চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিএসএফের নির্যাতনে দুই বাংলাদেশির মৃত্যু

: যথাসময় ডেস্ক
প্রকাশ: ২ সপ্তাহ আগে

চাঁপাইনবাবগঞ্জের পদ্মা নদী থেকে ভাসমান অবস্থায় বিএসএফের নির্যাতনের শিকার দুইজনের মৃতদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। চোরাচালানের উদ্দেশে ভারতে যাওয়ার পথে বিএসএফের নির্যাতনে তাদের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি স্থানীয়দের। শনিবার বিকাল ৩টার দিকে শিবগঞ্জ উপজেলার মনাকষা ইউনিয়নের বাতাসি মোড় এলাকার নদী থেকে লাশ দুটি উদ্ধার করা হয় বলে জানান শিবগঞ্জ থানার ওসি গোলাম কিবরিয়া।

মৃতরা হলেন উপজেলার মনাকষা ইউনিয়নের তারাপুর হঠাৎপাড়া গ্রামের মরহুম গোলাম মর্তুজার ছেলে মো. সেলিম রেজা (২৫) এবং একই এলাকার সিরাজুল ইসলামের ছেলে শফিকুল ইসলাম (৪৫)।

স্থানীয়দের বরাতে ইউপি সদস্য মো. সমির উদ্দীন বলেন, শফিকুল ও সেলিম পদ্মায় মাছ ধরার পাশাপাশি সীমান্তে চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। বৃহস্পতিবার রাতে তারা নদীপথে ভারতে অনুপ্রবেশ করেন। এরপর থেকে তারা নিখোঁজ ছিলেন। তাদের শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন দেখা গেছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৫৩ বিজিবি ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফাহাদ মাহমুদ রিংকু বলেন, সীমান্ত পিলার ৪/২-এস থেকে আড়াই কিলোমিটার বাংলাদেশের অভ্যন্তরে পদ্মা নদীতে ভাসমান অবস্থায় মৃতদেহ দুটি উদ্ধার হয়েছে। স্থানীয়রা তাদের শনাক্ত করেছেন।

তিনি বলেন, বিষয়টি শিবগঞ্জ থানা-পুলিশকে জানানো হলে তারা মৃতদেহ দুটি নিয়ে যায়। তবে এ বিষয়ে মৃত ব্যক্তিদের পরিবার বিজিবির সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করেননি।

ময়নাতদন্তের জন্য দুজনের মৃতদেহ নৌ-পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে; তবে তারা কীভাবে মারা গেছে তা এখনি বলা সম্ভব নয় বলে জানান ওসি গোলাম কিবরিয়া।

স্থানীয়রা জানান, বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) সন্ধ্যার দিকে শিবগঞ্জের মাসুদপুর সীমান্ত দিয়ে ভারতে অনুপ্রবেশ করেন শফিকুল ও সেলিম। এরপর থেকে তারা নিখোঁজ ছিলেন। এরই মধ্যে শনিবার দুপুরে নিশিপাড়া এলাকায় শফিকুলের এবং বিশরশিয়া এলাকা থেকে সেলিম রেজার লাশ উদ্ধার করে বিজিবি-পুলিশ। তবে তারা মাছ ধরতে না কি গরু চোরাচালানির কাজে ভারতে গিয়েছিলেন তা নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।

শিবগঞ্জ থানার ওসি মো. গোলাম কিবরিয়া বলেন, ‘সীমান্ত এলাকায় পদ্মা নদীতে দুজনের লাশ ভাসতে দেখে বিজিবি আমাদের খবর দেয়। এরপরই পুলিশ পাঠানো হয়। দুটিই অর্ধগলিত লাশ। যার কারণে আঘাতের চিহ্ন বোঝা যাচ্ছে না।’

চাঁপাইনবাবগঞ্জ ৫৩ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে.কর্নেল ফাহাদ মাহমুদ রিংকু বলেন, ‘মাসুদপুর বিওপির সীমান্ত পিলার ৪/২-এস থেকে আনুমানিক ২.৫ কিমি বাংলাদেশের অভ্যন্তরে পদ্মা নদীতে দুজনের লাশ দেখতে পেয়ে পুলিশকে জানানো হয়েছে। ওই দুজনকে বিএসএফ হত্যা করেছে কি না, আমরা নিশ্চিত নই। তবে নিহতদের পরিবারের সদস্যরা আমাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করেননি।’

তিনি আরও বলেন, ‘স্থানীয়দের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা ভারতের ৭১ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। কিন্তু তারা অস্বীকার করেছে।’

স্থানীয়রা আরও জানান, ওই রাতে পদ্মা নদী পাড়ি দিয়ে নিহতরা ভারতে অনুপ্রবেশ করেন। এরপর তাদের সঙ্গে পরিবারের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তাদের খুঁজতে ভারতে বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগ করে পরিবার দুটি। তবে তাদের কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। এরমধ্যে শনিবার বিকালে পাঁকা ইউনিয়নের নিশিপাড়া চর এলাকায় শফিকুলের এবং বিশরশিয়া এলাকায় পদ্মার মাঝখানে সেলিম রেজার লাশ ভাসতে দেখেন জেলেরা। পরে তাদের লাশ উদ্ধার করা হয়। তবে তারা দুজন পদ্মায় মাছ ধরতে গিয়েছিল নাকি সীমান্ত পেরিয়ে গরু আনতে গিয়েছিল তা নিয়ে এলাকার মানুষের মাঝে দুই ধরনের বক্তব্য পাওয়া গেছে।

এলাকাবাসীর একাংশ জানায়, শফিকুল ও সেলিম দুজন সীমান্ত পেরিয়ে গরু আনতে ভারতে গিয়েছিল। গরু নিয়ে ভারতের ধুলিয়ান ঘাট থেকে পদ্মায় নেমে পড়েন তারা। মাঝপথে বিএসএফ স্পিডবোট নিয়ে তাদের তাড়া করে। পরে আটকের পর তাদের হত্যা করে পদ্মায় ভাসিয়ে দেয় বিএসএফ।

মনাকষা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মো. সমির উদ্দীন বলেন, ধারণা করা হচ্ছে, পদ্মা নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে প্রবল স্রোতের কারণে তারা ভারতের অভ্যন্তরে ঢুকে পড়ে। ভারতের বিএসএফ চোরাকারবারি ভেবে তাদের আটক করে হত্যা করে থাকতে পারে।

মনাকষা ইউপির ৮ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মোহা. সমির উদ্দীন ও গ্রামের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শনিবার উপজেলার পাকা ইউপির বাতাসার মোড় এলাকার পদ্মা নদীর তীরে ও নদীর ৮ নম্বর বাঁধ এলাকার নদীতে ভাসমান অবস্থায় লাশ দুটি উদ্ধার করেন নিহত দুজনের স্বজনেরা। পরে মাসুদপুর সীমান্ত ফাঁড়ির বিজিবি সদস্য, থানা পুলিশ ও নৌ পুলিশের হেফাজতে লাশ দুটি নেওয়া হয়। শফিকুলের লাশ বেলা দুইটার দিকে ও সন্ধ্যা ছয়টার দিকে সেলিমের লাশ তারাপুর হঠাৎপাড়ার একটি আমবাগানে নিয়ে আসা হয়।

চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৫৩ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেনেন্ট কর্নেল ফাহাদ মাহমুদ, শিবগঞ্জ থানার ওসি গোলাম কিবরিয়া, নিহত শফিকুলের স্ত্রীর বড় ভাই মনাকষা ইউপির ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য সমির উদ্দীন ও স্থানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শফিকুল ইসলাম পদ্মা নদীতে মাছ ধরার পাশাপাশি সীমান্তে চোরাচালানের সঙ্গেও জড়িত ছিলেন। গত বৃহস্পতিবার রাতে শফিকুল ইসলাম ও একই গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক গোলাম মর্তুজার ছেলে মো. সেলিম (৩৫) নদীপথে সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে যান। এর পর থেকেই তাঁরা নিখোঁজ ছিলেন।

পরে শনিবার সীমান্তবর্তী পাকা ইউপির বাতাসার মোড় এলাকায় পদ্মা নদীর তীর থেকে শফিকুলের লাশটি উদ্ধার করে আত্মীয়স্বজন বাড়ি নিয়ে আসছিলেন। পথে তারাপুর এলাকায় বিজিবি লাশটি নিজেদের হেফাজতে নেয়। স্থানীয় মানুষের দাবি, ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) নির্যাতনে মারা গেছেন শফিকুল। অন্যদিকে বেলা তিনটার দিকে পদ্মা নদীর ৮ নম্বর বাঁধ এলাকার নদীতে ভাসমান অবস্থায় মো. সেলিমের লাশ উদ্ধার করেন স্থানীয় ব্যক্তিরা। তাঁর শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। অনেকগুলো ফোসকা রয়েছে। এগুলো অ্যাসিডে দগ্ধ হয়ে পড়া ফোসকার মতো। এ ছাড়া তাঁর অনেকগুলো দাঁত ভাঙা ছিল। গলা দিয়ে রক্ত বের হওয়ার চিহ্নও রয়েছে।

৫৩ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফাহাদ মাহমুদ বিকেল সাড়ে চারটার দিকে বলেন, লাশ দুটি পুলিশের কাছে হস্তান্তরের অপেক্ষায় রয়েছে। কীভাবে তাঁরা নিহত হয়েছেন, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। দুজনেরই শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ময়নাতদন্তের পর বোঝা যাবে মৃত্যুর কারণ। খোঁজ নেওয়া হলে বিএসএফ জানায়, তাদের কাছে কোনো তথ্য নেই। এদিকে পরিবারের পক্ষ থেকেও কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি।

  • চাঁপাইনবাবগঞ্জ
  • নির্যাতন
  • বাংলাদেশি
  • বিএসএফ
  • মৃত্যু
  • #