শহীদ মিনারে সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের মরদেহে শ্রদ্ধা

: যথাসময় ডেস্ক
প্রকাশ: ১৫ ঘন্টা আগে

শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নেওয়া হয়েছে বরেণ্য শিক্ষাবিদ ও সাহিত্যিক সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের মরদেহ। শনিবার বেলা ১১টার পর মরদেহ সেখানে নেওয়া হয়। এর আগে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার সামনে মরদেহ নেওয়া হয়। এরপর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নিয়ে যাওয়া হয় সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য।

অপরাজেয় বাংলায় কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক সিদ্দিকুর রহমান খান, ইংরেজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তাজিন আজিজ চৌধুরী, ইংরেজি অ‍্যালামনাই অ‍্যাসোসিয়েশন, সংগীত বিভাগসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা ফুল দিয়ে মনজুরুল ইসলামের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

জাতীয় কবিতা পরিষদ জানিয়েছে, শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রাখা হবে। বাদ জোহর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদে জানাজা শেষে মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তাঁর লাশ দাফন করা হবে।

রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার বিকেলে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর। তিনি স্ত্রী, এক পুত্রসহ স্বজন ও অনেক গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের মৃত্যুর খবরে দেশের সাহিত্য ও সংস্কৃতি অঙ্গনে গভীর শোকের ছায়া নেমে আসে। বিভিন্ন পর্যায়ের লেখক-সংস্কৃতিকর্মী হাসপাতালে ছুটে আসেন। হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, শুক্রবার সকালে সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। পরে বিকেল ৫টার দিকে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

৩ অক্টোবর ধানমন্ডিতে ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশে যাওয়ার পথে গাড়িতে অসুস্থ হয়ে পড়েন সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। পরে গাড়িচালক একজনের সহায়তায় তাঁকে পাশের একটি হাসপাতালে নেন। সেখান থেকে তাঁকে ল্যাবএইড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা জানান, তাঁর ‘ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাক’ হয়। পরে শনিবার অস্ত্রোপচার করে দুটি রিং পরানো হয়। পরদিন অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাঁকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়েছিল। শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হওয়ায় প্রায় ৪৮ ঘণ্টা পর তাঁকে লাইফ সাপোর্ট থেকে বের করে আনা হয়। শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় আবারও তাঁকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়।

১৯৫১ সালের ১৮ জানুয়ারি সিলেটে জন্মগ্রহণ করেন সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। পরে কানাডার কুইন্স বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘ইয়েটসের কবিতায় ইমানুয়েল সুইডেনবার্গের দর্শনের প্রভাব’ বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন তিনি। পেশাগত জীবনে সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি সর্বশেষ বিভাগটিতে ইমেরিটাস অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন।

সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম একাধারে দেশের অগ্রগণ্য সাহিত্যিক, অনুবাদক ও প্রাবন্ধিক। ছোটগল্প ও উপন্যাসে তাঁর অতুল দক্ষতা তাঁকে বাংলা ভাষার অন্যতম সাহিত্যিক হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত করে। ছোটগল্পকার হিসেবে সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের আত্মপ্রকাশ ১৯৭৪ সালে বিচিত্রায় প্রকাশিত ‘বিশাল মৃত্যু’ গল্পের মধ্য দিয়ে। ঢাকা ও কলকাতা থেকে তাঁর গল্পের বই বেরিয়েছে। ‘অন্ধকার ও আলো দেখার গল্প’, ‘প্রেম ও প্রার্থনার গল্প’, ‘সুখ ও দুঃখের গল্প’ তাঁর গল্পগ্রন্থ। ‘আজগুবি রাত’, ‘তিন পর্বেও জীবন’ তাঁর আলোচিত উপন্যাস।

চিত্রকলা ও নন্দনতত্ত্ব নিয়ে সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের উল্লেখযোগ্য রচনা রয়েছে। সাহিত্যে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ১৯৯৬ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার এবং ২০১৮ সালে একুশে পদক অর্জন করেন।

  • মরদেহ
  • শহীদ মিনার
  • শ্রদ্ধা
  • সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম
  • #