছেন। কিন্তু, সেই ক্ষোভকে প্রশমন করতে যেভাবে তাদের ওপর হামলা চালিয়ে ছাত্রীদের যৌন নিপীড়ন করা হয়েছে, তা অত্যন্ত নিন্দনীয় ও ন্যাক্কারজনক।’

বিবৃতিতে যোগ করা হয়- দেশে ‘মব ইনজাস্টিস’ তৈরি করে বিষোদগারের চর্চা তো বন্ধ হচ্ছেই না, উল্টো তা দিনকে দিন বাড়ছে এবং এবার এর শিকার বানানো হয়েছে দুজন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীকে। খোদ সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ধর্ম টেনে ও আইনের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে মব তৈরিকারীদেরই প্রশ্রয় দিয়ে ঘটনার দায়ভার ছাত্রীদের ওপর চাপিয়েছেন যা অত্যন্ত নিন্দনীয়।

এতে আরও বলা হয়, ঢাকা থেকে রাজশাহীগামী রাতের বাসে ডাকাতির পর এক নারীকে ধর্ষণের খবর ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন মাধ্যমে। কিন্তু সেই ঘটনাটির কোনো সুরাহা এখনও পর্যন্ত করা হয়নি। উপরন্তু আমরা দেখলাম, ঘটনাটিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার লক্ষ্যে কতিপয় মিডিয়ার সাংবাদিক অকল্পনীয়ভাবে ভুক্তভোগীর কাছে গিয়ে ধর্ষণের ঘটনা জানতে চেয়েছেন এবং খুব স্বভাবতই সেই ভুক্তভোগী ধর্ষণের ঘটনাটিকে নাকচ করে দিয়েছেন। এমনকি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও ধর্ষণের ঘটনা ঘটেনি বলে সাফাই দিয়ে এমন দুর্ঘটনাকে লঘু করে দেখানোর অপচেষ্টা করেছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তনের দাবিও তুলেছে কতিপয় নারীবিদ্বেষী ব্যক্তি। নামকরণের রাজনীতিকে আমরা কখনোই প্রশ্রয় দিইনি, ভবিষ্যতেও দেবো না। কিন্তু, বাংলার নারী জাগরণের অগ্রদূত রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের জন্মস্থান রংপুরে তার নামাঙ্কিত বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম যারা পরিবর্তন করতে উদ্যত, তাদের প্রতি সাবধান বাণী উচ্চারণ করে আমরা বলতে চাই, আপনাদের জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা দিয়ে রোকেয়ার মতো মহিয়সী নারীর অবদানকে পরিমাপ করতে যাওয়ার যে ধৃষ্টতা আপনারা দেখিয়েছেন, তা সচেতন নাগরিক ও নারী সমাজ নিন্দাভরে প্রত্যাখ্যান করছে।

বিবৃতিতে শিক্ষক নেটওয়ার্ক যে ৫ দাবি উল্লেখ করেছে সেগুলো হল-

এক. অবিলম্বে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯ জন ছাত্রীর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার, প্রক্টরের পদত্যাগ এবং পুনরায় একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি। এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) প্রতিনিধি ও ছাত্রীদের প্রতিনিধি রেখে নতুন একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে পুনরায় তদন্ত করতে হবে এবং ছাত্রদের মব, সাংবাদিকদের ভূমিকা, ফেসবুকে যৌনবাদী মন্তব্যকারী এবং প্রক্টরদের ভূমিকাও বিবেচনা করে ব্যবস্থা নিতে হবে।

দুই. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিন এবং সংলগ্ন এলাকায় নতুন ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীদের প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা ও যৌন নিপীড়নের বিচার। বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়নবিরোধী সেলের মাধ্যমে দ্রুত ও সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে অপরাধীদের শাস্তি প্রদানের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি।

তিন. লালমাটিয়ায় মব তৈরি করে নারী শিক্ষার্থীদের ওপর আক্রমণ করা দোষী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে অবিলম্বে শাস্তির আওতায় আনার পাশাপাশি সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার এমন বক্তব্য কোনো ‘যদি-কিন্তু’ ছাড়া প্রত্যাহার করার দাবি।

চার. বাসে ধর্ষণের ঘটনার বিষয়ে কাণ্ডজ্ঞানহীন সাংবাদিকতার নিন্দা এবং ওই ডাকাতি ও নারীর প্রতি যৌন নিপীড়নের সঙ্গে যুক্ত অপরাধীদের খুঁজে বের করে শাস্তির আওতায় আনার দাবি।

পাঁচ. বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম বদলানোর প্রচেষ্টা নিন্দাভরে প্রত্যাখ্যান।

 

  • উদ্বেগ
  • দাবি
  • যৌন নিপীড়ন
  • শিক্ষক নেটওয়ার্ক
  • হয়রানি
  • #