রাজধানীর পল্লবীতে যুবদল নেতা গোলাম কিবরিয়া হত্যার ঘটনায় আটক মোক্তার হোসেন (৪০) ডিবি হেফাজতে মারা গেছেন। এই ঘটনায় তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠনের কথা জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।
ডিএমপির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে খাবার খাওয়ার জন্য মোক্তারকে ডাকাডাকি করা হয়। কোনো সাড়াশব্দ না পাওয়ায় পুলিশ সদস্যরা দ্রুত তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। চিকিৎসকেরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
তবে নিহতের পরিবারের অভিযোগ, পুলিশের নির্যাতনে মোক্তার মারা গেছেন। তার স্ত্রী মোছা. মুক্তা সমকালকে বলেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মিরপুরের কালশীর বাসার নিচ থেকে মোক্তারকে ধরে নিয়ে যায় ঢাকা ডিবি পুলিশ। শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে থানা পুলিশে এসে আমাকে ডিবি অফিসে যাওয়ার কথা বলে তাদের গাড়িতে তুলে নেয়। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গের সামনে নিয়ে যায়। সেখানে গিয়ে দেখি আমার স্বামীর মৃতদেহ পড়ে আছে।
মুক্তা বলেন, একজন সুস্থ মানুষকে ধরে নিয়ে গেল। পরে আমাকে তারা লাশ ফেরত দিল। আমার স্বামীর কোনো বড় ধরনের শারীরিক সমস্যাও ছিল না। পুলিশের নির্যাতনে সে মারা গেছে। মর্গে পুলিশ আমার বড় ছেলে মৃদুলকে একটি কাগজে স্বাক্ষর করতে বলে। সেখানে লেখা ছিল– আটকের সময় জনতার মারধরে আমার স্বামী আহত হয়েছিলেন। সেই কারণে মারা যায়। এমন লেখা দেখে আমার ছেলে স্বাক্ষর করেনি।
নিহতের ছেলে মৃদুল বলেন, সন্ধ্যায় বাবাকে আটকের সময় পুলিশের গাড়ির পাশে গিয়ে দাঁড়াই। তখন পরিচয় পেয়ে আমাকেও তুলে নেয় পুলিশ। পল্লবী থানায় আমাদের নিয়ে যায়। কিবরিয়া হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্র কোথায়– পুলিশ জানতে চায়। তখন বাবাকে মারধর করা হয়েছে। এরপর থানা থেকে পুলিশের গাড়িতে তোলা হয়।
ডিবি হেফাজতে মোক্তারের মৃত্যুর ঘটনায় শুক্রবার ১টার পর ডিএমপির মিডিয়া শাখা থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়। এতে বলা হয়, মুখোশধারী দুর্বৃত্তরা এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়ে যুবদল নেতা কিবরিয়াকে হত্যা করে। ওই ঘটনায় তার স্ত্রী সাবিহা আক্তার বাদী হয়ে পাঁচজনের নাম উল্লেখ করে পল্লবী থানায় হত্যা মামলা করেন। অজ্ঞাত আসামি ৭-৮ জন। সুষ্ঠু তদন্তসহ জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারে মামলাটি ডিবিতে হস্তান্তর করা হয়। এরপর ডিবি বৃহস্পতিবার শরীয়তপুরের বিভিন্ন স্থান ঘটনার সঙ্গে জড়িত নজরুল, মাসুম ও জামানকে গ্রেপ্তার করে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেন। কিবরিয়া হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্র-গুলি মোক্তারের হেফাজতে আছে বলে জানায় তারা। তাদের তথ্যের ভিত্তিতে ডিবির একটি দল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পল্লবীর একটি গ্যারেজে অভিযান চালায়। ডিবির উপস্থিতি বুঝতে পেরে মোক্তার দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করেন। পরে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় তাকে আটক করা হয়। এ সময় উত্তেজিত জনতা মোক্তারকে মারধর করে।
মোক্তারের তথ্যের ভিত্তিতে পল্লবীর একটি রিকশা গ্যারেজ থেকে পিস্তলের আটটি গুলি উদ্ধার করে ডিবি। পরে মোক্তারকে মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে মোক্তার অসুস্থবোধ করলে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়। চিকিৎসক প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে কিছু ওষুধ দিয়ে তাকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেন। তাকে আবার ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়। শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে খাবার খাওয়ার জন্য মোক্তারকে ডাকাডাকি করা হয়। কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে পুলিশ সদস্যরা দ্রুত ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
ময়নাতদন্তের জন্য মোক্তারের মরদেহ ঢামেক হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে বলে জানায় ডিএমপি। এ ঘটনায় ডিএমপির পক্ষ তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে ডিএমপির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এতে বলা হয়, এই তদন্ত কমিটির প্রধান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (প্রশাসন) মো. সরওয়ার।