পুলিশ বাহিনীর বেহাত অস্ত্রের সন্ধান দিতে পারলে অর্থ পুরস্কারের ঘোষণা দিয়েছিল অন্তর্বর্তী সরকার। এ ঘোষণার প্রায় তিন সপ্তাহ পার হলেও তেমন সাড়া মেলেনি। গতকাল রোববার পর্যন্ত এক হাজার ৩৫৩ অস্ত্র বেহাতই রয়ে গেছে।
গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিভিন্ন থানা-ফাঁড়ি, পুলিশ বক্সসহ ইউনিট-স্থাপনায় হামলা-ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এসব স্থাপনা থেকে ৫ হাজার ৭৬৩টি আগ্নেয়াস্ত্র লুট করা হয়। বেহাত হয় ছয় লাখ ৫২ হাজার আট রাউন্ড গুলি। গতকাল পর্যন্ত উদ্ধার হয়েছে চার হাজার ৪১০টি অস্ত্র ও তিন লাখ ৫৪ হাজার ৩৪৯ রাউন্ড গুলি।
গত ২৫ আগস্ট সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত কোর কমিটির সভা শেষে সাংবাদিকদের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, কেউ যদি লুট হওয়া পিস্তল ও শটগানের সন্ধান দেন, তাঁকে ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হবে। একইভাবে চায়না রাইফেলের জন্য ১ লাখ, এসএমজির জন্য দেড় লাখ ও এলএমজির জন্য ৫ লাখ টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে। আর লুট হওয়া গুলির সন্ধান দিলে প্রতিটির জন্য মিলবে ৫০০ টাকা।
পুলিশ সূত্র বলছে, লুট হওয়া আগ্নেয়াস্ত্র-গোলাবারুদের মধ্যে আছে বিভিন্ন ধরনের রাইফেল, এসএমজি (স্মল মেশিনগান), এলএমজি (লাইট মেশিনগান), পিস্তল, শটগান, গ্যাসগান, কাঁদানে গ্যাস লঞ্চার, কাঁদানে গ্যাসের শেল, কাঁদানে গ্যাসের স্প্রে, সাউন্ড গ্রেনেডসহ বিভিন্ন বোরের গুলি।
এদিকে কারা অধিদপ্তর সূত্র জানায়, জুলাই আন্দোলনের সময় বিভিন্ন কারাগার থেকে দুই হাজার ২০০ আসামি পালিয়ে যান। তাদের মধ্যে এক হাজার ৫০০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এখনও পলাতক ৭০০। তাদের মধ্যে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্তসহ অতি ঝুঁকিপূর্ণ ৭০ আসামি রয়েছেন।
পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা বলছেন, সারাদেশে পুলিশের চলমান অভিযানে অস্ত্র জব্দকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। পুরস্কার ঘোষণার পর এখনও তেমন সাড়া পাওয়া না গেলেও পুলিশ আশাবাদী। নির্বাচন সামনে রেখে অস্ত্র উদ্ধারের বিষয়টি বেশি প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে।
পুলিশের আরেক সূত্র বলছে, এসব অস্ত্র কোনো সন্ত্রাসী গ্রুপ ও অপরাধীদের হাতে পৌঁছে গেছে কিনা, সেটি খতিয়ে দেখছেন গোয়েন্দারা। এরই মধ্যে পেশাদার অপরাধীদের কাছ থেকে লুণ্ঠিত বেশ কিছু অস্ত্র পাওয়া গেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগ্নেয়াস্ত্র বেশি দিন বেহাত থাকলে সন্ত্রাসী, বিচ্ছিন্নতাবাদী, উগ্র, সুযোগসন্ধানী গোষ্ঠীসহ অপরাধ জগতে চলে যেতে পারে। এতে হুমকির মুখে পড়ে জনজীবনের নিরাপত্তা, যা ইতোমধ্যে সারাদেশে বিভিন্ন এলাকায় দেখা যাচ্ছে।
গত বছরের ২৯ আগস্ট চট্টগ্রামের বায়েজিদ বোস্তামী এলাকায় মো. আনিছ নামে এক ব্যবসায়ীকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ পাঁচটি গুলির খোসা ও অস্ত্র বহনের একটি ব্যাগ জব্দ করে। পরে পুলিশ জানায়, উদ্ধার গুলির খোসায় পুলিশ লেখা।
গত বছরের ১৪ নভেম্বর কোস্টগার্ডের সদস্যরা কক্সবাজারের মহেশখালীর কালারমারছড়া ইউনিয়নের মোহাম্মদ শাহ ঘোনা এলাকায় অভিযান চালিয়ে একটি পিস্তলসহ জিয়াউর রহমানকে গ্রেপ্তার করেন। জিজ্ঞাসাবাদে জিয়াউর জানান, তিনি ডাকাত দলের সরদার। আগে অস্ত্রসহ আত্মসমর্পণ করলেও চট্টগ্রামে পুলিশের স্থাপনা থেকে পিস্তল লুট করে আবার ডাকাতি করছেন জিয়াউর।
গণভবনের দায়িত্বে থাকা এসএসএফ সদস্যদের কাছে বিভিন্ন ধরনের ট্যাকটিক্যাল গিয়ার, অস্ত্র, গোলাবারুদ, বেতার যোগাযোগ ও অপারেশনাল সরঞ্জাম মজুত ছিল। এ ছাড়া জাতীয় সংসদ ভবনেও এসএসএফের অস্ত্র-গোলাবারুদ মজুত রাখা হয়েছিল। গত বছরের ৫ আগস্ট এ দুটি স্থান থেকেই অস্ত্র লুট হয়।
সূত্র : সমকাল