প্রায় ৬ কোটি ২০ লাখ মানুষ যা বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ, অসুস্থতা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা অন্য যেকোনো অপ্রত্যাশিত বিপর্যয়ের মুখে পড়ে আবারও দারিদ্র্যসীমার নীচে নেমে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) রাজধানীর হোটেল আমারিতে প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১০ থেকে ২০২২ এই সময়ে বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে দারিদ্র্য হ্রাস করেছে। তখন ২ কোটি ২০ লাখ মানুষ দারিদ্র্য থেকে এবং আরো ৯০ লাখ মানুষ অতিদারিদ্র্য থেকে বেরিয়ে এসেছিল।
‘বাংলাদেশের দারিদ্র্য ও বৈষম্য মূল্যায়ন ২০২৫’ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১০ থেকে ২০২২ সময়ে চরম দারিদ্র্য ১২ দশমিক ২ শতাংশ থেকে কমে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ এবং মাঝারি দারিদ্র্য ৩৭ দশমিক ১ শতাংশ থেকে কমে ১৮ দশমিক ৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। তবে প্রায় ৬ কোটি ২০ লাখ মানুষ অসুস্থতা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা অন্য যেকোনো অপ্রত্যাশিত বিপর্যয়ের মুখে পড়ে আবারও দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়ে গেছে।
বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ ও ভুটানের বিভাগীয় পরিচালক জ্যঁ পেম বলেন, বহু বছর ধরে বাংলাদেশ দারিদ্র্য হ্রাসে সাফল্যের জন্য পরিচিত। কিন্তু পরিবর্তিত বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট, জলবায়ু ঝুঁকি এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির গতি কমে যাওয়ায় শ্রম আয়ও কমেছে।
তিনি আরও বলেন প্রথাগতভাবে দারিদ্র্য হ্রাসের গতি বাড়ানো যাবে না। দারিদ্র্য কমানো এবং মানুষের মর্যাদা নিশ্চিত করার সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো কর্মসংস্থান সৃষ্টি। বিশেষ করে যুবক, নারী এবং ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর জন্য কাজের ব্যবস্থা করা। অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং টেকসই প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে চাইলে সবচেয়ে জরুরি হবে দারিদ্র্যবান্ধব, জলবায়ুসহিষ্ণু এবং কর্মসংস্থানকেন্দ্রিক কৌশল নেওয়া।’
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, উৎপাদনশীল খাতে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে স্থবিরতা দেখা দিচ্ছে। অন্যদিকে, তুলনামূলক কম উৎপাদনশীল খাতে কর্মসংস্থান হচ্ছে। এতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন নারী ও তরুণেরা। প্রতি ৫ জন নারীর মধ্যে একজন বেকার, আর প্রতি ৪ জন শিক্ষিত নারীর মধ্যে একজনের কর্মসংস্থান নেই।
বিশ্বব্যাংক বলছে, ২০২২ সালে সামাজিক সুরক্ষার সুবিধা পাওয়াদের মধ্যে ৩৫ শতাংশই ধনী পরিবার, যেখানে অতি দরিদ্র পরিবারের অর্ধেকও এ সুবিধা পায়নি। এ ছাড়া ভর্তুকি বাবদ বরাদ্দ বেশির ভাগ সময়েই লক্ষ্যভিত্তিক হয় না, এমনকি বিদ্যুৎ, জ্বালানি এবং সারে সরকার যে ভর্তুকি দেয় তার সিংহভাগ অপেক্ষাকৃত ধনী পরিবারগুলো পায়।