‘অনার কিলিং’ বা সম্মান রক্ষার নামে হত্যাকাণ্ডের প্রবণতা রয়েছে পাকিস্তানে। এরই ফলশ্রুতিতে টিকটক অ্যাকাউন্ট না মুছায় নিজের ১৬ বছর বয়সি মেয়েকে গুলি করে হত্যা করেছেন এক বাবা। শুক্রবার পুলিশের পক্ষ থেকে এই মর্মান্তিক ঘটনাটি নিশ্চিত করা হয়েছে। দেশটির পাঞ্জাব প্রদেশের রাওয়ালপিন্ডিতে এই ঘটনা ঘটে। এক পুলিশ মুখপাত্র বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, মেয়েটির বাবা তাকে টিকটক অ্যাকাউন্ট মুছে ফেলতে বলেন। সে অস্বীকৃতি জানালে, তিনি তাকে হত্যা করেন।
পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিহত কিশোরী ‘পরিবারের সম্মান রক্ষার নামে হত্যাকাণ্ড বা অনার কিলিং’-এর শিকার হয়েছে। প্রথমদিকে মেয়েটির পরিবার আত্মহত্যা বলে ঘটনাটি চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু তদন্তে সত্য উদঘাটিত হলে মেয়েটির বাবাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এই ঘটনার মাত্র এক মাস আগে আরেক কিশোরী টিকটক তারকা ১৭ বছর বয়সী সানা ইউসুফকে গুলি করে হত্যা করা হয়। তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্যাফে, স্কিনকেয়ার পণ্য ও ঐতিহ্যবাহী পোশাক নিয়ে ভিডিও করতেন এবং তার অনুসারীর সংখ্যা ছিল লাখের বেশি। অভিযোগ, এক ব্যক্তির প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় তাকে হত্যা করা হয়।
টিকটক পাকিস্তানে অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি অ্যাপ, বিশেষ করে কম শিক্ষিত জনসংখ্যার মধ্যে। অনেক নারী এই অ্যাপের মাধ্যমে নিজেদের উপার্জনের পথ খুঁজে পেয়েছেন, যা পাকিস্তানের মতো দেশে এক বিরল বিষয়। সেখানে নারীদের মাত্র এক চতুর্থাংশই আনুষ্ঠানিক কর্মক্ষেত্রে কাজ করেন। তবে মোবাইল ব্যবহারে নারীদের অংশগ্রহণ এখনও খুব কম। মোবাইল জেন্ডার গ্যাপ রিপোর্ট ২০২৫ অনুযায়ী, পাকিস্তানে মাত্র ৩০ শতাংশ নারীর ব্যক্তিগত স্মার্টফোন রয়েছে, যেখানে পুরুষদের মধ্যে এই হার ৫৮ শতাংশ—যা বিশ্বে সর্বোচ্চ ব্যবধান। অন্যদিকে, ‘অশ্লীলতা ছড়ানোর’ অভিযোগে পাকিস্তানি টেলিযোগাযোগ কর্তৃপক্ষ (পিটিএ) একাধিকবার টিকটক বন্ধ করেছে বা বন্ধের হুমকি দিয়েছে।
বছরের শুরুতে পাকিস্তানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় বেলুচিস্তানে এক বাবা নিজের ১৪ বছর বয়সি মেয়েকে হত্যা করেন। তার অভিযোগ ছিল, মেয়েটির টিকটকে আপলোড করা ভিডিওগুলো পরিবারের ‘সম্মানহানি’ ঘটিয়েছে। সেখানে অনেক এলাকায় এখনও উপজাতীয় আইন চলে।
এই ধারাবাহিক ‘অনার কিলিং’ বা সম্মান রক্ষার নামে হত্যাকাণ্ড দেশটির সামাজিক ও প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের মুখে নারীদের প্রতি সহিংস মানসিকতার একটি গভীর সংকটকে সামনে আনছে।