চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর বিদেশিদের ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্ত বাতিল করা না হলে অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলার হুঁশিয়ারি দিয়েছে বাম দলগুলো। সরকার চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল এবং মোংলা বন্দর কনটেইনার টার্মিনাল বিদেশি কোম্পানির কাছে ইজারা দেওয়ার পাঁয়তারা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করে বাম দলগুলো জানান, ডিসেম্বরের মধ্যেই ‘ডিপি ওয়ার্ল্ড’ নামের প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করতে চায় সরকার। সরকার এ চুক্তির সিদ্ধান্ত থেকে সরে না এলে বাম দলগুলো যমুনা ঘেরাও, হরতাল ও অবরোধসহ কঠোর কর্মসূচি দেবে। প্রয়োজনে অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে আরেকটি গণঅভ্যুত্থান হবে।
গতকাল সোমবার রাজধানীর গুলিস্তানের জিপিও মোড়ে বাম গণতান্ত্রিক জোট ও ফ্যাসিবাদবিরোধী বাম মোর্চা আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিল-পরবর্তী সমাবেশে নেতারা এ হুঁশিয়ারি দেন। জনমত উপেক্ষা করে লাভজনক চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশি কোম্পানিকে ইজারা দেওয়ার জাতীয় স্বার্থবিরোধী সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ ও সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন লুণ্ঠন রুখে দাঁড়ানোর দাবিতে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় অভিমুখে এ বিক্ষোভ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। একই দাবিতে জেলায় জেলায় বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিলও অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশ থেকে আগামী ৮ নভেম্বর চট্টগ্রামে সাম্রাজ্যবাদবিরোধী সর্বস্তরের দেশপ্রেমিক জনতার সমাবেশ এবং গণর্যালির কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
এদিন বেলা সাড়ে ১১টা থেকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ করে বাম গণতান্ত্রিক জোট ও ফ্যাসিবাদবিরোধী বাম মোর্চা। এরপর বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে সচিবালয়ের নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় অভিমুখে রওনা দেন নেতাকর্মীরা। মিছিলে ‘আমার মাটি আমার মা, বিদেশিদের দেব না’, ‘পুঁজিবাদের আস্তানা, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’, ‘আমার দেশের সম্পদ, আমার দেশেই রাখব’ ইত্যাদি স্লোগান দেওয়া হয়। মিছিলটি জিপিও মোড়ে পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে বাধা দেয়। সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন নেতাকর্মীরা।
সমাবেশে বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক ও বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ বন্দর ইজারার প্রতিবাদে সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, শেখ হাসিনার সরকার ভারতের স্বার্থ রক্ষা করত। সে কারণেই তাঁকে উচ্ছেদের জন্য গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত হয়। এখন অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশকে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের কাছে ইজারা দেওয়ার পাঁয়তারা করছে। এখনও সময় আছে, দেশবিরোধী চুক্তি থেকে ফিরে আসুন। না হয় প্রয়োজনে অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে আরেকটি গণঅভ্যুত্থান হবে।
সিপিবি সভাপতি কাজী সাজ্জাদ জহির চন্দন বলেন, বাম গণতান্ত্রিক দলগুলোর একজন নেতাকর্মী জীবিত থাকতে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে কোনোভাবেই বিকিয়ে যেতে দেওয়া হবে না। এ জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই করতে হবে।
এর আগে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশে ফ্যাসিবাদবিরোধী বাম মোর্চার সমন্বয়ক ও সাম্যবাদী আন্দোলনের আহ্বায়ক শুভ্রাংশু চক্রবর্তী বলেন, বঙ্গোপসাগর মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের যুদ্ধক্ষেত্রের মহড়া দেওয়ার জায়গা হিসেবে তৈরি হচ্ছে। বাংলাদেশকে সেই যুদ্ধক্ষেত্রের একটা পটভূমি তৈরি করার কাজ করছে বর্তমান ইউনূস সরকার।
বাসদের (মার্কসবাদী) সমন্বয়ক মাসুদ রানা বলেন, সরকার চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশিদের দেওয়ার মধ্য দিয়ে দেশকে বেকারত্ব মুক্ত করার ও উন্নয়নের গল্প শোনাচ্ছে, যার কোনো বাস্তব ভিত্তি নেই। চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশিদের দেওয়ার মধ্য দিয়ে দেশের নিরাপত্তা এবং সার্বভৌমত্ব নানা প্রশ্নের মুখে পড়বে। এ সরকারের সেই এখতিয়ারও নেই।
সমাবেশে বামপন্থি দুই জোটের নেতাদের মধ্যে আরও বক্তব্য দেন মোশরেফা মিশু, নাসিরউদ্দিন আহমেদ নাসু, আবদুল আলী, হারুনার রশিদ ভূঁইয়া, ইকবাল কবির জাহিদ, শহীদুল ইসলাম প্রমুখ। উপস্থিত ছিলেন আব্দুল্লাহ ক্বাফী রতন, রুহিন হোসেন প্রিন্স প্রমুখ।