৩৩ বছর আগে ডুবে যাওয়া বাণিজ্যিক পণ্যবাহী একটি জাহাজ প্রায় ৭০ হাত মাটির নিচ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার তেঁতুলিয়া নদীর উপকূল থেকে জাপানি জাহাজটি উদ্ধার করা হয়।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ১৯৯২ সালের আগস্ট মাসে চট্টগ্রাম থেকে বৈদ্যুতিক মালামাল নিয়ে এম.ভি মোস্তাবি নামের জাহাজটি খুলনার উদ্দেশে রওয়ানা হয়েছিলো। পথিমধ্যে মেহেন্দীগঞ্জের আলীমাবাদ ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের মিঠুয়া এলাকার তেঁতুলিয়া নদীতে ঝড়ের কবলে পড়ে পন্যবাহী ওই জাহাজটি ডুবে যায়। তৎকালীন সময় সরকারি উদ্যোগে কিছু মালামাল উদ্ধার করা সম্ভব হলেও জাহাজটি উদ্ধার করা যায়নি।
সূত্রে আরও জানা গেছে, প্রায় দুই যুগ আগে নদী থেকে জেগে ওঠা চরের নামকরন করা হয় “চর মিঠুয়া গ্রাম”। পরে ফসল আবাদ থেকে শুরু করে ওই গ্রামে বসতি গড়ে ওঠে। তার আগে ওই চরসহ ইউনিয়নের বিশাল অংশছিলো উত্তাল তেঁতুলিয়া নদীর অংশ। বঙ্গোপসাগরের সাথে সংযোগের কারণে এ রুটে চলাচল করত বড় বড় জাহাজ।
জাহাজ উত্তোলনের সাথে জড়িত আব্দুল মান্নান বলেন, আমি ১৯৮৮ সাল থেকে মোংলাপোর্ট ও চট্টগ্রামপোর্টে কাজ করছি। তেঁতুলিয়া নদীতে ডুবে যাওয়া জাহাজটি উদ্ধারের জন্য সবাই অপরাগতা প্রকাশ করে সম্প্রতি সময়ে আমাকে ডাকেন। পরবর্তীতে দীর্ঘদিনের চেষ্টার পর গত মাসের শেষের দিকে প্রায় পাঁচ একর জমি খননের পর ৭০ হাত মাটির নিচ থেকে জাহাজটি উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছি।
আব্দুল মান্নান আরও বলেন, উদ্ধার করা জাহাজটির দৈর্ঘ্য ১৮০ ফুট, প্রস্ত ১৪ ফুট এবং উচ্চতা ১৭ ফুট। জাহাজের দামি যন্ত্রাংশের মধ্যে রয়েছে মেশিন। যে মেশিন বর্তমান বাজারে নেই বললেই চলে। থাকলেও নতুন মেশিনের মূল্য হবে আনুমানিক ১৪ থেকে ১৫ কোটি টাকা। আর বিকল মেশিনটি ভাঙারি হিসেবে বিক্রি করলেও প্রায় ২৫ লাখ টাকায় বিক্রি করা সম্ভব হবে।
জাহাজ উদ্ধার কাজের ঠিকাদার ইউসুফ মিয়া বলেন, বন্দর কর্তৃপক্ষ বা সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থা ডুবে যাওয়া জাহাজের অবস্থান এবং পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে একটি দরপত্র (টেন্ডার) আহবান করে বিআইডব্লিউটিএ। টেন্ডার আহবানের পর বিশ লাখ টাকায় মেসার্স অগ্রনী ওয়াটার ট্রান্সফোর্ট লাইসেন্সে কাজ পায় খুলনার ঠিকাদার আনসার উদ্দিন মিয়া। তার কাছ থেকে আমি সাব ডাক নিয়েছি। এরপর ২০১২ সাল থেকে আমার উদ্ধার কাজ শুরু করি। দীর্ঘ এক যুগেরও অধিক সময়ের চেষ্টায় ৩৩ বছর আগে ডুবে যাওয়া বাণিজ্যিক পণ্যবাহী জাহাজটি অতিসম্প্রতি আমরা উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছি।
ঠিকাদার ইউসুফ মিয়া আরও বলেন, পাঁচ একর জমি খনন করে জাহাজ উদ্ধারকারী তিনটি শক্তিশালী বিকেবার্স ব্যবহার করা হয়েছে। এর জন্য বিশেষ ধরনের ক্রেন, ডুবুরি এবং অন্যান্য আধুনিক প্রযুক্তি ও সরঞ্জাম ব্যবহার করা হয়। তিনি বলেন, আমার আগে আরও তিনটি পার্টি লাখ লাখ টাকা খরচ করেও জাহাজটি উদ্ধারে ব্যর্থ হয়।
মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রিয়াজুর রহমান বলেন, অনেক আগেই বিআইডব্লিউটিএ টেন্ডার আহবান করলে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার সেই টেন্ডার লাভ করেন। এরপর যথাযথ প্রক্রিয়া মেনেই জাহাজটি উত্তোলন করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, প্রায় ৩৩ বছর পূর্বে ডুবে যাওয়া জাহাজ উদ্ধারের খবর মুহুর্তের মধ্যে সর্বত্র ছড়িয়ে পরলে প্রতিদিন ওই এলাকায় উৎসুক জনতার ভীড় লেগেই রয়েছে।