নাটক সাজিয়ে কলেজছাত্রকে হত্যার অভিযোগ, বিচার দাবিতে পুলিশ সুপারের কার্যালয় ঘেরাও

: যথাসময় ডেস্ক
প্রকাশ: ১৫ ঘন্টা আগে

গাইবান্ধায় কলেজছাত্র সিজু মিয়া (২১) হত্যার বিচারের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন এলাকাবাসী। শনিবার বিকাল ৫টা থেকে এক ঘণ্টাব্যাপী শহরের পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সামনে এ মানববন্ধন হয়। এরপর সন্ধ্যা ৬টা থেকে আধা ঘণ্টা তারা একই স্থানে গাইবান্ধা-পলাশবাড়ী সড়ক অবরোধ করে রাখেন। এ সময় সড়কের উভয় পাশে যানবাহন আটকে থাকে। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে সোয়া ৭টা পর্যন্ত পুলিশ সুপার কার্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান নেন এবং কার্যালয় ঘেরাও করে রাখেন আন্দোলনকারীরা।

মানববন্ধনে বক্তব্য দেন গাইবান্ধা সদর উপজেলার গিদারি ইউনিয়নের কলেজশিক্ষক শাহজাহান মিয়া, গিদারি ইউপি সদস্য রমজান আলী ও হিরু মিয়া, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গাইবান্ধা জেলার সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মেহেদী হাসান, সংগঠক অতনু সাহা ও জাহিদ হাসান, নিহত সিজু মিয়ার মা রিক্তা বেগম, বড় বোন খুশি বেগম প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, সাঘাটা থানার ভেতরে ও পুকুরে সিজু মিয়াকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। কিন্তু পুলিশ শুক্রবার প্রেস ব্রিফিং করে ঘটনা সম্পর্কে মিথ্যাচার করেছে। তারা সাজানো নাটক প্রচার করে। সাঘাটা থানার ওসি বাদশা আলমের নির্দেশে থানার ভেতর সিজুকে পিটিয়ে হত্যা করা হয় বলে দাবি করে বক্তারা বলেন, সিজু জীবন বাঁচাতে পুকুরে ঝাঁপ দিলে সেখানেও ওসির নির্দেশে পানির ওপর পেটানো হয়। পুকুরের পানিতে এই পেটানোর ভিডিও নিহতের স্বজনরা হাতে পেয়েছেন।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, সিজু মিয়া একজন কলেজছাত্র। তিনি কয়েক দিন আগে ছয় হাজার টাকায় একটি স্মার্টফোন কিনেছিলেন। সেটি চোরাই বলে পুলিশ গত বৃহস্পতিবার দুপুরে তার কাছ থেকে ফোনটি ফিরিয়ে নেয়। ফোন নেওয়ার বিষয়টি জানতে সিজু ওই দিন বিকালে সাঘাটা থানায় গিয়েছিলেন। কী অপরাধ ছিল সিজুর। ফোন কেনার অপরাধে কেন থানায় ডেকে নিয়ে এবং পুকুরের ভেতর কুপিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হলে। ঘটনার পর থেকে সাঘাটা থানার ওসি বাদশা আলম দীর্ঘ সময় গা ঢাকা দিয়ে থাকেন। শুক্রবার রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি ও গাইবান্ধার পুলিশ সুপার নিশাত এ্যাঞ্জেলা ওসি বাদশা আলমকে বাঁচানোর জন্য শুক্রবার সাঘাটা থানায় গিয়েছিলেন।

ঘেরাওয়ের কারণে পুলিশ সুপার তার কার্যালয়ে অবরুদ্ধ হয়ে থাকেন। এ অবস্থায় তার পক্ষে গাইবান্ধার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অবস) শরিফুল আলম সড়কে বেরিয়ে আসেন। তিনি আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে বলেন, ‘এই হত্যার বিচার আপনারা পাবেন।’

অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের আশ্বাসে সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। এ সময় সেনাবাহিনী আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করে। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে পুলিশ সুপার নিহত সিজু মিয়ার মা, বোন এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের তার কক্ষে ডেকে নিয়ে বিচারের আশ্বাস দেন।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাতে থানার সামনে একটি সালিস বৈঠক চলছিল। রাত ১০টার দিকে এক যুবক সাঘাটা থানার কম্পিউটার কক্ষে যান। তিনি প্রথমে কম্পিউটার অপারেটরকে অভিযোগ লেখার কথা বলেন। অপারেটর ওই যুবককে বাইরে থেকে লিখে আনার পরামর্শ দেন। এ নিয়ে উভয়ের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে ওই যুবক থানায় দায়িত্বরত কনস্টেবলের কাছ থেকে বন্দুক নেওয়ার চেষ্টা করেন। তখন দায়িত্বরত কনস্টেবল চিৎকার করলে পাশের রুমে থাকা উপসহকারী পরিদর্শক (এএসআই) মহসিন মিয়াসহ কয়েকজন এসে বন্দুক উদ্ধার করেন। এ সময় ওই যুবককে ধরার চেষ্টা করলে যুবকের কাছে থাকা ধারালো চাকু দিয়ে এএসআই মহসিনকে আঘাত করে পালিয়ে যান। পরে থানা ভবনের পার্শ্ববর্তী সাঘাটা পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের পুকুরে যুবককে দেখা যায়। শুক্রবার সকালে পুকুর থেকে লাশ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস।

পুকুর থেকে রাতেই কেন সিজুকে তুললেন না জানতে চাইলে সাঘাটা থানার ওসি বাদশা আলম বলেন, ‘বৃহস্পতিবার সারারাত আমরা সিজুকে পুকুরের পানি থেকে ওঠানোর জন্য চেষ্টা করেছি। তার সঙ্গে কথা হয়েছে। আমরা বলেছি, তুমি পানি থেকে উঠে আসো, সমস্যা নেই। ফায়ার সার্ভিস ডুবুরি না থাকায় গভীর পানি থেকে তাকে তোলা হয়নি। পুলিশের কোনও গাফিলতি ছিল না।’

  • অভিযোগ
  • কলেজছাত্র
  • ঘেরাও
  • পুলিশ সুপার. কার্যালয়
  • হত্যা
  • #