শিশুসহ আসামির স্ত্রীকে ২১ ঘণ্টা থানায় আটকে রাখার অভিযোগ

: যথাসময় ডেস্ক
প্রকাশ: ৯ ঘন্টা আগে

মানিকগঞ্জের সিংগাইরে আসামি ধরার সময় পুলিশের ওপর হামলা করে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় এক আসামির স্ত্রীকে তার দেড় বছর বয়সী শিশু সন্তানসহ ২১ ঘণ্টা থানায় আটকে রাখার অভিযোগ উঠেছে থানার ওসির বিরুদ্ধে। এছাড়া থানার এক এসআই আরেক আসামির আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে আহত করেন বলেও অভিযোগ। এ বিষয়ে সোমবার মানিকগঞ্জ পুলিশ সুপার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী এক নারী।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, মারামারির মামলায় আটককৃত এক আসামিকে হাতকড়াসহ পুলিশের হাত থেকে পালিয়ে যাওয়ার অপরাধে তার আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে আহত করেন সিংগাইর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) পার্থ শেখর ঘোষ। আহত সায়মা আক্তার সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন। তিনি সিঙ্গাইর উপজেলার ধল্লা ইউনিয়নের লক্ষীপুর গ্রামের হুমায়ুন মিয়ার স্ত্রী। হুমায়ুন মাসুম বাদশা নামের এক ব্যক্তিকে মারধর করার ঘটনায় দায়েরকৃত এজাহারভুক্ত আসামি।

এদিকে আসামি ধরার সময় পুলিশের ওপর হামলা করে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় আরেক আসামির স্ত্রী সোনিয়া আক্তারকে তার দেড় বছর বয়সী শিশু সন্তানসহ ২১ ঘণ্টা থানায় আটকে রাখার অভিযোগ করা হয়েছে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জেওএম তৌফিক আজমের বিরুদ্ধে। সোনিয়া আক্তার একই মামলার আসামি ওয়াজ উদ্দিনের মেয়ে। তার শিশুসন্তান ওয়াজ উদ্দিনের নাতি হয়। এ ঘটনায় হাতকড়াসহ পালিয়ে যাওয়া আসামির স্ত্রী সায়মা আক্তার মানিকগঞ্জ পুলিশ সুপার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন।

ভুক্তভোগী পরিবার ও সিঙ্গাইর থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত শনিবার দুপুর ৩টার দিকে সিংগাইর থানার এসআই পার্থ শেখর ঘোষসহ সঙ্গীয় ফোর্স মাসুদ বাদশার ওপর হামলা মামলার আসামি হুমায়ন মিয়াকে তার বাড়িতে গিয়ে হাতকড়া পরিয়ে গ্রেপ্তার করে। এ সময় পুলিশের সাথে হুমায়নসহ তার স্ত্রীর ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে আসামি হাতকড়াসহ পালিয়ে যায়। পুলিশের ধাক্কায় হুমায়নের আটমাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী সায়মা মাটিতে পড়ে গিয়ে আহত হন।

পুলিশ সুপার বরাবর পাঠানো সায়মা আক্তারের ‎অভিযোগ সুত্রে জানা গেছে, সায়মা আক্তার ৮ মাসের গর্ভবতীর হওয়ার কথা শোনার পরও এসআই পার্থ তাকে গালিগালাজ করতে থাকেন। একপর্যায়ে সায়মাকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দেন। এসময় অসুস্থ সায়মাকে সহযোগিতা করতে পাশের বাড়ির সোনিয়া আক্তার ও আরিফ নামের দুইজন এগিয়ে আসলে ওসির নির্দেশে তাদের আটক করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। পরবর্তীতে সোনিয়া আক্তারের দেড় বছরের সন্তান থাকায় ২১ ঘন্টা থানায় আটকে রেখে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয় ও আরিফকে আদালতে চালান করা হয়।

সায়মা আক্তারের অভিযোগে আরও বলা হয়, এ ঘটনার পর সিংগাইর থানার ওসি জেওএম তৌফিক আজম সায়মা আক্তারের বাড়িতে গিয়ে তাঁর পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের হুমকি দেন। পালিয়ে যাওয়া হুমায়ুন আত্মসমর্পণ না করলে পরিবারের সবাইকে গ্রেপ্তারের হুমকি দেওয়া হয়েছে।

এদিকে সিংগাইর থানা সূত্রে জানা যায়, আসামি হুমায়ুন পুলিশের হাত থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর সোমবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে হুমায়ুনের ভাই আক্তার হোসেন ও তার স্ত্রী ইয়াসমিনসহ তিনজনকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে এসআই পার্থ শেখর ঘোষ।

পুলিশের দাবি, আসামি হুমায়ুনকে গ্রেপ্তার করতে গেলে তাঁর পরিবারের সদস্যরাসহ আশপাশের লোকজন পুলিশকে বাধা দেয় এবং পুলিশের উপর হামলা চালায়। হামলায় এসআই পার্থ শেখর ঘোষ, পুলিশ সদস্য মাহবুবুর রহমান ও মো. শহীদুল ইসলাম আহত হয়। এ ঘটনায় এসআই পার্থ শেখর ঘোষ বাদী হয়ে ৯ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা ১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। এই মামলার আসামি আক্তার হোসেন, ইয়াসমিন আক্তার চায়না, আরিফ হোসেনসহ চারজনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, আসামি হুমায়ুন হাতকড়াসহ পুলিশের হাত থেকে পালিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত আসামিসহ হাতকড়াটি উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।

এসআই পার্থ শেখর ঘোষ অন্তঃসত্ত্বা সায়মা আক্তারকে ধাক্কা দেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, মাসুম বাদশা নামের এক ব্যক্তিকে হামলার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার আসামি হুমায়ুনকে গ্রেপ্তার করতে গেলে তাঁর পরিবারে সদস্যরা এবং আশপাশের লোকজন এগিয়ে এসে আমাদের ওপর হামলা চালিয়ে মব জাস্টিস পরিস্থিতি তৈরি করে হুমায়ুনকে পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করে।

সিংগাইর থানার ওসি জেওএম তৌফিক আজম বলেন, আসামি হুমায়ুনের হাতে হাতকড়া পড়ানোর আগেই তিনি পালিয়ে যান।শিশুসন্তানসহ সোনিয়াকে ২১ ঘণ্টা আটকে রাখার বিষয়ে ওসি বলেন, ‘আটককৃত সোনিয়াকে থানার আনার পর পরিবারের লোকজন সোনিয়ার সাথে সন্তানের দেখা করাতে থানায় নিয়ে আসে। তারা গারদের ভেতরে গিয়ে দেখা করে। কোনোভাবেই শিশুকে ২১ ঘণ্টা আটকে রাখা হয়নি।

ওসি আরও বলেন, আসামি পলায়নে সহযোগিতা, পুলিশের কাজে বাধা ও পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় তদন্তে সোনিয়া আক্তারের সম্পৃক্ততা না থাকায় তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। আর বাকি চারজন সম্পৃক্ত থাকায় তাদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

এ বিষয়ে মানিকগঞ্জের পুলিশ সুপার মোসাম্মৎ ইয়াছমিন খাতুন বলেন, একটি অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

  • অভিযোগ
  • আটকে রাখা
  • থানা
  • শিশুসহ আসামির স্ত্রী
  • #