যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম ডেসারাট নিউজে লেখা এক নিবন্ধে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জানিয়েছেন, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে। আর নির্বাচন শেষেই তিনি রাষ্ট্রের সব দায়িত্ব ছেড়ে দেবেন। নির্বাচনে যে সরকার গঠিত হবে সেটির কোনো পদেই থাকবেন না বলে স্পষ্ট করেছেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, আমাদের মূল লক্ষ্য একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের আয়োজন করা। যেখানে সব দলের জন্য সমান সুযোগ থাকবে। প্রবাসী নাগরিকদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করাও আমাদের অঙ্গীকার।
প্রফেসর ইউনূসের নিবন্ধটির মূল বিষয়বস্তু তুলে ধরা হল— এক বছর আগে, এই মাসেই বাংলাদেশের হাজার হাজার সাহসী ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ শিক্ষার্থী, যাদের পেছনে ছিল সমাজের সব স্তরের অগণিত মানুষের সমর্থন, আমাদের জাতির ইতিহাসে একটি অন্ধকার অধ্যায়ের অবসান ঘটিয়েছিল। শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের মাধ্যমেই তারা একজন স্বৈরাচারকে ৫ আগস্ট দেশ ছাড়তে বাধ্য করে। যা শেষ পর্যন্ত নিষ্ঠুরভাবে দমন করা হয়েছিল।
তাদের আহ্বানে ৮ আগস্ট ২০২৪ তারিখে একজন অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান হিসেবে আমি শপথ গ্রহণ করি। আমাদের লক্ষ্য ছিল দেশকে স্থিতিশীল করা এবং গণতন্ত্রের পথে ফিরিয়ে নেওয়া।
এই আন্দোলন শুরু হয়েছিল একটি সাধারণ দাবি থেকে—সরকারি চাকরিতে ন্যায্যতার নিশ্চয়তা। কিন্তু তা রূপ নেয় বিশ্বের প্রথম জেনারেশন জেড বিপ্লবে। এই বিপ্লব তরুণদের জন্য একটি আদর্শ হয়ে উঠেছে।
গণতান্ত্রিক উত্তরণের স্বীকৃতি হিসেবে দ্য ইকোনমিস্ট ২০২৪ সালে বাংলাদেশকে কান্ট্রি অব দ্য ইয়ার ঘোষণা করে। যদিও আমরা তখন ব্যস্ত ছিলাম অর্থনীতি পুনর্গঠন, নির্বাচন প্রস্তুতি এবং লুট হওয়া সম্পদ পুনরুদ্ধারে, কিন্তু বিশ্ব আমাদের অগ্রগতির প্রশংসা করে।
আমাদের সরকারের অগ্রাধিকার ছিল—নির্যাতনে নিহত বা আহত পরিবারগুলোর ক্ষতিপূরণ এবং লুটপাট হওয়া অর্থ ফেরত আনা। টিআইবি জানিয়েছে, আগের সরকার প্রতি বছর ১০ থেকে ১৫ বিলিয়ন ডলার বিদেশে পাচার করেছে।
ক্ষমতা গ্রহণের সময় আমরা দেখি—প্রশাসন ভেঙে পড়েছে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে গেছে, অর্থনীতি বিপর্যস্ত এবং হাজার হাজার মানুষ নির্যাতনকেন্দ্রে আটক। কিন্তু ধাপে ধাপে আমরা পুনর্গঠন শুরু করেছি।
আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে—এই ঘোষণা আমি দিয়েছি এবং স্পষ্ট করেছি। তাছাড়া পরবর্তী সরকারে আমি কোনো নির্বাচিত বা নিয়োগপ্রাপ্ত পদে থাকবো না।
আমাদের মূল লক্ষ্য একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন, যেখানে সব দলের জন্য সমান সুযোগ থাকবে। প্রবাসী নাগরিকদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করাও আমাদের অঙ্গীকার।
একইসঙ্গে, আমরা নতুন সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাব দিয়েছি, যাতে ভবিষ্যতে আর কোনো স্বৈরতন্ত্র মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে।
বাংলাদেশকে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধির কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে গড়ে তুলতে আমরা প্রতিবেশী ও বৈশ্বিক অংশীদারদের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করছি। এর অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রশাসন ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী রুবিওর সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ নিয়ে গঠনমূলক আলোচনা হয়েছে।
যুক্তরাজ্য, জাপান, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, বিশ্বব্যাংক ও জাতিসংঘ আমাদের সহায়তা করে যাচ্ছে।আমরা একা নই—এই পথে বিশ্বের সমর্থন আমাদের সঙ্গে রয়েছে’।