সম্প্রতি শর্টফিল্ম ‘চেঞ্জিং ব্যাটারিজ’ দেখলাম। ছবির গল্পটা এইরকম….
এক বৃদ্ধা গ্রামের বাড়িতে একা থাকেন। একদিন তাঁর কাছে একটা পার্সেল এল, সঙ্গে ছোট একটি চিঠি। পাঠিয়েছে তার প্রবাসী ছেলে। এ বছর সে কাজের কারণে বাড়িতে ফিরতে পারবে না। তাই মায়ের দেখাশোনা করার জন্য সে ওই পার্সেলে পাঠিয়েছে একটি দারুণ জিনিস।
মা পার্সেল খুলে দেখলেন, ছেলে পাঠিয়েছে ছোট্ট একটি রোবট। তো সেই রোবট বৃদ্ধার সঙ্গে থাকে, ঘরের বাগানের যাবতীয় কাজ করে, তারপর সন্ধ্যাবেলায় ঘরের বারান্দায় বসে একসঙ্গে সূর্যাস্ত দেখে। দু’জনের মধ্যে ভারি সুন্দর একটি সম্পর্ক তৈরি হয়। দু’জন দু’জনের বন্ধু এবং আশ্রয় হয়ে ওঠে।
একদিন খাবার টেবিলে দু’জন গল্প করতে করতে বৃদ্ধা দেখেন রোবটটি নেতিয়ে পড়ছে। তিনি বুঝতে পারেন তার চার্জ শেষ হয়ে আসছে। সঙ্গে সঙ্গে রোবটের বুকের মাঝখানে রাখা ধাতব পকেটটি খুলে পুরনো ব্যাটারি ‘রিপ্লেস’ করে দেন, রোবট আবার নতুন উদ্যমে বেঁচে ওঠে।
এইভাবেই চলতে থাকে জীবন। একদিন বৃদ্ধার ডাক বাক্সে দু’টি সার্কাসের টিকিট আসে। বৃদ্ধা সেই রোবটকে নিয়ে সার্কাসে যাবেন ভাবেন এবং সার্কাস জিনিসটা কী, তা ওই ছোট্ট রোবট’কে বুঝিয়ে দেন। বালক রোবট’টি শুনে ভারী উচ্ছ্বসিত। কিন্তু তার পরদিন থেকেই বৃদ্ধা অসুস্থ হয়ে পড়েন। বার্ধক্যজনিত অসুস্থতা বাড়তে বাড়তে একদিন বিকেলের দিকে তিনি চেয়ারে বসে থাকতে থাকতে নেতিয়ে পড়েন।
রোবট ভাবে তার মতো ওই বৃদ্ধারও বুঝি চার্জ শেষ হয়ে এসেছে। সে তক্ষুনি ঘরে গিয়ে তার জন্য রাখা ব্যাটারি নিয়ে এসে বৃদ্ধার ফতুয়ার পকেটে সেই ব্যাটারি ভরে দেয়। কিন্তু সে তো আর জানে না, মানুষের চার্জার রোবটের মতো ‘রিপ্লেস’ করা যায় না। একবারেই জন্যই চার্জ নিয়ে তার এই পৃথিবীতে আসা। চার্জ শেষ তো গল্প শেষ। রিচার্জ করার জন্য কোনও সুযোগ নেই।
তো বৃদ্ধা প্রাণত্যাগ করেছেন, সেটা ওই রোবট বুঝতেই পারে না। সে ঘরে যত ব্যাটারি ছিল, সব এনে বৃদ্ধার শরীরের সব জায়গায় রাখে, তবু আর জেগে ওঠে না সে।
পরের দৃশ্যে দেখা যায় রোবট’টি ঠিক আগের মতোই রোজের কাজগুলো করছে একা একা। গাছে জল দেওয়া থেকে খেতের কাজ, ঘরদোর মোছা, সবকিছু। তারপর সূর্যাস্তের সময় সেই পশ্চিমমুখী ছোট বারান্দাটায় এসে বসেছে সূর্যাস্ত দেখবে বলে। পাশে সেই বৃদ্ধার খালি চেয়ারটি।
এমন সময় রোবটটি বুঝতে পারে তারও চার্জ আবার ফুরিয়ে আসছে। আবছা হয়ে আসছে চারপাশের সবকিছু। কিন্তু তাকে ব্যাটারি পালটে রিচার্জ করার মতো কেউ নেই। রোবট’টি তার শেষ অবস্থায় হ্যালুসিনেসনে চলে যায়। দেখতে পায় তার সেই মাতৃসমা বৃদ্ধা এসে সামনে দাঁড়িয়েছে। তার একহাতে দু’টি সার্কাসের টিকিট, অন্য হাতটি সে বাড়িয়ে দেয় রোবটের দিকে। তারপর দু’জনে হাত ধরাধরি করে হাঁটতে থাকে বিশাল মাঠের মাঝখানে এক সার্কাসের তাঁবুর দিকে। ক্যামেরা ‘লং শট’ থেকে ‘ফেড আউট’ হতে থাকে। আর মনটা কেমন ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে।
লেখক : চেয়ারম্যান শেরে বাংলা ফাউন্ডেশন ও আওয়ামী লীগ নেতা