ব্যক্তিপর্যায়ে আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্সের শর্ত কী, উড়োজাহাজে কি অস্ত্র ও গুলি বহন করা যায়?

: যথাসময় ডেস্ক
প্রকাশ: ১৪ ঘন্টা আগে

বাংলাদেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী একজন নাগরিক তার নিরাপত্তার জন্য আগ্নেয়াস্ত্র সাথে রাখতে পারেন। তবে এর জন্য তাকে অবশ্যই এর জন্য লাইসেন্স পেতে হবে। তা না হলে তার অস্ত্রটি অবৈধ বলে বিবেচিত হবে এবং এটি দেশের প্রচলিত আইনে দণ্ডনীয় অপরাধ।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রাজনৈতিক অধিশাখার জারি করা আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স প্রদান, নবায়ন ও ব্যবহার নীতিমালা ২০১৬‑তে বলা হয়েছে, খুব সাধারণভাবে একজন ব্যক্তি অস্ত্রের লাইসেন্স পেতে চাইলে তাকে আগে বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে। এরপর তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে পারবেন।

নীতিমালায় বলা হয়েছে, আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্সের আবেদনের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে শারীরিক ও মানসিকভাবে সমর্থ হতে হবে। এ ছাড়া তার বয়স হতে হবে ৩০ থেকে ৭০ বছর। পাশাপাশি তাকে নির্দিষ্ট কিছু শর্তও পূরণ করতে হবে।

শর্তগুলোর মধ্যে প্রথমেই আসে লাইসেন্স পেতে ইচ্ছুক ব্যক্তিকে অবশ্যই ব্যক্তি শ্রেণির আয়করদাতা হতে হবে। শুধু করদাতা হলেই হবে না আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্সের জন্য আবেদনের আগের অন্তত ৩ বছর তাকে ধারাবাহিকভাবে আয়কর দিতে হবে।

নীতিমালা অনুযায়ী, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি যদি পিস্তল, রিভলভার বা রাইফেলের জন্য লাইসেন্স করতে চান সেক্ষেত্রে এই ৩ বছর তাকে ন্যূনতম ৩ লাখ টাকা এবং শটগানের জন্য ন্যূনতম ১ লাখ টাকা আয়কর দিতে হবে। লাইসেন্সের আবেদনের সময় তাকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) একটি প্রত্যয়নপত্র জমা দিতে হবে।

আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্সের আবেদন করা ব্যক্তি যদি প্রবাসী বা দ্বৈত নাগরিক হন, সেক্ষেত্রে তাকে ৩ বছর ধারাবাহিকভাবে প্রতিবছর অন্তত ১২ লাখ টাকা রেমিট্যান্স পাঠাতে হবে। পাশাপাশি তিনি যে দেশে বাস করছেন, সে দেশে আয়কর দাখিলের প্রমাণপত্র সরবরাহ করতে হবে। এ ছাড়া রেমিট্যান্স পাঠানোর প্রমাণস্বরূপ সরকারি বা বেসরকারি ব্যাংকের প্রত্যয়নপত্রও লাইসেন্সের আবেদনের সঙ্গে জমা দিতে হবে।

সর্বোচ্চ কতগুলো অস্ত্র রাখা যাবে?

একজন ব্যক্তি কয়টি আগ্নেয়াস্ত্র রাখতে পারবেন, তাও দেশের প্রচলিত আইনে নির্দিষ্ট করে দেওয়া আছে। আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স প্রদান, নবায়ন ও ব্যবহার নীতিমালা ২০১৬‑তে এ বিষয়টিও স্পষ্ট করে বলা আছে।

নীতিমালা অনুযায়ী, একজন ব্যক্তির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সর্বোচ্চ একটি পিস্তল বা রিভলভার এবং একটি শটগান বা রাইফেলের লাইসেন্স দেওয়া যাবে। অর্থাৎ, একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ দুটি অস্ত্রের লাইসেন্স পাবেন। আবেদনকারীকে তার অস্ত্রের তথ্য সম্পর্কে সরকার নির্ধারিত মূল্যের নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে ঘোষণাপত্র দিতে হবে।

যারা এই নীতিমালা জারির আগেই দুইয়ের বেশি অস্ত্রের লাইসেন্স পেয়েছেন, তাঁরা যদি কোনো অস্ত্র বিক্রি বা হস্তান্তর বা হারিয়ে ফেলেন, এর পরিবর্তে আর কোনো লাইসেন্স পাবেন না।

অবশ্য বাংলাদেশ শ্যুটিং স্পোর্ট ফেডারেশনের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে নিবন্ধিত শ্যুটাররা সর্বোচ্চ তিনটি অস্ত্রের লাইসেন্স পেতে পারেন বলে নীতিমালায় বলা হয়েছে।

নীতিমালায় বলা হয়েছে, অবশ্য কোনো ব্যক্তি যদি ফৌজদারি মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি হয়ে থাকেন, তাহলে তিনি আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স পাবেন না। একইভাবে কোনো ব্যক্তি ফৌজদারি আদালতে সাজা পাওয়ার পর ৫ বছরের মধ্যে লাইসেন্স পাওয়ার যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন না।

আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স পেতে আবেদনকারীকে তার নিজ স্থায়ী ঠিকানার সংশ্লিষ্ট জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের (ডিসি) কাছে নির্ধারিত ফরমে আবেদন করতে হবে। সামরিক বাহিনীর সদস্যরা দি বেঙ্গল আর্মস অ্যাক্ট ম্যানুয়াল ১৯২৪‑এর ২ নম্বর চ্যাপ্টারের ৪০ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে আবেদন করবেন। সরকারি কর্মকর্তা‑কর্মচারীরাও যথাযথ কর্তৃপক্ষের সুপারিশসহ জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে আবেদন করতে পারবেন।

আবেদনের পর জেলা ম্যাজিস্ট্রেট নির্ধারিত ফরমে পুলিশের মাধ্যমে আবেদনকারীর প্রাক-পরিচয় যাচাই করবেন। এরপর তিনি আবেদনকারীর সাক্ষাৎকার নেবেন এবং আবেদনকারীর শারীরিক ও মানসিক সামর্থ্য, আবেদন করা অস্ত্র এবং এর রক্ষণাবেক্ষণ সম্পর্কে জ্ঞান ও অস্ত্রের প্রয়োজনীয়তা বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে নির্ধারিত ফরমে মন্তব্য লিপিবদ্ধ করবেন।

আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স প্রদান, নবায়ন ও ব্যবহার নীতিমালা ২০১৬‑তে আরও বলা হয়েছে, সকল আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স প্রদানের জন্য সংশ্লিষ্ট বিধিবিধান অনুসরণ সাপেক্ষে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ক্ষমতাবান থাকবেন। জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কার্যালয়ের আগ্নেয়াস্ত্র শাখায় উক্ত জেলার ইস্যুকৃত সকল আগ্নেয়াস্ত্রের রেকর্ড সংরক্ষিত হবে।

অবশ্য সরকারের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীসহ উচ্চপর্যায়ের ব্যক্তিরা লাইসেন্স পাওয়ার ক্ষেত্রে বয়স এবং কর সম্পর্কিত বিধানের বিশেষ ছাড় পাবেন বলে নীতিমালায় বলা হয়েছে।

উড়োজাহাজে কি অস্ত্র ও গুলি বহন করা যায়?

অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে আগ্নেয়াস্ত্র ও গুলি বহনের সুযোগ রয়েছে। তবে এক্ষেত্রে বেশ কিছু কঠোর নিয়ম মেনে চলার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এ বিষয়ে এয়ারলাইনসগুলোর বৈশ্বিক জোট আইএটিএ এবং আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান পরিবহন সংস্থার (আইকাও) বেশ কিছু নির্দেশনা আছে। পাশাপাশি বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষেরও (বেবিচক) কিছু নিয়ম রয়েছে।

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) নিয়ম অনুযায়ী, অস্ত্র ও গুলি বহনের জন্য অবশ্যই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে লিখিত অনুমতি নেওয়ার বাধ্যবাধকতা আছে। আইকাওয়ের অ্যানেক্স ১৭ ও ১৮ ধারায় অস্ত্র ও গুলি পরিবহনের বিষয়গুলো বিস্তারিত উল্লেখ করা আছে।

সাধারণভাবে অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটে অস্ত্র ও গুলি বহনের ক্ষেত্রে আগ্রহী ব্যক্তিকে আগে থেকেই বিষয়টি সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইনসকে জানাতে হয়। চেকইনের সময় নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া মেনে সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইনস অস্ত্র ও গুলি বহনের কাজটি সম্পন্ন করবে। প্রত্যেকটি এয়ারলাইনসেরই এ‑সংক্রান্ত নির্দিষ্ট বিধি আছে। সাধারণত উড়োজাহাজে অস্ত্র পরিবহনের জন্য একটি বিশেষ ধরনের কনটেইনার ব্যবহার করা হয়।

আর গুলি পরিবহনের জন্য রয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। সাধারণত গুলির ধরন অনুযায়ী আলাদা আলাদা নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। এ ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা হয় বিশেষ ধরনের কনটেইনার। এর আগেই অবশ্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে একটি ঘোষণাপত্র দিতে হবে। এতে সেই অস্ত্র ও গুলির ধরন এবং কী কাজে এসব ব্যবহার হবে, তার বিস্তারিত বর্ণনা থাকতে হবে।

আর অস্ত্র ও গুলি যদি এক দেশ থেকে আরেক দেশে বহন করতে হয়, সেক্ষেত্রে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট দেশের সরকারের কাছ থেকে অনুমোদন নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে দুই ধরনের অনুমোদন নিতে হয়। যদি ব্যক্তি নিজের ব্যবহারের জন্য অস্ত্র সঙ্গে নিতে চান, তাহলে তাঁকে ব্যক্তিগত ব্যবহারের অনুমতি নিতে হবে। আর যদি অস্ত্র কেনাবেচার উদ্দেশ্যে বহন করেন, তাহলে এ‑সংক্রান্ত ব্যবসা করার অনুমতি থাকতে হবে।

কোনো দেশ থেকে অস্ত্র ও গুলি বিদেশে পাঠানোর সময় সেই দেশের শুল্ক বিভাগেরও কিছু নিয়মকানুন মেনে চলতে হয়। বিশ্বের বেশ কিছু দেশে সামরিক অস্ত্র বা যুদ্ধে ব্যবহার হয়–এমন অস্ত্র ব্যক্তিগতভাবে ব্যবহার করা যায় না। এ ধরনের অস্ত্র পরিবহনের বিষয়ে দেশভেদে নানা নিয়ম রয়েছে।

  • আগ্নেয়াস্ত্র
  • ব্যক্তিপর্যায়
  • লাইসেন্স
  • শর্ত
  • #