মানবাধিকার ও আইনের শাসন রক্ষায় কাজ করা সংগঠন ও ইউরোপের আইনজীবীদের প্রতিনিধিত্বকারী শীর্ষ সংস্থা কাউন্সিল অফ বার্স অ্যান্ড ল সোসাইটিস অফ ইউরোপ (সিসিবিই) বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে দুটি গুরুত্বপূর্ণ চিঠি পাঠিয়েছে।
এই চিঠিগুলোতে ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজের গ্রেপ্তার এবং চট্টগ্রাম জেলা বার অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাচনে গণতান্ত্রিক অধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। জাস্টিস মেকার্স বাংলাদেশের অব্যাহত প্রচেষ্টার ফলাফল হিসেবে সিসিবিই এই পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, যা বাংলাদেশে আইনের শাসন ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ রক্ষায় আন্তর্জাতিক সমর্থনের ইঙ্গিত দেয়।
জাস্টিস মেকার্স বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন একটি অলাভজনক সংগঠন, যা বাংলাদেশে মানবাধিকার, আইনের শাসন, এবং সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করে। সংগঠনটি বিশেষ করে সংখ্যালঘু অধিকার, নারী নির্যাতন, এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। এক্স-এ তাদের সক্রিয় উপস্থিতির মাধ্যমে তারা জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধি এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজের গ্রেপ্তার এবং চট্টগ্রাম বার নির্বাচনের অনিয়ম নিয়ে তাদের প্রচেষ্টা আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলোর মনোযোগ আকর্ষণ করেছে।
কাউন্সিল অফ বার্স অ্যান্ড ল সোসাইটিস অফ ইউরোপ (সিসিবিই) হলো ইউরোপের ৪৫টি দেশের আইনজীবী সমিতির প্রতিনিধিত্বকারী একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা, যা প্রায় ১০ লাখ আইনজীবীর পক্ষে কথা বলে। ১৯৬০ সালে প্রতিষ্ঠিত এই সংস্থা আইনের শাসন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, এবং মানবাধিকার রক্ষায় কাজ করে। সিসিবিই বিশ্বব্যাপী আইনজীবীদের অধিকার এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্য বিভিন্ন দেশের সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে। বাংলাদেশে তুরিন আফরোজের গ্রেপ্তার এবং চট্টগ্রাম বার নির্বাচনের ঘটনায় তাদের চিঠি এই বিষয়ে তাদের সক্রিয় অবস্থানের প্রমাণ।
সিসিবিই-এর চিঠিতে বলা হয়েছে, গত ৭ এপ্রিল ঢাকার উত্তরার নিজ বাসা থেকে ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজকে একটি হত্যাচেষ্টা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই গ্রেপ্তারকে স্বেচ্ছাচারী ও সম্ভাব্য রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে করা হচ্ছে। তুরিন আফরোজ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (আইসিটি) সাবেক প্রসিকিউটর হিসেবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। তবে ২০১৯ সালে তাকে পেশাগত অসদাচরণের অভিযোগে আইসিটি থেকে অপসারণ করা হয়। গত বছর তিনি ইসলামপন্থী জনতার হামলার শিকার হন বলেও অভিযোগ রয়েছে, যা তার আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ততার কারণে হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। সিসিবিই এই গ্রেপ্তারের ন্যায্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে এবং তুরিনের ন্যায্য বিচারের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য ড. ইউনূসের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
দ্বিতীয় চিঠিতে চট্টগ্রাম জেলা বার অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাচনে গণতান্ত্রিক অধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে ধরা হয়েছে। নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার অভাব এবং সম্ভাব্য হস্তক্ষেপের কারণে আইনজীবীদের ভোটাধিকার বাধাগ্রস্ত হয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে। সিসিবিই এই ঘটনাকে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের লঙ্ঘন হিসেবে চিহ্নিত করে নির্বাচনী প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা এবং ন্যায্যতা নিশ্চিত করার জন্য সরকারের প্রতি জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে।
এই দুটি ঘটনা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক প্রতিবাদ ও আলোচনা চলছে। জাস্টিস মেকার্স বাংলাদেশের মতো সংগঠনগুলো এই বিষয়ে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। এক্স-এ পোস্ট করা তথ্য অনুযায়ী, জেএমবিএফ-এর প্রচেষ্টায় সিসিবিই এই চিঠি পাঠিয়েছে, যা আইনের শাসন ও গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থনের ইঙ্গিত দেয়। তবে, কিছু পোস্টে এই ঘটনাগুলোর রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট এবং তুরিন আফরোজের আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে বিতর্কও উঠেছে।