আফগানিস্তানের কাছে ৮১ রানের বিশাল ব্যবধানে হেরেছে বাংলাদেশ। এই পরাজয়ে এক ম্যাচ হাতে রেখেই তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ খোয়াল টাইগাররা। বোলারদের সম্মিলিত দাপটে আফগানদের মাত্র ১৯০ রানে গুটিয়ে দেওয়ার পরও বাংলাদেশের ইনিংস থেমেছে মাত্র ১০৯ রানে। এই নিয়ে টানা চতুর্থ ওয়ানডে সিরিজ হারল বাংলাদেশ। শুধু তাই নয়, শনিবারের ম্যাচ হেরে সর্বশেষ ১১ ওয়ানডের ১০টিতেই হারলো টাইগাররা।
আবুধাবির জায়েদ স্টেডিয়ামে ১৯১ রানের সহজ লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরু থেকেই পথ হারায় বাংলাদেশ। প্রথম ওভারেই তানজিদ হাসান তামিম (০) আউট হওয়ার পর টপ অর্ডারে নামে আসা-যাওয়ার মিছিল। আজমতউল্লাহ ওমরজাইয়ের গতি আর সুইংয়ে একে একে ফিরে যান নাজমুল হোসেন শান্ত (৭), সাইফ হাসান (২২) ও অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ (৪)। মাত্র ৫০ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে শুরুতেই ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়ে বাংলাদেশ।
এরপর তাওহিদ হৃদয় (২৪) ও জাকের আলী (১৮) মিলে কিছুটা প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করে। তবে সেই প্রতিরোধ গুড়িয়ে দেন আফগান লেগ স্পিনার রশিদ খান। তার ঘূর্ণিজাদুতে তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপ। নিজের টানা দুই ওভারে নুরুল হাসান সোহান (১৫), তানজিম সাকিব (০), তানভীর ইসলাম (০) এবং শেষদিকে রিশাদ হোসেনকে (৫) ফিরিয়ে দিয়ে বাংলাদেশের বড় পরাজয় নিশ্চিত করেন তিনি। মাত্র ১৭ রান খরচায় ৫ উইকেট শিকার করে রশিদ একাই গুঁড়িয়ে দেন বাংলাদেশের সব প্রতিরোধ। ৯৯ রানে ৭ উইকেট থেকে ১০৯ রানে অলআউট হতে বেশি সময় লাগেনি টাইগারদের।
অথচ বোলাররা এর চেয়ে ভালো মঞ্চ আর তৈরি করতে পারতেন না। টস জিতে ব্যাটিং করতে নামা আফগানিস্তানের ইনিংসে শুরু থেকেই লাগাম টেনে ধরেছিলেন বাংলাদেশি বোলাররা। ইব্রাহিম জাদরান ছাড়া দ্বিতীয় ওয়ানডেতে আফগানদের পুরো ব্যাটিংই চলেছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। অধিনায়ক মিরাজের নেতৃত্বে বাংলাদেশি স্পিন আক্রমণের সামনে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি তারা। মাত্র ১৯০ রানেই গুটিয়ে যায় তারা। আবুধাবির জায়েদ স্টেডিয়ামে এটাই আফগানদের সর্বনিম্ন স্কোর। আগের সর্বনিম্ন ছিল ভারতের বিপক্ষে ১৯৭ রান।
আফগানিস্তানের ব্যাটিং ছিল পুরোই ইব্রাহিম জাদরাননির্ভর। তবে পুরো ইনিংস একা টানলেও দুর্ভাগা বলতে হবে তাকে। দায়িত্বশীল ব্যাটিং করেও মাত্র ৫ রানের জন্য সেঞ্চুরি বঞ্চিত হন তিনি। ১৪০ বলে ৯৫ রান করা এ ব্যাটার হয়তো মিরাজ আক্রমণে আসার পরই দ্রুত সেঞ্চুরিটা স্পর্শ করতে চেয়েছিলেন। সে লক্ষ্যে ডাউন দ্য উইকেটে মিরাজকে ছয় মারতে চেয়েছিলেন। কিন্তু লং অন সীমানার ওপর রিশাদ হোসেন চমৎকার এক ক্যাচ লুফে নিলে সপ্তম ওয়ানডে সেঞ্চুরিটা হাতছাড়া হয়ে যায় আফগান ওপেনারের। তার সঙ্গে জুটি বেঁধে দুইশর সম্ভাবনা জাগানো গজনফরও রিশাদের বলে সীমানায় ক্যাচ দেন। ১৮ বলে দলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২২ রান করে গজনফর বিদায় নেওয়ার পরই রহমত শাহ নেমেছিলেন। যিনি ১৫তম ওভারে রান নেওয়ার সময় চোটে পড়েছিলেন। নবম উইকেট পতনের পর ব্যাটিংয়ে নামলেও এক বলের বেশি খেলতে পারেননি। ৯ রানেই সাজঘরে ফিরতে হয় তাকে। মোহাম্মদ নবি ২২ রান করেন।
আফগানদের প্রথম ইনিংসে কম রানে আটকানোর মূল কৃতিত্ব ছিল বাংলাদেশের স্পিনারদের। যেখানে নেতৃত্বে ছিলেন অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ। ১০ ওভারে এক মেডেনসহ ৪২ রানে ৩ উইকেট নিয়েছেন তিনি। স্পিনার তানভীর ইসলাম, রিশাদ হোসেনও চমৎকার বোলিং করেছেন। কিন্তু ব্যাটারদের এমন অসহায় আত্মসমর্পণে বোলারদের সেই পারফরম্যান্স শেষ পর্যন্ত বৃথাই গেল।