যশোরের অভয়নগরে ব্যবসায়ীকে বালুতে পুঁতে ও অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে এক বছরে চার কোটি টাকা চাঁদা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় গত বুধবার থানায় এবং বৃহস্পতিবার সেনাক্যাম্পে লিখিত অভিযোগ দেন ভুক্তভোগী শাহনেওয়াজ কবীর টিপুর স্ত্রী আসমা খাতুন। তবে অভয়নগর থানা অভিযোগ নেয়নি বলে জানান তিনি।
টিপু নওয়াপাড়ার জাফ্রিদী এন্টারপ্রাইজের কর্ণধার। অন্যদিকে অভিযুক্তরা হলেন উপজেলার নওয়াপাড়া পৌর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক (পদ স্থগিত) আসাদুজ্জামান জনি ও নওয়াপাড়া প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান।
সেনাক্যাম্প সূত্র জানিয়েছে, সেনাবাহিনী অভিযোগ তদন্ত এবং অভিযুক্তদের আটকে তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে। অভয়নগর থানার ওসি আব্দুল আলীম জানান, মৌখিক অভিযোগ পেয়ে তারা তদন্ত শুরু করেছেন। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সূত্রের দাবি, যশোর শহরের বেজপাড়া শ্রীধরপুকুরপাড় এলাকায় বিএনপি নেতা জনি অবস্থান করছেন– এমন তথ্যে শনিবার দুপুরে অভিযান চালায় যৌথ বাহিনী। তবে তিন ঘণ্টার অভিযানে কেউ আটক নেই। জেলা ডিবির ইনচার্জ মঞ্জুরুল হক ভূঁইয়া জানান, অভিযানে তারা থাকলেও বিস্তারিত কিছু জানেন না।
ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী টিপু বলেন, ‘পরিবার নিয়ে আমি আতঙ্কে দিন পার করছি। প্রাণভয়ে এলাকায় যেতে পারি না। কোথাও সুরাহা না পেয়ে আমার স্ত্রী সেনাবাহিনীর শরণাপন্ন হয়েছেন।’
আসমা খাতুন জানান, গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর কৌশলে সৈকত হোসেন হিরার মাধ্যমে তাঁর স্বামী টিপুকে নিজের অফিসে ডেকে নেন বিএনপি নেতা আসাদুজ্জামান জনি। সেখানে তাঁকে মারধর ও অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে দুই কোটি টাকা দাবি করেন জনি। সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক থেকে জনির নিজ প্রতিষ্ঠানের হিসাবে দুই কোটি টাকা আরটিজিএস করে পাঠান আসমা খাতুন। টাকা পেয়ে টিপুকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এর পর ১৮ সেপ্টেম্বর সকালে গ্রামের বাড়ি চলিশিয়া থেকে মোটরসাইকেলে বাজারে যাওয়ার পথে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ফটকের পর টিপুর গতিরোধ করেন হিরা। জনি নিজের কেনা ইকো পার্কে টিপুকে নিয়ে গেছেন বলে জানানো হয়।
আসমা খাতুন বলেন, ‘আমি পার্কে গেলে জনি, সম্রাট হোসেন ও সাংবাদিক মফিজুর রহমান আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকিয়ে আমাদের মারধর করেন। এর পর বুক পর্যন্ত গর্ত খুঁড়ে টিপুকে বালুচাপা দিয়ে আরও দুই কোটি টাকা দিতে বলেন। বাধ্য হয়ে আমার স্বামী ম্যানেজারকে ফোন করে টাকা দিতে বলেন। ম্যানেজার পূবালী ব্যাংক থেকে ৬৮ ও সাউথ বাংলা ব্যাংক থেকে ৩২ লাখ টাকা সাংবাদিক মফিজের হিসাবে আরটিজিএস করেন। টিপুর কাছ থেকে মফিজ এক কোটি টাকার চেক নেন। এ ছাড়া জনি ও দিলিপ সাহার নামে কেনা ছয়টি ফাঁকা স্ট্যাম্পে টিপুর সই রেখে দেন। কাউকে কিছু বললে হত্যার হুমকি দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়।’
অভিযোগ দেওয়ার পর জনি ও মফিজ আত্মগোপনে। তাদের মোবাইল নম্বরও বন্ধ। তবে নিজের ফেসবুকে জনি ঘটনার ইঙ্গিত দিয়ে লিখেছেন, আমি ষড়যন্ত্রের শিকার। সময় এলে ষড়যন্ত্রকারীদের শিকড় উৎপাটন করব।
জেলা বিএনপির সভাপতি সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু বলেন, ‘ব্যবসায়ী টিপুর কাছ থেকে টাকা আদায়ের বিষয় জানা নেই। তবে শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকায় জনির বিরুদ্ধে আগেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তিনি এখন দলের কেউ নন।’